বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের হিন্দু যুবক স্বপন চন্দ্র পালকে চোর সন্দেহে ধরে এনে বওলা বাজারে ঘরে আটকে ব্যাপক নির্যাতন করে ইউপি সদস্য রাশিদ খান ও তার ছেলেরা। এই ঘটনার পর থেকে হাতীবান্ধা হিন্দু পল্লীর বাসিন্দারা হুমকির মুখে গত দুইদিন ধরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ ও হাট বাজার করতে স্থানীয় বওলা বাজারে যেতে পারছে না তারা । চুরির অপবাদে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার স্বপন চন্দ্র পাল শরীরের অসহনীয় ব্যথা নিয়ে নিজ বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছেন। আবারও আক্রমণের ভয়ে তাকে নিয়ে পরিবার বা এলাকার কেউ ফুলপুর হাসপাতালে যেতে পারছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সমস্ত গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বওলা বাজারে যারা ক্ষুদ্র ব্যবসা করত, দোকানপাটে দর্জি বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করত তারাও ভয়ে কেউ কর্মস্থলে যেতে পারছে না। স্বপন চন্দ্র পালের বাড়ি গিয়ে চোখে পড়ে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। শরীরের নানা স্থানে ফোলা জখম নিয়ে বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে স্বপন চন্দ্র পাল।
সাংবাদিকদের দেখে পরিবারের লোকজনের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। ভাঙা কণ্ঠে স্বপন চন্দ্র পাল তার উপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, মঙ্গলবার চৌকিদারের কাছ থেকে আনা বেতের লাঠি দিয়ে তাকে উপর্যুপরি পিটিয়ে সারাদিন দোকানে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। নখের নিচ দিয়ে সূচ ঢোকানোরও চেষ্টা করা হয়। সারাদিন আটক রাখার পর রাতে তাকে চৌকিদারকে দিয়ে ফুলপুর থানায় নিয়ে গেলে এলাকার শ’ শ’ হিন্দু মুসলিম জনতা বিক্ষোভ করে গিয়ে থানা থেকে তাকে ছাড়িয়ে আনে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা আশরাফুল আলম জানান, এলাকাবাসীর সঙ্গে নির্দোষ স্বপনকে ছাড়ানোর জন্য থানায় আসায় বুধবার তাকে আটকিয়ে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। নির্যাতিত স্বপন চন্দ্র পালের মা সোয়া রানী তার ছেলের উপর নির্যাতনের বিচার চেয়ে বলেন, তার ছেলে সৎভাবে দর্জির কাজ করে ৫ জনের সংসার চালাতো। ঘটনার পর থেকে তারা খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বপন এলাকায় একজন ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত। তার দ্বারা কোন সময় অসামাজিক কাজ সম্ভব নয়। স্বপনের মুক্তির জন্য আমরা থানায় গিয়েছিলাম বলে হাতীবান্ধা গ্রামের হিন্দু মুসলিম কেউই বাজারে যেতে পারছে না। আমরা স্বপনের উপর নির্যাতনের বিচার চাই।
বওলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নাসিম বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। বাজারে না আসতে পারার বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
ফুলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মাহবুব আলম জানান, আমি হাতিবান্ধা গিয়েছিলাম। এখন কোন সমস্যা নেই। স্বপন চন্দ্র পাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বওলা আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি সদস্য রাশেদ মেম্বারের বওলা বাজারস্থ কাপড়ের দোকানে চুরি হলে গত মঙ্গলবার মেম্বারের লোকজন দোকানের দর্জি স্বপন চন্দ্র পালকে বাড়ি থেকে ধরে এনে চুরির অপবাদ দিয়ে বেদম প্রহার করে দিনভর তালাবদ্ধ রেখে রাতে ফুলপুর থানায় সোপর্দ করে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকা থেকে শ’ শ’ হিন্দু মুসলিম জনতা স্বপনের মুক্তির দাবিতে ফুলপুর থানায় আসলে পুলিশ স্বপনকে ছেড়ে দেয়।
অবশেষে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংবাদিকগণ হাতিবান্ধা গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে আসার পর সন্ধ্যায় নির্যাতিত স্বপন চন্দ্র পালকে ফুলপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।