Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্ষায় নয় শরতেও পদ্মায় নেই ইলিশ

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বর্ষা মওসুম শেষের দিকে। বাদলা বৃষ্টি তেমন ঝরেনি। ভরেনি মরা পদ্মা। বালিচর গুলো বুক চিতিয়ে জানান দিচ্ছে আমরা ডুবি নাই। যদিও অন্যবার বর্ষা মওসুমে চিত্র থাকে ভিন্ন। ভারতের অটো সাঁটো পানি শোষন নীতি আর ফারাক্কার কারণে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা তার যৌবন হারিয়েছে চারদশক আগেই।  পদ্মার বুকে জমেছে আঠারো মিটারের বালির স্তর। বছরের নয় মাস বালিচরের নীচে চাপা পড়ে থাকলেও বর্ষা মওসুমের তিনমাস পানিতে টুইটুম্বর হয়ে যায়। সারা বছর ফারাক্কা গেট দিয়ে পানি আটকে রাখলেও বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ কমাতে অকৃপন হাতে প্রায় সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়। বন্ধ গেট খুলে দেয়ায় একসাথে বিপুল পরিমান পানি ছুটে আসে। ক্ষণিকের জন্য যৌবনবতী হয়ে ওঠেপদ্মা।  যারা এখনো বাপ দাদার পেশা ছাড়তে পারেননি সেসব জেলেরা ডিঙ্গী নৌকা নিয়ে মাছের জন্য জাল ফেলে।
সত্তর দশকের স্মৃতি জাগানিয়া বড় বড় রুপালী ইলিশ এখন না পাওয়া গেলেও জাটকা আকারের কিছু ইলিশ ধরা পড়েছিল। এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছেনা। দিনরাত জাল সহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে মিলছে বেলে ঘেড়ে আর কুচো চিংড়ি। বছরজুড়ে খামারের মাছে বাজার ভরা থাকলেও। বর্ষার এ সময় নদীর মাছ রসনা মেটায় মৎস্য রসিকদের। মাছের বাজার দরের উত্তাপ কিছুটা কমে। এবার না আছে সাগরের ইলিশ। আর না আছে পদ্মার ইলিশ। গত দু’বছর পদ্মায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দর্শন মেলায়। এবারো ভাল মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছিল পদ্মা নদীর মাঝিরা। অনেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। কেউ কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা আর জাল কিনেছিল। অপেক্ষা ছিল নদী ভরার। ঘোলা পানির সাথে মাতামাতি করে মাছ ধরার। বর্ষা মওসুম প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। নদী ভরেনি কানায় কানায়। তীব্র  স্রোত না থাকায় উজান পানে ইলিশ আসেনি। সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কাঙ্খিত মাছ নেই। তবে রয়েছে জাল নৌকা কেনায় ঋনের বোঝা।
এক সময় পদ্মার তীরজুড়ে গোদাগাড়ী হতে বাঘা, চারঘাট পর্যন্ত বসবাস করত পাঁচ হাজার জেলে  পরিবার। তাদের জীবিকা নির্বাহ হত পদ্মার গর্ভ থেকে। পদ্মা মরে যাবার কারণে নদীর জীবন চক্র ধ্বংস হয়ে গেছে। জলজ প্রাণীকুল ধ্বংস হয়েছে। ঘড়িয়াল শুশুকের আর দেখা মেলেনা। ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র পদ্মায় আর ইলিশ আসেনা।
দু’শতাধিক প্রজাতির মিঠা পানির মাছ ও আঠারো প্রজাতির চিংড়ির অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে হাজার হাজার জেলে বাপ দাদার পেশা ছেড়ে যোগ দিয়েছে অন্য পেশায়। কেউ রিক্সা চালায়, রাজমিস্ত্রির কাজ করে। কেউ বা করে চোরাচালানি। অথচ এরাই এক সময় বাঁশের ঝাকিতে নদীর মাছ নিয়ে মহল্লায় মহল্লায় হাঁক ডাক দিত এইযে নদীর মাছ। যারা মাছের ব্যবসা করেন তাদের মহলদার নামে পরিচিতি ছিল। এখনতো পাড়ার নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। গতকাল পদ্মার তীরজুড়ে পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় বিভিন্ন বয়েসী হাজারো মানুষ ভীড় জমিয়েছেন দু’দন্ড বুক ভরে শ্বাস নেবার জন্য। নদীতে মাছ ধরতে ডিঙ্গী নিয়ে ভেসেছেন তজু, রফিক, বাবু নামের কজন। মাছের খবর কি জানতে চাইলে বলেন, এবারের মত মন্দা কখনো হয়নি। বেলে, চিংড়ি, ঘেড়ে যা মিলছে তা দিয়ে নিজের পেট চালানো দায়। তাদের কাছ থেকে জানা গেল দৃশ্যত পদ্মায় অনেক পানি মনে হলেও বাস্তবে সামান্য নীচে রয়েছে বালিচর। অনেকস্থানে নৌকা তলায় ঠেকছে। পঞ্চবটি আই বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে দেখা যায় নদী মাঝ বরাবর জুড়ে বিশাল চর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, চর জমতে জমতে নদীর তলদেশ আঠারো মিটারের বেশী ভরাট হয়ে গেছে। নদীর ধারন ক্ষমতাও কমেছে। এখনো নদীর পানি বিপদ সীমার আড়াই মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওপারের গেটগুলো না খোলা হলে এপারে নদী ভরার সম্ভাবনা আর নেই। এরপর নেই তেমন বর্ষণ। এবার আগেভাগেই নদী শুকিয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইলিশ

২০ নভেম্বর, ২০২২
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ