পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার বিচার বিভাগকে দিয়ে এখন নিজেদের ইচ্ছাপূরণের অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনাকে বর্তমান সরকার তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এজন্যই দলীয় একজন নেতাকে (আবদুল কাহার আকন্দ) তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে মামলার অন্যতম আসামিকে (মুফতি হান্নান) দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে হান্নান সরকারের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন তারা (সরকার) বিচার বিভাগকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণের অপচেষ্টায় রত হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং জাতীয় রাজনীতিতে এর বিষময় পরিণতি সম্পর্কে পুনরায় ভাবার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যায়ভাবে মিথ্যা অভিযোগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদন্ড দিয়ে সরকার জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেশে জনগনের মধ্যে দারুন ক্ষোভের সৃষ্টি করবে যা কারো জন্যে প্রত্যাশিত নয়। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে দেশের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয়। নতুন সঙ্কট সৃষ্টির পরিবর্তে সরকারের উচিত বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা এবং তার ফলে আইভি রহমানসহ অনেক নারী পুরুষের জীবন নাশ ও আহত হওয়ার নৃশংস ঘটনার আমরা তখনও নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং এখনো জানাই। আমরা এই ঘটনার জন্য দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কারণ আমরাও চাই, এমন নির্মম অরাজনৈতিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।
তিনি বলেন, ওই ঘটনাকে পূঁজি করে সরকার ও সরকারি দল যেভাবে বিএনপি ও বিএনপির মূল নেতাদের অন্যায়ভাবে বিপদাপন্ন করার জন্য তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা ও তদন্ত কর্মকর্তা এমনকি বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নগ্ন প্রয়াস চালাচ্ছে তা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মির্জা ফখরুল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার পরপরই তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আইনগত পদক্ষেপসমূহ, সন্দেহভাজন আসামীদের গ্রেপ্তার এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলার গতি পরিবর্তনের বিষয়গুলো তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ মুক্তাঙ্গন থেকে পরিবর্তন করে পুলিশকে না জানিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে কেনো দলীয় কার্যালয়ে সামনে নেয়া হলো? বিএনপি সরকার সে সময়ে ইন্টারপোল, এফবিআই ও অন্যান্য তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনাকে বহনকারী গুলিবিদ্ধ গাড়িটি আলামত হিসেবে পরীক্ষা করতে চাইলে কেনো শেখ হাসিনা তাতে অসম্মতি জানান? সদ্য প্রয়াত ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিক কুলদীপ নায়েরকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জড়িত। এই খবর ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দ্য ডন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কিসের ভিত্তিতে এমন অভিযোগ করেছিলেন তা কখনো কোনো আদালত কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসা করেনি কেনো? শেখ হাসিনার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, তাকে বহনকারী গাড়িতে কয়েকটি বুলেটে ছোঁড়া হয়েছে এবং তা গাড়ির কাঁচ ও চাকায় আঘাত করেছে। অথচ কোনো তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে গ্রেনেড হামলা ছাড়া গুলি ছোঁড়ার কোনো কথারই উল্লেখ নেই কেনো? কে বা কারা গুলি ছুঁড়েছে তাও কি এই ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক নয়?
মির্জা ফখরুল বলেন, এই মামলায় শেখ হাসিনা ২ নম্বর উইটনেস সাক্ষী ছিলেন। সি ওয়াজ এ উইটনেস অব দি কেইস। বাট সি ডিডনট টার্ন আপ ইন দি কোর্ট। তিনি কোর্টে আসেননি। প্রথম সাক্ষী ছিলেন বাদী এসআই শরীফ আহমেদ। তারপর শেখ হাসিনা। কারণ মূল সাক্ষী তো তিনিই। সেই সাক্ষী কিন্তু আদালতে আসেননি। কেনো? ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা বন্দি থাকার সময়ে ওই মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবীর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেখানে কোথাও তারেক রহমান বা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। কিংবা তাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে বলে দাবি করেননি। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। মুফতি হান্নানের সাথে তারেক রহমানের যোগসাজস থাকলে বিএনপি সরকারের আমলে মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হবে কেনো?
তিনি বলেন, মুফতি হান্নানের প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয় ২০০৭ সালে। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় হয় ২০১১ সালে। অর্থাৎ প্রায় চার বছর পর। একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে কিনা এটা কারো মনে করার জন্যে চার বছর সময় লাগে? কবে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে এটা মুফতি হান্নান মনে করতে পারেননি। আসলে কোনো একটা তারিখ বললে তারেক রহমানের কর্মসূচি দিয়ে প্রমাণ করা যেতো সেদিন তিনি আদৌও ঢাকায় ছিলেন কিনা? এজন্য তারিখটা উল্লেখ নেই।
মুফতি হান্নান তার প্রথম স্বীকারোক্তিতে শেখ হাসিনাকে হত্যার কারণ হিসেবে আবদুল সালাম পিন্টুর (তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী) ক্ষোভ ও ইসলামিক স্কলারদের হত্যার জন্য তার নিজের ক্রোধকে কারণ হিসেবে বললেও দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিতে তা বদলে গেছে। বলা হয়েছে যে, তারেক রহমান শেখ হাসিনাকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন। জবানবন্দির এই পরিবর্তন যে তার ইচ্ছাকৃত ছিলো না সেটা তিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনে স্বীকার করেছেন। মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গেলে তার প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দির গুরুত্ব কী? দেশের প্রচলিত আইন ও হাইকোর্টের বিভিন্ন রায়ে এটা স্বীকৃত যে, কোনো আসামির দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিই আইনের চোখে গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমানকে জড়িত করার জন্য মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডের নিয়ে অত্যাচারের নজির কোনো সভ্য দেশে আছে কি? বিএনপি সরকারের আমলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তে ইন্টারপুল ও এফবিআইকে দেশে নিয়ে আসা। মুফতি হান্নানসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার। সিআইডি ও ডিবিসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা। হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এসব কিছু প্রমাণ করে যে, প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের সনাক্ত করার বিষয়ে তৎকালীন বিএনপির সরকারের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার অভাব ছিলো না। গ্রেনেড হামলা মামলার পঞ্চম তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সহকারি পুলিশ সুপার ফজলুল কবির চার্জশিট দেন ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট। ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও সেই তালিকায় তারেক রহমানের নাম ছিলো না। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর আদালতে অভিযোগ গঠন ও বিচার কাজ শুরু হয়। এতে ৬১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়।
তিনি বলেণ, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর গোটা ঘটনা এক অস্বাভাবিক মোড় নেয়। চার্জশিটে জিয়া পরিবারের কারো নাম না থাকায় সরকার চলমান সেই বিচার কাজ বন্ধ করে মামলা পরিচালনার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। ট্রাইব্যুনাল ২ মাসের মধ্যে চার্জশিট দাখিলে অনুমতি দিলেও ২ বছর তারেক রহমানসহ আরো ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এই অভিযোগের ভিত্তি ছিলো ৪০০ দিন রিমান্ডে নিয়ে আদায় করা মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মইনুল ইসলাম খান শান্ত, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন মেজবাহ প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।