Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তবুও বাড়ি যাব

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রাত পোহালেই ঈদ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেষ মুহূর্তে রাজধানী ছাড়ছেন অগণিত মানুষ। মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট। লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড়। সিিিউল বিপর্যয়ের মধ্যেই চলছে ট্রেন। পদে পদে সীমাহীন ভোগান্তি-বিড়ম্বনা। তারপরেও নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। ভোগান্তির শুরু বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, ঈদে যাত্রাপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এটিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে ঘরমুখো মানুষ।
ভুক্তভোগিদের মতে, এই ছুটে চলা অনেকটাই আনন্দের হতো যদি যাত্রাপথে কোন ভোগান্তি না থাকতো। ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরে ফেরার ভোগান্তি অতীতেও ছিল। কিন্তু এবার সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। এবার দেশের সবগুলো মহাসড়কে যানজট লেগে আছে ঈদ যাত্রার শুরু থেকেই। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভয়াবহ যানজট ঈদযাত্রার ভোগান্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনেও শিডিউল বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি ট্রেন। অন্যদিকে মহাসড়কে যানজট ও গাড়ির ধীরগতির পাশাপাশি দেশের প্রধান দুই নৌরুটে রয়েছে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ। এতে ঘাটের দুইপাশে আটকা পড়েছে কয়েকশ যানবাহন। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেকে ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের ছাদে করে যাচ্ছেন ফিরছেন স্ব-স্ব গন্তব্যে। তবে শিডিউল বিপর্যয়ে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও তিন/চার ঘণ্টা স্টেশনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি ভিড় উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোতে।
সকালে রাজশাহীগামী ধুমকেতু, খুলনাগামী সুন্দরবন, চিলাহাটিগামী নীলসাগর, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসসহ প্রায় সবগুলো ট্রেনই কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়েরও ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। দিনাজপুরগামী ঈদ স্পেশাল রাত পৌনে ১১টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সেই ট্রেন পার্বতীপুর থেকেই ছাড়েনি। অর্থাৎ ট্রেনটি সোমবারের পরিবর্তে মঙ্গলবার ভোরে কমলাপুর থেকে ছাড়বে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ট্রেনগুলো দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে আসার কারণে ছেড়ে যেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া ঈদের সময় যাত্রীর চাপ থাকায় ট্রেনে ধীরগতি থাকে, সেটাও বিলম্বের কারণ বলে জানান তিনি। অন্যদিকে, ট্রেনের মতো বাসের যাত্রীরাও পড়েছেন শিডিউল বিপর্যয়ের কবলে। গতকাল সকাল থেকে নগরীর বাস টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। মহাসড়কেও ছিল যানজট ও যানবাহনের বাড়তি চাপ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে সকাল থেকেই। বিকালের পর যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যানজটের কারণে ঢাকার বাইরে থেকে কেনো বাসই সময়মতো ঢাকায় আসতে পারছে না। যাত্রীরা জানান, প্রায় প্রতিটি বাস আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দেরি করে ছাড়া হচ্ছে। এতে করে ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সারাদিনই থেমে থেমে চলছে গাড়ি। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করলেও লঞ্চ ও স্পিডবোডে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে। অন্যদিকে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও সকাল থেকে যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। ঘাটের দুই পাড়ে অপেক্ষায় রয়েছে কয়েকশ যানবাহন।
ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও চট্টগ্রামমুখী ঘরমুখো যাত্রীদের এবার বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ফেরি পারাপারে সমস্যার কারণে দুই পারে গতকাল দিনভর যানবাহনের দীর্ঘ সারি ছিল। উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনগুলো ঢাকা থেকে বেরিয়ে গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে যানজটে আটকে পড়ে। ঢাকামুখী বাসগুলোকে দীর্ঘ জটে পড়ার পর ঢাকায় ঢুকতে অতিরিক্ত দেড় থেকে ২ ঘণ্টা লেগেছে। এতে একই বাসে যারা ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল যাবেন তাদের অপেক্ষার পালা শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ও মেঘনা ও গোমতী সেতুর মুখ থেকে পেছনের দিকে ১৫/২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে হাজার হাজার গাড়ি আকটা পড়ে। এতে করে এই দুই সেতু পার হতেই সময় লেগেছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার ঢাকা থেকে বের হতে সময় লেগেছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।
এদিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানবাহনের ধীরগতি যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, মহাসড়কের নয়াডিঙ্গি, গোলড়া, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বানিয়াজুরি, মহাদেবপুর, বরংগাইল, শিবালয় এবং উথুলি পয়েন্টে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের একাধিক পোশাক কারখানা গতকাল একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় বাড়তি চাপ পড়েছে এই মহাসড়কে। নবীনগর থেকে ছেড়ে আসা ডি-লিংকের চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ঈদ ছাড়া নরমালি নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যেতে সময় লাগে সোয়া ঘণ্টার মতো। কিন্তু ঈদের কারণে নবীনগর থেকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা। ঘাট এলাকায় পৌঁছাতে কত সময় লাগবে বলতে পারছি না। চুয়াডাঙ্গা গামী হানিফ পরিবহনের যাত্রী সালেহা বেগম বলেন, সকালে গাবতলী থেকে রওনা হয়েছি। অন্যান সময় যেখানে পাটুরিয়া ঘাটে যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা, সেখানে আজ অর্ধেক পথও আসতে পারলাম না। যে পরিমান গরম, গাড়িতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অনেক অসুবিধের মধ্যে আছি। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ