Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজস্ব আহরণে বাংলাদেশ ২৫তম

এডিবির প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:১০ এএম

রাজস্ব আদায়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫তম। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ের এই হার মাত্র নয় শতাংশ। বাংলাদেশের নিচে আর মাত্র তিনটি দেশ রয়েছে-ব্রুনেই দারুসসালাম, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিচে থাকা ব্রুনেই দারুসসালামে জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ের হার মাত্র ২ শতাংশ। এ ছাড়া মিয়ানমারে ৭.৫ ও আফগানিস্তানে ৮ শতাংশ। অন্যদিকে জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ের হার সবচেয়ে বেশি নিউজিল্যান্ডে, ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কর আদায়ের হার জাপানে ৩০ ও অস্ট্রেলিয়ায় ২৮ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বরাবরই বলে আসছেন, তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণের হার অনেক নিচে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চেয়েও তা বেশ কম। এর আগে জাতিসংঘের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএন-এসসিএপি) এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে কর আদায়ের স্থবিরতার বিষয়টি উঠে এসেছিল। এবার এডিবির প্রতিবেদনেও তা জোরালোভাবে উঠে এলো। ‘এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে কর প্রশাসন নিয়ে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি এডিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশকে মধ্য আয় কিংবা উন্নত দেশের অবস্থানে উন্নীত করতে চাইলে দেশে সড়ক, সেতু, বন্দরসহ বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। সেসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য রাজস্ব আদায়ের হার বাড়ানো জরুরি। কারণ সামনের দিনগুলোতে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা থেকে ঋণ সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৫ বছর মেয়াদি চলমান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন করতে হলেও কর আদায় বাড়াতে হবে।
এডিবির মতে, বাংলাদেশে এখন কর আদায় ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। ভ্যাট আইন কার্যকর করতে গিয়েও ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে তা সম্ভব হয়নি। ১৫ শতাংশ হারে একীভ‚ত ভ্যাট হার বাস্তবায়ন বেশ কঠিনই মনে করছে এডিবি। কর আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করা বিশেষ করে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর তাগিদ দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থাটি।
এডিবির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতে কর আদায়ে বড় হাতিয়ার হলো ব্যক্তি-শ্রেণির আয়কর। অর্থাৎ আয়কর থেকেই বড় অঙ্কের রাজস্ব আসে। নিউজিল্যান্ডে আয়কর থেকে আসে জিডিপির ১৮, অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ ও মালয়েশিয়ায় ৯ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে আয়কর থেকে আসে জিডিপির অনুপাতে মাত্র ২.৭ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভ্যাট বা পরোক্ষ কর থেকে আসে জিডিপির অনুপাতে ৫.৪ শতাংশ।
সংস্থাটির প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই বাংলাদেশের তুলনায় রাজস্ব আহরণের হার প্রায় দ্বিগুণ। নেপালে কর আদায়ের হার সে দেশের জিডিপির ১৭, ভুটানে ১৫, ভারতে ১৭ ও মালদ্বীপে ২০ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, দেশে এক বছরে ১০০ টাকা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হলে ১৬ টাকা আসা উচিত রাজস্ব থেকে। কিন্তু আমাদের এখানে ১০০ টাকায় রাজস্ব থেকে আসে ৯ টাকা। বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের হার সর্বনিম্নে। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আয়করদাতার সংখ্যা অত্যন্ত কম। এক কোটি মানুষ কর দিতে সক্ষম হলেও দেয় মাত্র ২০ থেকে ৩০ লাখ (৩২ লাখ নিবন্ধিত)। বাংলাদেশে কর আদায় না বাড়ার পেছনে এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। এ ছাড়া দেশে অনেক খাত আছে, যেগুলোতে কর ছাড় দেওয়া হয়। অন্য কোনো দেশে এমনটা নেই। তৃতীয়ত, সরকারি অনেক সংস্থা কর দেয় না। এই তিনটি কারণে দেশে কর আদায়ের হার কম।
এনবিআরের কর্মকর্তারাও বলছেন, আয়কর দেওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। সে জন্য আয়কর আদায়ের হার কম। অন্যদিকে ভ্যাট আদায়ের হার বেশি। তবে ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ