পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভোজন রসিকদের কাছে রাজশাহীর আমের যেমন তুলনা হয়না। তেমনি আরেকটি খাবার দারুন প্রিয়। সেটি হলো মাসকালাইয়ের রুটি। রাজশাহী আসবেন আর মাষ কালাইয়ের রুটি খাবেন না সেকি হয়। এখানকার রসালো শাঁসালো আম মুখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃপ্তি এনে দেয়। একইভাবে পেঁয়াজ-মরিচ খাঁটি সরিষা তেলের ঝাঁজ মেশানো চাটনি কিংবা বেগুনের ভর্তা দিয়ে কালাইয়ের রুটি। আর কিছুই বলার দরকার নেই। এমনিতেই জিভে পানি এসে গেল।
অসাধারণ স্বাদের কালাইয়ের রুটি একবার খেলে বার বার মুখে দিতে মন চাইবে। সাধারণ খাবার হলেও এর স্বাদ আর সুঘ্রানের তুলনা হয় না। হলফ করে বলা যায় যারা এখনো এর স্বাদ নেননি, তারা একবার নিলে মনের অজান্তেই বলে উঠবেন ‘আবার খাবো’। রাজশাহী এলেই তুখোড় রাজনৈতিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছুটে যান পদ্মা বাঁধের উপর কালাইয়ের রুটির দোকানে। সার্কিট হাউজ থেকে ভোরে বের হয়ে পাশ্ববর্তী পদ্মা বাঁধের উপর। এরপর পেঁয়াজ মরিচ আর খাঁটি সরিষা তেলের ঝাঁজ মেশানো চাটনি আর বেগুন ভর্তা দিয়ে গরম গরম কালাইয়ের রুটির স্বাদ নেন।
পদ্মার বাঁধে পূর্বাকাশে সূর্যোদয়ের পর বায়ু সেবনকারী পথচারীরা অবাক বিস্ময়ে দেখেন খেজুরের পাটি কিংবা কাঠের মাচায় বসে এমন খাবার দৃশ্য। এনিয়ে সাধারণ সম্পাদকের অসাধারণ জবাব, রাজশাহী এলাম কালাই রুটি খেলাম না তাকি হয়। কালাইয়ের রুটি এখন সবার প্রিয় খাবারের স্থান নিয়েছে। শুরুতে ফুটপাতে থাকলেও এই রুটি হোটেল রেস্তোঁরায় ঠাঁই নিয়েছে।
এক সময়কার ফুটপাতে কালাই রুটির কারবার থাকলেও এখন আলাদাভাবে গড়ে উঠেছে এর রেস্তোঁরা। শুধু কলাইয়ের রুটি আর ঝাল ভর্তার পাশে হাঁসের মাংস মেলে। পরিবেশনাতেও এসেছে ভিন্নতা। ঝাল চাটনি ও বেগুন ভর্তার পাশপাশি আচারসহ বিভিন্ন জিনিস থাকছে। তবে কলাই রুটির সাথে পেঁয়াজ মরিচের চাটনি আর বেগুন ভর্তাই মানানসই। আর ভোক্তাদের নজর ওইদিকেই।
কলাই রুটি বিক্রি করে অসংখ্য অসহায় নারী তাদের কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছে। যে কলাইয়ের রুটি নিয়ে এতো কথা, সেটি বানানো সবার সহজ নয়। আটার রুটি ময়দা দিয়ে পরোটা তন্দুরি কিংবা নানরুটি খুব সহজেই কাঠের পিড়িতে বেলে তাওয়া আর তন্দুরে সেঁকে নেয়া যায়। কিন্তু কলাইয়ের রুটি কাঠের বেলুন পিড়ি কিংবা রুটি মেকারে বানানো সম্ভব নয়।
অন্যান্য রুটির ন্যায় কলাইয়ের আটার গোল গোল বল দুই হাতের তালুর চাপে চাপে বনে যায় রুটি। এই রুটি বানাতে হলে প্রয়োজন কালাইয়ের মিহি আটা। যদি যাঁতায় পেষানো যায় তবে খুবই ভাল। এই আটার সাথে আতপ চালের কিছুটা মিশ্রন দেয়া হয় মচমচে করার জন্য। মাটির তাওয়ায় এপিট ওপিঠ সেঁকতে হয়। চুলার ধারে বসে গরম গরম রুটির স্বাদই আলাদা।
এখানেও ঘটেছে ভেজালের মিশ্রন। তাই সেই আগের মত এর স্বাদ পাওয়া যায় না। প্রকৃত স্বাদ নিতে হলে আগে বলে বানিয়ে নেয়াই ভাল। বাড়িতে নিজেরাও চেস্টা করে দেখতে পারেন। খাঁটি মানের কালাইয়ের রুটি বা ডাল তৈরির সময় এর মনকাড়া সুগন্ধ অনেক দূর থেকে ভেসে আসে।
কালাই রুটির আদি উৎসভূমি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল। যাকে বলে দিয়াড়। এটি ছিল নি¤œবিত্ত মানুষের খাবার। সকালে এটি দিয়ে লাহারী খাওয়া (নাস্তা) হয়। কৃষকরা ভোর বেলায় মাঠে গেলে কৃষাণ বধূ লাহারী বানিয়ে কাপড়ে মুড়িয়ে পরম যতেœ নিয়ে যায় মাঠে কৃষকের কাছে। এটি খেলে পেটে অনেকক্ষণ থাকে বলে ক্ষিধে কম লাগে। আবার পুষ্টিমানের দিক দিয়েও অনন্য।
জাতীয় অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় কর্মীরা খাবার হিসেবে গামছা কিংবা কাপড়ে বেঁধে কালাই রুটি অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। এই রুটির কারনে এক সময় রসিকতা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষকে ‘কালাই’ বলে সম্বোধন করা হতো। আর সেই কালাইয়ের রুটির জনপ্রিয়তা এখন দেশ-বিদেশে। কালাই বলে সম্বোধন করলে আগে বিব্রত হলেও এখন গর্ব অনুভব করে।
কালাইয়ের ডাল কি রসনা মেটায় না? পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে এর গুণও অনন্য। এতে রয়েছে শতকরা কুড়ি থেকে পঁচিশ ভাগ আমিষ। প্রোটিন ও ভিটামিন বি এর অন্যতম উৎস্য। রুচিকর ও বল বর্ধক। পুরুষের শুক্রানু বাড়ায়। রয়েছে প্রচুর আয়রণ। প্রচুর ফাইবার আছে বলে হজম ভালো হয়। কোষ্ঠ্য কাঠিন্য দূর করতে বেশ উপকারি। হার্ট ভাল রাখে। কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাকৃতিক উদ্দীপক হিসাবে এ ডাল ভাল কাজ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এবং ব্যাথানাশক। সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের যতেœ দারুণ কাজ করে।
রোদে পোড়া ত্বক, মুখের দাগ, ব্রনসহ নানা রোগের উপশম করে। এ ডাল মুখে মাখলে চুলের খুশকি দূর হয় আর চুলও নরম হয়। কালাইয়ের ডাল স্বাদ ও গন্ধে অনন্য। তৃপ্তিসহ ভাত খেতে চাইলে এ ডাল খেয়ে দেখতে পারেন। দিন দিন বাড়ছে কালাইয়ের ডালের চাহিদা ও দাম। আগে সবচেয়ে কমদামি ডাল ছিল এটি। আর এখন হয়েছে উল্টো। সবচেয়ে বেশি দামি ডাল এটি।
চাহিদা আর দামের কারনে এরমধ্যে আবার ভেজাল অনুপ্রবেশ করেছে। মেশানো হচ্ছে কালিকালাই আর মুগডাল। ডাল কিংবা কালাইয়ের রুটির আসল স্বাদ নিতে হলে বাজার থেকে কালাই কিনে ভেঙে ডাল কিংবা আটা করাই উত্তম। আগে কালাইয়ের রুটি শীতকালে বেশি খাওয়া হলেও এখন বছরজুড়েই চলছে। শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদেরও প্রিয় খাবার। আর হাত বাড়ালেই সহজেই মেলে এমন মুখরোচক ও পুষ্টিকর খাবার। যারা এখনো এর স্বাদ নিতে পারেননি তারাও চলে আসতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।