Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোট জালিয়াতি ও চুরি করতেই সরকার ইভিএম ব্যবহারে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:১২ পিএম

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির অফুরন্ত সুযোগ থাকবে বলেই বাংলাদেশের অবৈধ সরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ইভিএম ব্যবহারে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণার ও অনুসন্ধানের রিপোর্ট থেকে এটি সুস্পস্ট যে ইভিএম সহজে হ্যাক করা যায়, চাইলে একমূহুর্তের মধ্যে ইভিএম এর সবগুলো ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো-কমানো থেকে শুরু করে যে কোন প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকেও পাল্টে দেয়া যায়। ইভিএম-এ দূর থেকেও ম্যানিপুলেট করা যায়। ইভিএম দিয়ে ভোটারের নাম, বয়স, ঠিকানা, মোবাইল, পরিবার ইত্যাদিসহ যাবতীয় তথ্য একেবারেই পাওয়া যায়। এর অপব্যবহারের মাধ্যমে হুমকি-ভীতি প্রদান থেকে শুরু করে ভোটারের অনুপস্থিতিতে তার নামেও জালভোট দেয়া সম্ভব। ভোটারবিহীন সরকারের দিক থেকে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেই এখন ডিজিটাল মেশিন কারচুপির উপর নির্ভর করছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। আজ বুধবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারের চাহিদামত ইভিএম এর তথ্য বা ফল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এমনকি দলীয় লোকদের হাতেও এই ক্ষমতা চলে যেতে পারে। ইভিএম এর সফটওয়ার পরিবর্তন বা বন্ধ করে নির্বাচনে অস্থিতিশীলতা ও শূণ্যতা সৃষ্টি করা সম্ভব। অনেক স্বৈরতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে প্রহসন ও নির্লজ্জ কারচুপির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভোটারদের ইভিএম স্ক্রিনে দেখানো হয় তাদের ভোট সঠিক প্রার্থীর নামে যাচ্ছে। কিন্তু ইভিএম এর ভেতর তথ্য হিসেবে ভোট চলে যায় অন্য প্রার্থীর নামে।
তিনি বলেন, একমাত্র সরকারীদল ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিকদল, সুধীজন, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অধিকাংশই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য মতামত পেশ করেছিল। ইসিও দীর্ঘদিন ধরে বলে এসেছে সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও শ্রেনী পেশার মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে তড়িগড়ি করে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ ও নানা ষড়যন্ত্রের কথা শুনা যাচ্ছে। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় দূরভিসন্ধিমূলক ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০ টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নামে এক বিতর্কিত মাধ্যম ব্যবহারের চিন্তা করছে যা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। ভারতেও দু’দিন আগে বিরোধী দলগুলো ইভিএম ব্যবহার না করতে সে দেশের নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের দূরভিস্বন্ধিমূলক পরিকল্পনা মূলত ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং রচনার পটভূমি। ইভিএম নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন হতাশা ও সমালোচনার ঝড় বইছে তখন এই ধরনের উদ্যোগ কার ইশারায় এবং কিসের ইঙ্গিতবাহি তা জাতির কাছে সুস্পস্ট। জনগণের দল হিসেবে জনমতের প্রতি বিএনপি’র চিরন্তন দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই আমরা এমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করছি যেখানে জনগণের স্বপ্ন, আকাঙ্খা ও দাবির প্রতিফলন ঘটবে।
ইভিএম নিয়ে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ও আর্ন্তজাতিক গবেষণার ফলাফলের কিছু অংশ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ভারতের ইকোনোমিক টাইমস পত্রিকার অনুসন্ধানের রির্পোটে জানা যায় বিশ্বের ২০০ টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪টি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সেসব দেশেও ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো আজও পর্যন্ত ইভিএমের গ্রহণযোগ্য ব্যবহার ঘটেনি। যে সব অল্প সংখ্যক দেশে ইভিএম আংশিকভাবে ব্যবহার করা হয় সেখানেও ভোট প্রক্রিয়ায় ও ফল নির্ধারনে ভয়াবহ কারচুপির প্রমান মিলেছে। ভোট গ্রহণের এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সিকিউরিটি ও তথ্যের গোপনীয়তা নিয়েও গণতান্ত্রিক বিশ্বে সার্বজনিন ভীতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই প্রায় সব দেশেই নির্বাচনে ইভিএমকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ও জনবিরোধী মাধ্যম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
তিনি বলে, আয়ারল্যান্ডে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে গবেষনার পেছনে ৫১ মিলিয়ন ইউরো খরচ করবার পর এটিকে অবৈধ নির্বাচনী যন্ত্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়। জার্মানির সুপ্রিমকোর্ট ইভিএমকে অসাংবিধানিক ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষনার মাধ্যমে এর ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করে। হল্যান্ডে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও ফলাফলের স্বচ্ছতার অভাবে ডাচ কাউন্সিল আইন করে ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এছাড়াও ইটালি ও প্যারাগুয়েতে ইভিএম নিষিদ্ধ করা হয়।
যুক্তরাজ্যেও অনেক গবেষনা ও আলোচনা ভিত্তিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে, সুজারল্যান্ড-স্পেন-রোমানিয়া সহ বেশ কিছু দেশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আশাব্যঞ্জক ফল না ঘটায় এর আর প্রয়োগ ঘটেনি। নরওয়েতে কোন ভোটার কাকে ভোট দিচ্ছে, এই গোপনীয়তা ভঙ্গের ভয়ে পরিক্ষামূলক নির্বাচনে ভোটের পরিমান আসংখ্যাজণকভাবে কমে যায়। এটিকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি ও জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনা করে সেখানে ইভিএম প্রত্যাহার করা হয়। বিবিসির একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যুক্তরাস্ট্রের গবেষকরা মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ভারতের ইভিএম প্রক্রিয়া হ্যাক করে কয়েকটি কেন্দ্রের ফলাফল পরিবর্তন করা হয়। এবছরের মে মাসে ভারতের একটি স্থানীয় নির্বাচনে ১৫% এর বেশি ভোটিং মেশিন অকার্যকর হয়ে পড়ে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার ভোটারদের সাক্ষাতকার নিয়ে দেখে অধিকাংশ বুথেই ভোটের দিন ইভিএম নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিতর্কের মুখে ভারতের নির্বাচন কমিশন দাবি করে, গরমে উচ্চমাত্রার কারণে তাদের ইভিএমগুলো হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাখ্যা নিয়ে সর্বত্র হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। গত বছরেই ভারতের আরেকটি নির্বাচনে হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার অনুসন্ধানে নতুন বিতর্ক বেরিয়ে আসে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সবগুলো ভোট চলে যায় সরকার দলীয় প্রার্থীর নামে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।



 

Show all comments
  • তারেক ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:৩৩ এএম says : 0
    রিজভৗর কামটা কি নয়াপলটন অফিসে আরামে থাকা আর প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করা এটিই হলো রিজভৗর মুল কাজ.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ