Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপাকে বেপারীরা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ঈদের আগের দিন রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে কোরবানির পশুর কমতি ছিল না। প্রতি বছর যেভাবে পশুর কমতি হয় এবার ছিল তার ব্যতিক্রম। ঈদের আগের দিন তুলনামূলক অনেক কম দামে গরু বিক্রি হয়েছে। এক পর্যায়ে পাইকাররা খাসির দামে গরু বিক্রি করেছেন। তারপরেও অনেক গরু অবিক্রিত ছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার কোরবানির হাটে আসা বেপারিদের মধ্যে যারা কাঙ্খিত দাম বা ক্রেতা না পাওয়ায় সব গরু বিক্রি করতে পারেননি, তাদের অনেককে গরু নিয়ে ঈদের দিনও বসে থাকতে দেখা গেছে কোরবানির পশুর হাটে। শনিরআখড়া হাটের এক বেপারি জানান, কোরবানির হাটে আনার জন্য কয়েক মাস সময় নিয়ে গ্রামের হাটে হাটে ঘুরে এসব গরু তারা কিনেছেন। কেউ কেউ স্থানীয় সম্পদশালী গৃহস্থ বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে গরু সংগ্রহ ও লালন-পালন করে ঈদে বিক্রির জন্য উপযুক্ত করেছেন। কিন্তু ঢাকার হাটে এসে সব গরু ভালো দামে বিক্রি করতে না পারায় এখন তারা বিপাকে পড়েছেন। গরু নিয়েই ফিরতে হলে গাড়ি ভাড়া, বাড়িতে রাখা আর পরিচর্যায় লাগবে আরও খরচ। সব মিলিয়ে গুণতে হবে বিরাট লোকসান। হাটের ইজারাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ২/৩দিন আগে থেকে গরুবাহী বহু ট্রাক দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আটকে ছিল। ফেরী পারাপারে সমস্যার কারণে গরুবাহী ট্রাকগুলো ঠিক সময়ে ঢাকায় এসে পৌঁছতে পারেনি। এ কারণে অনেকে গরু বিক্রি করার সুযোগ পায়নি। একই কারণে ঈদের একদিন আগে অপেক্ষাকৃত চড়া দামে গরু বিক্রি হয়েছে। অথচ পরদিন হাটগুলোতে ছিল উল্টোচিত্র। আগের দিন ৮৫ হাজার টাকায় যে গরু বিক্রি হয়েছে পরদিন সেই গরু ৫৫ হাজার টাকায়ও মিলেছে। কয়েকজন ক্রেতা জানান, এক্ষেত্রে রামপুরার আফতাবনগর হাটে অনেক সস্তায় গরু পাওয়া গেছে। ওই হাটে ঈদের আগের দিন এতো গরু এসেছে যে গরুর তুলনায় ক্রেতা ছিল খুবই কম। যে কারণে দাম কমতে কমতে একেবারে কমে গেছে। আগের দিন যেই গরু ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগের রাতে সেই গরু ৮০ হাজার টাকায়ও কিনেছে কেউ কেউ।
রাজধানীর শনিরআখড়া হাটের এক বেপারি জানান, শেষ দিনে বেশ কয়েকটি ট্রাক আসায় গরুর দাম পড়ে গেছে। অনেকে গরু বিক্রিও করতে পারেনি। ঈদের দিন রাতে বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে বেপারীরা গরু নিয়ে এলাকায় ফিরে গেছেন। আবার ট্রাকের অভাবে বেশ কয়েকজন হাটেই অবস্থান করছিলেন। তাদের একজন বলেন, কয়েক মাস পর ঈদের গোশত শেষ হলে কসাইদের কাছে এই গরুগুলো বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ী মোরশেদ বলেন, আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। শেষ দিন হাটে আসার পর কেউই আর গরু কেনার আগ্রহ দেখায় নি। ২৭টি গরু এনেছিলাম। এর মধ্যে থেকে লোকসান দিয়ে ৯টি বিক্রি করতে পেরেছি। বাকীগুলো নিয়ে ফিরে যাবো।
ওই ব্যবসায়ী জানান, ঈদে বিক্রি করে লাভের আশায় গত চার মাস ধরে এসব গরু বিভিন্ন হাট থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন। তার ভাষায়, যে গরুর পেছনে এক লাখ টাকা খরচা হইছে, সেই গরুর দর উঠছে এই হাটে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। লস হবে বলে ১৮টা গরু বিক্রি করতে পারিনি। বাড়ি নিয়ে গেলে এসব গরু আরও অন্তত দেড়-দুই মাস পালতে হবে জানিয়ে মোরশেদ বলেন, লোনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব? কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এবার ভারত থেকে গরু আসবে না শুনে লাভের আশায় বেশি দামে গরু কিনে পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই গরু বেপারি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ