পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আজকে এলো খুশির দিন/ দেখনা চেয়ে খুশির চিন/ দেখ না চেয়ে আজ রঙিন/ খুশির ঝলক ঈদগাহে....’ (ফররুখ আহমেদ)। ‘ঈদ পবিত্র, ঈদ খুশির, ঈদ আনন্দের/ ঈদ ক্ষমার, ঈদ প্রার্থনার, ঈদ মিলনের/ জিলহজের দশ তারিখে এল ঈদুল আযহা/ ধনী-গরীব সবার মনে আনন্দ আর মজা’ (আবু জাফর)। কবি ফররুখ আহমেদ ও কবি আবু জাফর ঈদ নিয়ে যে উপমাগুলো কবিতার পংক্তিতে মালা গেঁথেছেন; সেগুলো বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল ঈদে বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে।
৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশে এবার মহা-আনন্দ, মহা-উৎসবের মধ্য দিয়েই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়ার মানুষ ঈদুল আজহা উৎযাপন করেছে। বৃত্তবানরা কোরবানী দিয়েছেন; গোশত খেয়েছেন; অন্যের মধ্যে বিলিয়েছেন। ধনী-গরীব সবার ঘরেই ছিল আনন্দ। কারো মধ্যেই ছিল না কয়েক বছরের চিরাচরিত ভীতি-আতঙ্ক-উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। নির্বাচনের বছরের এই ঈদে রাজনীতিকদের মধ্যে কেউ উৎসবের মধ্যদিয়ে আগামীর স্বপ্নের জাল বুনেছেন; কেউবা নতুন করে স্বপ্নে বিভোগ হন। ছোট-বড় ধনী-গরীব নিজেদের মতো করে ঈদের দিন উৎসবে মেতে উঠেন। শুধু উৎসব নয়; ঈদকে কেন্দ্র করে টাকার হাতবদল হয়েছে; আরো হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য। ষড়ঋতুর এই দেশে ঈদের দিন প্রকৃতি ছিল খেয়ালীপনায়। কোথাও রোদ কোথাও বৃষ্টি বেখেয়ালি আবহাওয়ার মধ্যেই যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যে সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে মুসলিম স¤প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়েই শুরু হয় ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা। ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান অল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি দেন। আনন্দ আর উৎসবমূখর পরিবেশ ছিল ঈদ ঘিরে। ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো পরিণত হয় লোকে লোকারণ্যে। রাজধানীর চিরিয়াখানা-পার্কগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভীড়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হয়ে পড়েছিল কোলাহলমূখর। সাগরের পানির সাদা ঢেউ যেন বীনার তারের মতো আছড়ে পড়েছে ভ্রমন পিপাসু দর্শণার্থীদের হৃদয়ে। শিশু-কিশোর ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে পিতা-মাতা-আত্মীয়-স্বজনরা বিকেলে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে হাজির হন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দেখা গেছে অভিন্ন চিত্র। কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনেকেই কারাগারে বন্দী থাকায় অনেকের মধ্যে শঙ্কা ছিল; ঈদের আগে সকলেই মুক্তি লাভ করায় স্বস্তি আসে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ফলে ঈদ উৎযাপিত হয় ভিন্ন আমেজে, অন্যরকম আনন্দ উৎসবে।
রাজধানী ঢাকায় ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহে। প্রধান এই জামাতে নামাজ আদায় করেন প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ। মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ ঈদের প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করেন। এর আগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টায় ঈদের প্রথম জামাত হয়। মহাখালিস্থ মসজিদে গাউসুল আজমসহ দেশের হাজার হাজার মসজিদ, খেলার মাঠ, ঈদগাঁহ ময়দানের ঈদের নামায় আদায় হয়। সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিহ হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোরা শাহ মাঠে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধনী-গরীব, আমীর-ফকির এক সারিতে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন।
ঈদ উপলক্ষে বঙ্গভবনে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রথমে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানান দলীয় নেতা-কর্মী নিজ অফিসের কর্মকর্তাদের। অতপর ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর পেশাজীবীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বন্দি থাকায় এবারও বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘নেত্রী’ ছাড়াই ঈদ উদযাপন করেন। ঈদের নামাজ শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত এবং বেগম জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে জেলগেটে ছুঁটে যান। বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পারলেও দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সিনিয়র জুনিয়র সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
উৎসবের আমেজেই সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। নির্বাচনী বছর হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতা ও মন্ত্রী এমপিদের বেশির ভাগই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। উদ্দেশ্যে ধর্মীয় উৎসবে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমানো, নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং নির্বাচনে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেয়া। একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের এই উপস্থিতি রাজনৈতিক দলের তৃর্ণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি আনন্দ ও উন্মাদনার সৃষ্টি করে। অনেকেই আল্লাহর নামে একাধিক কোরবানী দেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘মনের পশুরে কর জবাই/ পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই/ কশাই-এর আবার কোরবানী!/ আমাদের নয়, তাদের ঈদ/ বীর-সুত যারা হ’ল শহীদ/ অমর যাদের বীরবাণী/ পশু কোরবানী দিস্ তখন/ আজাদ-মুক্ত হবি যখন/ জুলম-মুক্ত হবে রে দীন---’।
ইনকিলাবের আঞ্চলিক, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষের মধ্যে দেখা গেছে সৌহাদ্য-সম্প্রীতির বন্ধন। কোরবানীর গরু, মহিষ, খাসী কেনাবেচা, পশু পরিবহন, পশু হাতবদলে ছিল হাজার হাজার কোটি টাকার প্রবাহ। এক হাত থেকে টাকা ঘুরে গেছে অন্য হাতে। কোরবানীর পশু জবেহের দা-বটি থেকে শুরু করে খড়-গুড়ো, হাটের ইজারা, আড়তদার-পাইকারদের দৌঁড়ঝাপ, পশুর চামড়া ক্রয় বিক্রয়, আড়তে বিক্রী, চামড়া ঠিক রাখতে লবন ক্রয়, শ্রমিকদের নিয়োগ, কোরবানী পর পশুর চামড়া ছড়ানো এবং গোশত বানানোতেও লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেছে। দেশের কামারদের তৈরি যে পণ্য সারাবছর বিক্রী হয়; সে পণ্য ঈদকে কেন্দ্র করে দু’দিন দিনে বিক্রী হয়েছে। বিনোদন স্পটগুলোতে যাতায়াতে পরিবহণ খরচ, দর্শনার্থীদের টিকেট ক্রয়-বিক্রয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকার হাতবাদল। ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষের গ্রামের বাড়িতে যাতায়াতে ট্রেন বাসের ভাড়া এবং অতিরিক্ত ভাড়ায় বিপুল পরিমান অর্থের হাতবদল হয়েছে। এতে বাস মালিক আর অসাধু ব্যবসায়ী, দালাল-ফরিয়ারাই শুধু নয়; রাষ্ট্রের কোষাগারেও জমা হয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ। এক কথায় ঈদ মানুষের মধ্যে মহা-আনন্দ মহা-উৎসবের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চাকাও চাঙ্গা করতে ভুমিকা রেখেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মহানগর ও জেলায় ঈদের জামাতে ছিল ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিড়। ধনী-গরিব, দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন ঈদ জামাতে। জামাত শেষে মহান আল্লাহর নামে পশু কোরবানির দেন চট্টগ্রামবাসী। সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ঈদের প্রধান জামাত হয় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে। সকাল পৌনে ৮টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মো. আলাউদ্দিন আল কাদেরী। সকাল পৌনে ৯টায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক। প্রথম ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিগণ। এবার সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের ১৬৫টি স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির উদ্যোগে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় ঈদের প্রধান জামাতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা শরিক হন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় হযরত শাহমখদুম (রূপ:) ঈদগাহ ময়দানে। এতে ইমামতি করেন, নগরীর জামিয়া ইসলামীয়া শাহমখদুম (রহ.) মাদরাাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী। তার সহকারী ইমাম ছিলেন নগরীর হেতমখাঁ বড় মসজিদের ইমাম মুফতি মালানা ইয়াকুব আলী। আর বয়ান করেন জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা নাজমুল হক। তাকে সহায়তা করেন মুফতি ক্বারী রেজাউল করিম।
এখানে প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
এছাড়া এখানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদেরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সাধারণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। রাজশাহীতে ঈদের দ্বিতীয় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় মহানগর ঈদগাহ (টিকাপাড়া) ময়দানে। এই জামাতও অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। একই সময় তৃতীয় প্রধান জামাতও অনুষ্ঠিত হয় নগরীর সাহেববাজার বড় রাস্তায়।
এছাড়া সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে নগরীর ১১৮টি ঈদগাহসহ আশপাশের শতাধিক ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রয়াত বাবা-মা ও স্বজনদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিভিন্ন গোরস্থানে যান এবং কবর জিয়ারত করেন।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের কয়েক হাজার মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদ-উল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল মহানগরীর সাড়ে ৪শ জামে মসজিদের মধ্যে তিনশতে এবার ঈদ উল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া পিরোজপুরের ছারছিনা, বরিশালের চরমোনাই দরবার শরীফ, ঝালকাঠির কায়েদ ছাহেব হুজুরের দরবার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফার (র.) দরবার, বরগুনার মোকামিয়ায় বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল মহানগরীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। পাশাপাশি নগরীর কেন্দ্রীয় জামে কসাই মসজিদ, জামে এবাদুল্লাহ মছজিদ, বায়তুল মোকাররম মসজিদে দুটি করে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর সর্ব প্রথম ঈদ জামাত সকাল সাড়ে সাতটায় নবগ্রাম রোড-চৌমুহনী মসজিদ-এ-নুর ও জেল গেট জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ জানান, দেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় শান্তিপ‚র্ণ পরিবেশে ১৯১তম পবিত্র ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম এই জামাতে ইমামতি করেন শহরের মারকায মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা হিফজুর রহমান খান। ঐতিহ্য অনুসারে মুসল্লিদের প্রস্তুতির জন্য জামাত শুরুর ১৫ মিনিট আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে তিনটি এবং ৫ মিনিট আগে তিনটি শটগানের গুলি ছোঁড়া হয়। ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছিল চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং এপিবিএন ছাড়াও দুই প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন ছিল। পুরো মাঠ নজরদারির জন্য দু’টি ড্রোন উড়ে শোলাকিয়ায়। বসানো হয়েছিল আর্চওয়ে, ওয়াচটাওয়ার ও তল্লাশি চৌকি। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশি করে ঈদগাহে ঢুকতে দেয়া হয়।জামাত শেষে মোনাজাতে ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের নিরাপত্তা, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। জীবিত মৃত সকলের নাজাত ও হেদায়েত কামনা করেন। পাশাপাশি পশু কোরবানি কবুল করার জন্যও সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা জানান। জামাত উপলক্ষে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দু’টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন দু’টির একটি ভৈরব থেকে এবং অপরটি ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে কিশোরগঞ্জ আসে এবং নামাজ শেষে মুসল্লিদের নিয়ে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জামাতে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আনম নৌশাদ খান, ডেুটি সিভিল সার্জন মো. মুজিবুর রহমান, ঈদগাহ কমিটির সদস্য সচিব কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তরের মুসল্লি অংশ নেন।
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌঁনে ৮টায় পৌর পার্ক ঈদগাহ মাঠে। জামাতে অংশ নেন জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সর্বস্তরের মানুষ। জামায়াতে ইমামতি করেন বাহাদুরপুরের পীর মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহ ও দেশ-জাতির উন্নতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ধর্ম প্রাণ মুসলমান শহরের আরিফপুর, পুলিশ মাঠ ময়দান, পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা, এডওয়ার্ড কলেজ ঈদগাহ, জেলা স্কুল ঈদগাহসহ বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন লক্ষীকুন্ডা ঈদগাহ ময়দানে এবং পাবনা সদর এম.পি গোলাম ফারুক প্রিন্স পাবনা আটুয়া ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে শহরের চাঁনমারীস্থ কেন্দ্র্রীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসময় নামাজে অংশগ্রহণ করেন ফরিদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধাসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর । অপরদিকে বৃহত্তর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাকের পার্টির সদরপুরের আটরশিতে। নামাজের জামাত শেষে মোনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
বুড়িচং (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ঐতিহাসিক দড়িয়ার পাড় ঈদগা মাঠ প্রাঙ্গনে এবারের ঈদ-উল-আযহার জামাত সকাল ৯টায় শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এতে ঈদগাহের মুসল্লীদের স্মরণে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে বক্তব্য রাখেন সাবেক আইন মন্ত্রী এড. আবদুল মতিন খসরু এমপি, বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, ব্রাহ্মণপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি ‘দৈনিক ইনকিলাব’ এর সংবাদদাতা এড. আবদুল আলীম খান, বুড়িচং প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ‘দৈনিক ইনকিলাব’ এর সংবাদদাতা আলমগীর হোসেনসহ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।