Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে আ.লীগ সংসদে বসে মন্ত্রিত্ব দেয়

টকশোতে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ সংসদে বসছে এবং তাদেরকে মন্ত্রীও বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, এখন সংসদে ও মন্ত্রীত্বে আছেন হাসানুল হক ইনু ও মতিয়া চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা কি বলেছিলেন? তারা কি মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে? যাকে নিয়ে, যাকে ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি তার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যাকারীদের নিয়ে এখন আওয়ামী লীগ সংসদে বসে। আবার তাদেরকে মন্ত্রীত্ব দেয়। তারা যখন এটি করে তখন আর কারো দিকে আঙুল তোলার কোন জায়গা তাদের থাকে না। গত রোববার দিবাগত রাতে চ্যানেল আই-এ জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় “তৃতীয় মাত্রা” নামক একটি টকশোতে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। অনুষ্ঠানে তারা দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরেকটি নির্বাচনের বাইরে থাকা এফোর্ট করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আওয়ামী লীগের কাছেও আমার প্রশ্ন একতরফা আরেকটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ এফোর্ট করতে পারবে কিনা?
প্রখ্যাত রাজনীতিক মরহুম অলি আহমদের কন্যা রুমিন ফারহানা বলেন, বলা হয় বিএনপি একটি গণবিচ্ছিন্ন ও দুর্বল দল। খুব বেশি দুরে যেতে হবে না। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে যে জনসভা হয়েছে সেখানে মানুষ উপস্থিত হয়ে জনসমুদ্রে পরিণত করেছে। এ থেকে বোঝা যায় কেন আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে নিয়ে এতো ভীত। সমাবেশে না আসার জন্য পথে বাধা দেয়া হয়েছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হয়েছে, একরকম জান হাতে নিয়ে সেখানে মানুষ উপস্থিত হয়েছে। এর সাথে মামলা, হামলা, তুলে নিয়ে যাওয়ার ভয় তো আছেই। পুলিশ বাহিনীর মার, ভয় উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষের স্রোত ছিল সেদিন। এথেকেই বোঝা যায় বিএনপি গণমানুষের দল কিনা। বিএনপির এই নেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একধরণের ফোবিয়াতে ভোগে। তাদের মধ্যে বিএনপি, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ভীতি কাজ করে। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের ৯০ ভাগ জুড়েই থাকে বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তারা বলে যদি কোন কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে আমরা রোহিঙ্গা হয়ে যাব। যা কিছু কামিয়েছি তা নিয়ে চলে যেতে হবে, প্রাণ দিতে হবে। কারণ তারা জানে গত ১০ বছর তারা যে দুঃশাসন চালিয়েছে, জনগণের ওপর স্ট্রিম রুলার চালিয়েছে, নেতাকর্মীদের ওপর মামলা, হামলা, বিচারবর্হিভূত হত্যা করে, গুম করেছে, অত্যাচার করেছে তা থেকেই ক্ষমতা হারানোর ভয়।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি হচ্ছে জনগণের দল, জনসমর্থনের দল এবং বিএনপি মানেই হচ্ছে দেশের মানুষ। তবে, বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সরকার বনাম জনগণ। সরকার পুলিশ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে যদি মনে করে এই জনসমর্থনহীন ক্ষমতা প্রলম্বিত করবে, তাহলে তারা (আ.লীগ) বোকার স্বর্গে বাস করছে। জনগণই তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দেবে এবং বাধ্য করবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের ব্রেইন চাইল্ড মন্তব্য করে রুমিন ফারহানা বলেন,  তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির ধারণাটি কিন্তু বিএনপির না, এটি আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের ব্রেইন চাইল্ড। তারা ১৭৩ দিন হরতাল করে সরকারকে বাধ্য করেছিল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংযোজন করতে। এখন তারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে বলে সংবিধানের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। তারা সবসময় অজুহাত হিসেবে নেয় আদালত ও সংবিধানকে। যে কোন কিছু হলেই বলে আদালতের বিষয়, বলে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়। কারণ তারা জানে নূন্যতম সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি এক-চতুর্থাংশ আসন পাবে।
তিনি বলেন, সংবিধান তো কোন কোরআন শরীফ না। সংবিধান ১৬বার পরিবর্তিত হয়েছে প্রয়োজনে আরও হবে। দেশ ও জাতির স্বার্থে অতীতে সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে, সামনেও হওয়া উচিত। মানুষের জন্য সংবিধান না সংবিধানের জন্য মানুষ?
ইভিএম নিয়ে লুটপাট হচ্ছে অভিযোগ করে তরুন এই আইনজীবী বলেন, সেনা মোতায়েনের দাবি তো শুধু বিএনপির দাবি না ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে ২৫টি রাজনৈতিক দল সেনা মোতায়েনের কথা বলেছে। মাত্র ৭টি দল বলেছিল ইভিএমের ব্যবস্থা করতে। নির্বাচন কমিশন সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা না শুনে ওই ৭টি দলের কথা শুনলেন। ৭টি দলের কথা শুনে ইভিএমের পথে হাটছে। কিন্তু সেনা মোতায়েনের কথা বললেন না। এই নির্বাচন কমিশন একটি দলীয়, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের শক্তি নাই।
রুমিন ফারহানা বলেন, কিছু দিন আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশন তার বক্তব্যে বলেছেন, এতো বড় নির্বাচন গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়, যেখানে কোনো কারচুপি হবে না। এই বক্তব্যটি দিয়ে তিনি বিতর্কিত হয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবার মতো শক্তি তাদের নেই। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগকে যারা ভোট কারচুপি করার ক্ষমতা রাখে তাদেরকে একধরনের উসকানি দিচ্ছে।
বিএনপি নেত্রী বলেন, ইভিএমে সরকার আসতে চায় কারণ জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে তারা ফেরাতে চায়। নির্বাচন কমিশন বলেছিল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে ইভিএম ব্যবহার হবে না। কিন্তু বিনা দরপত্রে ইভিএম কেনা হয়েছে। ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা ইভিএম কেনাতে ব্যয় হয়েছে। সেখানে কোন টেন্ডার করা হয়নি? বিনা টেন্ডারে ইভিএম দেয়া হয়েছে। এসব ইভিএমের কারিগরি সক্ষমতা কতটুকু সেটাও পরীক্ষা করা হয়নি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এখনো সংসদে ইভিএম নিয়ে আইনই পাশ হয়নি। তার আগেই যন্ত্র কেনা হয়েছে। কিভাবে হরিলুট চলছে তা এ থেকেই বোঝা যায়?
নজরুল ইসলাম বাবু হাওয়া ভবনের লুটপাটের কথা বললে রুমিন ফারহানা বলেন, হাই ইশ্বর! হাওয়া ভবনের লুটপাট সে তো নস্যি। এখন সোনা হয়ে যায় তামা। পাথর নাই হয়ে যায়, কয়লা বাতাসে মিলিয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লোপাট হয়ে যায়। নজিরবিহীন কান্ডকারখানা ঘটে। ১০ বছরে পাঁচার হয়ে যায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংগুলো মূলধন ঘাটতিতে ভূগতে থাকে। একেকটা ব্যাংক একেকটি পরিবারের হাতে তুলে দেয়ার জন্য আইন করা হয়। জনগণের করের টাকা দিয়ে এখন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করা হয়। ব্যাংকে মন্দ ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে। বাচ্চুর কি হয়েছে তা আমরা জানি না? ফারমার্স ব্যাংকে যারা টাকা রেখেছিল তারা হাহাকার করে। কিন্তু মহিউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আমরা জানি না।
আওয়ামী লীগ এক অদ্ভুত মেশিন মন্তব্য করে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ করলেই আপনি মুক্তিযোদ্ধা। আর আওয়ামী লীগ না করা মানেই রাজাকার। যে কারণে একদিন সংসদে কথা ওঠেছিল যে, আওয়ামী লীগ এমন একটা অদ্ভুত মেশিন যার একদিক দিয়ে রাজাকার ঢুকালে তার আরেকদিক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বের হয়। আওয়ামী লীগ করলে যে কোন গুম, খুন, লুটপাট সব জায়েজ। সব জায়েজের রাজনীতি বাংলাদেশকে আজকে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। বিএনপিকে ছাড়া আজকে নির্বাচনের যে ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ করছে, তার মূল্য একদিন  আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। #



 

Show all comments
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৮ এএম says : 2
    সাবাস ভাগের বাচ্চা|||
    Total Reply(1) Reply
    • Shahadat ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৯ পিএম says : 4
      ১০০% সঠিক
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৪০ এএম says : 1
    আমরা তত্বাবদায়ক সরকারের অধীনে নিবাচন চাই||
    Total Reply(0) Reply
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৪১ এএম says : 0
    .............................. এমন বেফাস মন্তব্য করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • joy ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:১৬ এএম says : 1
    Great Job. You are 100% right. Let's move on.............
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সালাউদ্দিন হাসান ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:৫৩ এএম says : 2
    আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই রাজাকার এখন। এই রাজাকাররা যখন মুক্তিযোদ্বা হবে তখন আওয়ামী লীগ কি হবে পাকবাহিনী না অন্যকিছু ?
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Rahman ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০১ এএম says : 1
    absolutely right comments i think peoples of Bangladesh knows about it.
    Total Reply(0) Reply
  • Amirul ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০২ এএম says : 2
    What she told absolutely right. Thanks a lot for boldness in describing the characteristics of ...............
    Total Reply(0) Reply
  • এম আর চৌধুরী ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:১১ এএম says : 6
    যারা খুনিদেরকে বিমানে করে বিদেশে পাঠিয়েছে তারাই আসল খুনি। এখানে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • shorif ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৮ এএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন: Great
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ.লীগ

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১৫ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ