Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে নৌযানে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই

মাওয়ায় ফেরি পারাপারে বিপর্যয়

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ঈদ পরবর্তী কমস্থলমুখী জন স্রোতে ঠাঁই নেই দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখী নৌযানে। সড়ক পথে মাওয়া ফেরি পারাপারে সংকট অব্যাহত থাকায় নৌপথে কর্মস্থলমুখী কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের স্রোত আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দর ও লঞ্চঘাটগুলোতে তিল ধরার ঠাঁই নেই। বরিশাল বন্দর থেকে গত ৩ দিন ১৮টি করে বিভিন্ন ধরনের নৌযান ঢাকায় যাচ্ছে। বেশীরভাগ নৌযান প্রতিদিন ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করলেও নৌযানগুলোর লোয়ার ডেক থেকে শুরু করে সবগুলো ডেক এবং ভিআইপি কেবিনগুলো ঠাসা। একটি কেবিন টিকেটের জন্য ঈদের আগে থেকেই বরিশালে সবগুলো বেসরকারি নৌযানের অফিসে মানুষের হাহাকার চলছে। সাধারন মানুষ এক অফিস থেকে অন্য অফিসে হন্যে হয়ে ঘুরছে। তবে এ অবস্থার মধ্যেও বিআইডব্লিউটিসি গত শনিবারই ঈদ পরবর্তী বিশেষ সার্ভিসসমুহ গুটিয়ে বেশীরভাগ নৌযান ঢাকা ঘাটে নোঙরে রেখেছে। রোববার রাত থেকে প্রায় ১২ ঘন্টা মাওয়া লৌহজং চ্যানেলে ফেরি সহ সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখে ড্রেজিং করার পরে গতকাল সকাল থেকে কে-টাইপ ও ডাম্ব ফেরি চালু করা হয়। কিন্তু দুপুর থেকে ড্রেজিংকৃত স্থানে পুনরায় কে-টাইপ ফেরিগুলো ডুবো চরায় আটকে যেতে থাকে। দুপুরের আগেই ‘ক্যামেলিয়া’ নামের একটি কে-টাইপ ফেরি ডুবো চরায় আটকা পড়ার পরে বিকেল নাগাদ সেটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
নৌপথের বিপর্যয়ের কারনে গতকাল সকাল ৬ টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় মাওয়ায় মাত্র ১ হাজার ৯৩৪ টি যানবাহন পারাপার সম্ভব হয়। ফলে এসময় আরো ৬ শতাধিক যানবাহন অপেক্ষমান ছিল। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ঐ মাত্র মাড়ে ৮শ’র মত যানবাহন পারাপার সম্ভব হলেও কাঁঠালবাড়ী ঘাটে আরো ৩ শতাধিক যানবাহন আটকে ছিল। বেশীরভাগ পরিবহন প্রতিষ্ঠানই গত দিন পনের যাবত ফেরি পারাপার পরিহার করে লঞ্চে যাত্রী পারাপার করছে।
গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিসি দেশের প্রধান ফেরিতে ১০ হাজারের কম যানবাহন পারপার করেছে। ফলে অপেক্ষমান ছিল প্রায় ১২শ’ যানবাহন। এর মধ্যে আরিচা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার রুটে প্রায় সাড়ে ৩শ’ এবং মাওয়ায় ৬ শতাধিক যানবাহন অপেক্ষমান ছিল। রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের পদ্মায় গভীরতা সংকটে ফেরি চলাচলে এ বিপর্যয়ে প্রতিনিয়ত শত শত যানবাহন দু পাড়ে আটকা পড়ছে। টানা ৫ দিন রো-রো ফেরিগুলো বন্ধ রাখার পরে গতকাল সকাল থেকে ১১ কিলোমিটারের স্থলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরাপথে খর স্রোতা একটি চ্যানেল দিয়ে রো-রো ফেরি পারপার করতে গিয়ে সময় লাগছে প্রায় ৪ ঘন্টা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কে-টাইপ ও মিডিয়াম ফেরিগুলো অনেকটা হাফ লোড নিয়ে মাওয়ায় পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ফলে যানবাহন পারাপার স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে। ফলে দুর্ভোগ এড়াতে এবার সড়ক পথের পরিবর্তে দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ যাত্রী নৌপথে কর্মস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করছে। এতে করে নৌযানসমুহে ভিড় অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশী। আগামী শনিবার পর্যন্তই দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা ছাড়াও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের ফিরতি স্রোত অব্যাহত থাকবে। এবারো ঈদের আগে পরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছে। এবার ঈদ উল আযহার দুদিন পরেও বিপুল সংখ্যক যাত্রী নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলে প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এসেছে।
বিআইডব্লিউটিএ ছাড়াও পুলিশ-প্রশাসন কঠোর নজরদারী অব্যাহত রাখলেও জন স্রোতের কাছে সবাই অসহায়। যাত্রী ভিড়ের কারনে গতকালও নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দুই ঘন্টা আগে অনেক বেসরকারি নৌযানকে বরিশাল বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে প্রশাসন। গতকালও দুপুরের পর থেকে বরিশাল নৌ টার্মিনালে তিল ধরার ঠাঁই মেলেনি।
এদিকে বিআইডব্লিউটিসি শনিবারের পরে তার বিশেষ সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ায় গতকাল থেকে নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিসের কোন নৌযান বরিশাল বন্দরে ভিড়তে পারছে না। এসব নৌযান বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, সন্যাসী এবং পিরোজপুর-ঝালকাঠী স্টেশন থেকেই ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দেয়ায় বরিশাল বন্দর থেকে কোন যাত্রী তোলার সুযোগ থাকছে না। ফলে বরিশাল থেকে ঢাকা ছাড়াও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলমুখী কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষকে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ