বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মুহাম্মদ রেজাউর রহমান
মোসাক ফনসেকা নামক পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে ক্ষমতায় আসীন রাষ্ট্রীয় নেতা, ধনী ও ব্যবসায়ীদের নিজ দেশ থেকে বাইরে অন্য কোনো দেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার সংক্রান্ত কাজে সহায়তা প্রদান সম্পর্কে ১ কোটি ১০ লাখ নথি ফাঁস হওয়ার চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন গত ৫ এপ্রিল সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের প্রায় সব দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। নথির সংখ্যাধিক্য আমাদের হতবাক করে দেয়। যেসব দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অন্য দেশে পাচার করা হয়েছে, তার মধ্যে যেমন রয়েছে ধনী দেশ যুক্তরাজ্য, তেমনি দরিদ্রতম দেশও রয়েছে যেমন সেন্ট্রাল অফ্রিকান রিপাবলিক।
অর্থ পাচারকারীদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত ফুটবলার, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ীরা। রয়েছেন তেলসমৃদ্ধ বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ সউদি আরবের বাদশাহ সালমান, চীনের প্রেসিডেন্ট শিজিনপিং, রাশিয়ার ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের তিন সন্তান হাসান, হোসেন ও মরিয়ম, মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ছেলে আলা মোবারক, বিশ্বনন্দিত ফুটবলার লিওনেল মেসি, গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ, ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, তার পুত্রবধূ সাবেক বিশ্ব সুন্দরী ঐশ্বরিয়া, ভারতের ব্যবসায়ী আদানিসহ আরো পাঁচশ নাম। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রভাবশালী অনেক ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামও প্রকাশ হয়েছে। ধারণা করা যায়, এদের পেছনেও রাজনীতিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রভাবশালীদেরও নাম জড়িয়ে গেলে অবাক করার কিছু থাকবে না। কারণ এর আগে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজে ২০১৩ সালে একই ধরনের বড় অঙ্কের অর্থ পাচারের একই ধরনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। তাতে বাংলাদেশেরও ৩৪ জন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীর নাম ছিল।
বর্তমান ঘটনার সূত্রপাত জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতংয়ের কাছে একটি অজানা সূত্র থেকে মোসাক ফনসেকার প্রায় সোয়া কোটি নথি আসার পরে দৈনিকটি সেসব নথি আইসিআইজে-র নিকট পাঠায়।
১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ের এসব নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৪৮ বছরের অর্থ পাচার সংক্রান্ত নথিসমূহের ওপর আইসিআইজে একটি অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতেই উঠে এসেছে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান, অভিনেতা থেকে ফুটবলার প্রমুখের নিজ দেশ থেকে অর্থ পাচারের এসব তথ্য। আগামী মাসে আইসিআইজে আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বাংলাদেশের রুই-কাতলাদের অর্থপাচার সংক্রান্ত কীর্তি আরও বিস্তৃত আকারে প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। জড়িতদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কী ব্যবস্থা নেবে বা আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা, তা জানা যাবে বাংলাদেশি অর্থ পাচারকারীদের নাম প্রকাশের পর। তবে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, তার পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া, ব্যবসায়ী আদানি প্রমুখের নাম প্রকাশ করার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে এ সম্বন্ধে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতের অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, আইসিআইজে কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রায় পাঁচশত অর্থ পাচারকারীর অপরাধ তদন্ত করে দেখার জন্য একটি আলাদা কমিশন গঠনের কথা।
আইসিআইজে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের ২০০ দেশের দুই লাখ ১৪ হাজার ব্যক্তির অর্থ পাচারের নথি মোসাক ফনসেকার নথিসমূহে পাওয়া যায়। আইসিআইজে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই তাদের বর্তমান প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ তারা বলেছে, সউদি আরবের বাদশাহ সালমান কর্তৃক পাচারকৃত অর্থের ব্যাপারে তারা ওই দেশে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মাধ্যমে বাদশাহর বক্তব্য জানতে চেয়েছিল কিন্তু বাদশাহ কোনো জবাব দেননি। অর্থ পাচারকারীদের তালিকায় রয়েছেন ১৪০টি দেশের প্রেসিডেন্ট ও সরকারপ্রধান এবং রাজনীতিকদের নাম। ব্যাংকে গচ্ছিত যে কোনো অঙ্কের অর্থের জন্য কর দিতে হয় না। এমন ২১টি দেশ বা অঞ্চলে তারা এসব অর্থ পাঠিয়ে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের অমিতাভ বচ্চন অন্য দেশের চারটি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে রয়েছেন। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনবহুল দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট শিজিনপিং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তার ভগ্নিপতি আবাসন ব্যবসায়ী দেং জিয়াওয়ে ও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা। এর আগে ২০১২ সালে ব্লুমবার্গনিউজেও এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট পুতিনের দুই বাল্যবন্ধু আরকানি ও বরিস রোতেনবুর্গের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তালিকায়। এই দুই ভাই রাষ্ট্রায়ত্ত নানা খাতে ঠিকাদারি করে উপার্জন করেছেন কোটি কোটি ডলার। ২০১৪ সালে রাশিয়ার সোচি অলিম্পিকে ৭০০ কোটি ডলারের দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের আরেক বন্ধু সের্গেই রোলদুগিনের নামও রয়েছে তালিকায়। পাচারের বিষয়ে আইসিআইজে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জবাব দেয়ার জন্য সময় চেয়েছেন।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই ছেলে হাসান ও হোসেন এবং মেয়ে মরিয়ম সফদারের নাম রয়েছে তালিকায়। অবশ্য নওয়াজ শরিফের পরিবার বংশানুক্রমে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। তবে তার ছেলে ও মেয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ অর্জন, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
মিসরের পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের দুই ছেলে আলী ও গামালের বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য তারা গ্রেফতারও হয়েছিলেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পরলোকগত বাবা ইয়ান ক্যামেরনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ব্যবসা ছিল তার। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার ভ্রাতুষ্পুত্র ক্লিভ জুমার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। খনি-মালিক এই কোটিপতির ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে উনিশটি মোটরগাড়ি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদের মামাতো দুই ভাই রামি ও হাফেজ মাখলুকের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মোসাক ফনসেকার নথিতে।
সিরিয়ার তেল ও টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রামি আর হাফেজের রয়েছে গোয়েন্দা ও টেলিযোগাযোগের ব্যবসা। নন্দিত ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি ও তার বাবার নামও রয়েছে অর্থ পাচারকারীদের তালিকায়। দুজন মিলে মেগাস্টার এন্টারপ্রাইজের নামে অর্থ পাচার করেছেন। স্পেনে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলাও রয়েছে মেসির বিরুদ্ধে। অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ছাড়া ভারতের আবাসন ব্যবসায়ী কেপি সিং, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী গৌতম আদানির বড় ভাই বিশোদ আদানি, পশ্চিমবাংলার রাজনীতিক শিশির বাজোরিয়ার নামও রয়েছে অর্থ পাচারকারীদের তালিকায়।
অনুমান করা হয়, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও সরকার-প্রধান এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সরকারি খাতের কাজের জন্য ঠিকাদার ও লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি বরাদ্দের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন তার সিংগভাগই কর প্রদান করতে হবে নাÑএমন দেশে পাচার করেছেন। সরাসরি নিজেরা নিজেদের অর্থ পাচার করে রেকর্ডভুক্ত হওয়া থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা ভাই, সন্তান ও বন্ধুদের ব্যবহার করেছেন। বিদেশি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে অর্থ জমা রাখলে গচ্ছিত অর্থের জন্য তাদেরকে কোনো কর দিতে হয় না। কালো টাকা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে জমা রাখলে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। অর্থাৎ তার অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত অর্থ কার নামে রাখা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের আইন অনুযায়ী ব্যাংক তা জানাতে বাধ্য নয়Ñএই সুযোগ গ্রহণ করেন অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী, ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিকরা। চীনের মুক্ত অর্থনীতির অঞ্চল হংকংয়েও রয়েছে অর্থ গচ্ছিত রাখার নিরাপত্তা। সিঙ্গাপুরের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদেশি নাগরিকরা যে কোনো পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখতে পারেন এবং তা উত্তোলন করে যে কোনো দেশে পাঠাতে পারেন। ইউরোপের ছোট্ট দেশ লুক্সেমবুর্গেও রয়েছে এ রকম সুযোগ। তবে বাংলাদেশের তথাকথিত দেশপ্রেমিক রাজনীতিকরা সিঙ্গাপুরকেই অধিকতর পছন্দ করেন।
মোসাক ফনসেকার প্রধান কার্যালয় পানামায় অবস্থিত হওয়ার কারণে তাদের সোয়া কোটি নথি ফাঁস হয়ে পড়ায় এ বিষয়টিকে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে এই কেলেঙ্কারির প্রথম বলি হচ্ছেন রাজনীতিকদের মধ্যে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমন্ডুর ডেভিড গুনলাগসন। গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা আসে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী দেশের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করার জন্য প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান। তবে আইসল্যান্ডের অত্যন্ত সাদাসিধা জীবনযাপনকারী সৎ হিসেবে সুনাম অর্জনকারী প্রেসিডেন্ট ওলাফুর ব্যাগনার গ্রিমসন তাতে সাড়া না দিয়ে তাকে পদত্যাগের জন্য পরামর্শ দেন। সরকারি দল প্রগ্রেসিভ পার্টির উপনেতা ও কৃষিমন্ত্রী সিল্ডইডর ইঙ্গি জোনাসন জানান, পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ফলে পার্টির উপনেতা হিসেবে তিনিই এখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। ফাঁস হয়ে যাওয়া নথিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী সিগমন্ডুর গুনলাগসন ও তার স্ত্রী ২০০৭ সালে উইনস্ট্রিস নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেনেন। ২০০৯ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার সময় গুনলাগসন প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাওয়া লভ্যাংশের কথা গোপন রেখেছিলেন। ফাঁস হওয়া নথিতে এ খবর প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় আইসল্যান্ডে শান্ত নিরিবিলি রাজধানী শহর বিকজাভিকের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। গণস্বাক্ষরে সই করে ২৪ হাজার মানুষ।
আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী পর্যায়ে সম্প্রতি পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পদত্যাগ করেছেন স্পেনের পরিবহন মন্ত্রী। বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চিলি শাখার সভাপতি নিজেই বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। অভিসংশনের মুখে রয়েছেন ব্রাজিলের সরকার প্রধান দিলমা রোসেফও।
ধনী দেশগুলোর সংগঠন ‘গ্রুপ-২০’ মুদ্রা পাচার সম্পর্কে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করে এর ওপরে কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন।
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির জের আরো চলবে বহুদিন ধরে। যেহেতু নথির সংখ্যা অত্যধিক, তাই এসবের যাচাই-বাছাই চলবে অনেক দিন। ব্যবসায়ীদের চেয়েও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ২০০টি দেশের রাজনীতিবিদরা। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নিয়ে তারা আর জনগণের মুখোমুখি হতে পারবেন না।
মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে যেসব অর্থ পাচারকারী যেসব অঞ্চলে কর দিতে হয় না, সেসব অঞ্চলে তথাকথিত অফশোর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে অর্থ গচ্ছিত রেখেছিল। এসব অঞ্চলের প্রায় সবকটিই যুক্তরাজ্যের রানী কর্তৃক শাসিত ব্রিটিশ টেরিটরিজ নামে পরিচিত অঞ্চল। কর প্রদান করতে হয় না বলে এসব অঞ্চলকে ট্যাক্স হেভেন বা কর প্রদান না করার স্বর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি প্রকাশ হয়ে পড়ায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও বিতর্ক জমে ওঠে। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবেন বলেন, এসব অঞ্চল যদি যুক্তরাজ্য সরকারের করনীতি না মেনে চলে তবে এসব অঞ্চলকে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনের অধীনে আনা হোক।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির প্রতিক্রিয়ায় শোরগোল শুরু হয়েছে। যে ৫০০ জন ভারতীয়ের নাম তালিকায় উঠে এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার দুই দিন পর অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, চারটি জাহাজ কোম্পানির পরিচালক হিসেবে তার নাম প্রচারিত হলেও তাদের কোনো কোম্পানিই তার পরিচিত নয়। তার পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাইয়ের পক্ষে তার গণমাধ্যম উপদেষ্টা বলেছেন, কেলেঙ্কারির সাথে ঐশ্বরিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
অস্ট্রেলিয়ার কর কর্তৃপক্ষ গত ৫ এপ্রিল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ৮০০ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা দেয়। পানামা পেপারসে ইসরায়েলের দুটি ব্যাংকসহ ৬০০ প্রতিষ্ঠানের নাম থাকায় সরকার এসব প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে। ফ্রান্সও বলেছে যে, তারা এ কেলেঙ্কারির যথাযথ তদন্ত করবে। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, কর ফাঁকি দেয়া সারা বিশ্বের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
য় লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।