Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য বিভাগের টিম যাচ্ছে আজ

হাটহাজারীতে অজ্ঞাত রোগে ৪ শিশুর মৃত্যু

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

হাটহাজারীর দক্ষিণ উদালিয়া সোনাইরকুল দুর্গম ত্রিপুরা পল্লীতে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়া অজ্ঞাত রোগ শনাক্ত করতে আজ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরের কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম। এরমধ্যে অসুস্থ শিশুদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। এসব নমুনা পাঠানো হয়েছে ঢাকায় গবেষণাগারে। সেখান থেকে প্রতিবেদন আসলে চার শিশুর মৃত্যুর কারণ ও অজ্ঞাত রোগ চিহ্নিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি গতকাল রোববার রাতে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধিসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সার্বিক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। তবে এখনও রোগটা কী, সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
ঢাকায় পাঠানো রক্তের নমুনার রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঢাকা থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সীতাকুন্ডের ত্রিপুরা পল্লীতে গত বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সীতাকুন্ডের শিশুদের টিকা দেয়া হয়নি। কিন্তু উদালিয়ার ত্রিপুরা পল্লীর শিশুরা সরকারি সব টিকা গ্রহণ করেছে। সুতরাং প্রাথমিকভাবে সীতাকুন্ডের ঘটনার সাথে হাটহাজারীর ঘটনা মিলানো যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে অসুস্থদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ত্রিপুরা পল্লীতে একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
ত্রিপুরা পল্লীতে অজ্ঞাত ভাইরাসের সংক্রমণে গত ছয় দিনে এক পরিবারের তিন জনসহ চার শিশুর মৃত্যু হয়। সেখানে আরও কমপক্ষে ২২ শিশু অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণের শিকার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। গতকাল সকালে এক শিশু মারা যাওয়ার খবর পেলে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সৈয়দ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন ত্রিপুরা পল্লীতে যান। এরপর ২২ শিশুকে এনে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন। গত মঙ্গলবার এক শিশু মারা যায়। শুক্রবার মারা যায় আরও দু’জন। এদের মধ্যে তিন শিশু একই পরিবারের। হাসপাতালে যাদের ভর্তি করা হয়েছে তাদের কয়েকজনের শরীরে জ্বর অনেক বেশি। কারও কারও হালকা জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি, সর্দি, শ্বাসকষ্টও আছে।
চিকিৎসকদের স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রতিটি শিশুই প্রথমে মারাত্মক জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এক পর্যায়ে তারা প্রাণ হারাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারা কোনো ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এই ভাইরাস তাৎক্ষণিক শনাক্ত করা যায়নি। গুরুতর অসুস্থ তিন শিশুসহ পাঁচ শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় জনস্বাস্থ্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, উদালিয়া ত্রিপুরা পল্লীতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া নানা কুসংস্কারের কারণে ত্রিপুরা উপজাতিরাও রোগ-বালাইয়ের জন্য হাসপাতালে যেতে চায় না। চার শিশুর মৃত্যু এবং আরও অন্তত ২২ জন আক্রান্ত হওয়ার পরও কাউকে পরিবারের উদ্যোগে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। সমতল থেকে চার কিলোমিটারেরও বেশি হেঁটে ত্রিপুরা পল্লীতে যেতে হয়। সেখানে এখনো আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি।
গত বছরের জুলাই মাসে সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পল্লীতে নয় শিশুর মৃত্যু হয়। পরে আক্রান্ত শিশুদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে নিশ্চিত হওয়া যায় তারা অপুষ্টির শিকার। আর এ কারণে ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্য বিভাগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ