সারাদেশে যে ভয়াবহ দুঃশাসন ও স্বৈরশাসন চলছে এর যাতাকলে পিষ্ট হয়ে গোটা জাতি আজ আতঙ্কিত এবং উৎকন্ঠিত বলে মন্তব্য করেছেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট
রুহুল কবির রিজভী। আজ নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী আহমেদ বলেন, আর একদিন পরই মুসলিম বিশ্বর বড় উৎসব ঈদ-উল আযহা। ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু মানুষের মনে কোন ঈদের আনন্দ নেই। সারাদেশে ভয়াবহ দুঃশাসন ও স্বৈরশাসনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে গোটা জাতি আজ আতঙ্কিত ও উৎকন্ঠিত।
এমনিতে অবৈধ সরকারের দুর্নীতি, টাকা পাচার,লুটপাট, চাাঁদাবজি, দখলবাজিতে মানুষ অতিষ্ট। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ দিশেহারা। বাড়িভাড়া বেড়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। মানুষের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এরই মাঝে যোগ হয়েছে মামলা হামলা সহ নানা আতঙ্ক। তিনি বলেন, শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক আওয়ামী ভাবাপন্ন লোক হয়ত নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে, কিন্তু
বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, দেশের সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধরাণ শিক্ষার্থী, কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এখন অবৈধ সরকারের নানা বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত, ক্ষতবিক্ষত। এতোদিন শুধু
বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন নিপীড়নের খড়গ চলছিল। এখন সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থী, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও রেহাই পাচ্ছে না অবৈধ শাসক গোষ্ঠীর হিং¯্র আক্রমণ থেকে। ন্যায় সঙ্গত ও যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে তারা এখন কারাবন্দি। যদিও গতকাল কিছু শিক্ষার্থী জামিন পেয়েছে। তবে এখনও বহু নিরপরাধ শিক্ষার্থী কারাগারে বন্দি। মাথার ওপর মিথ্যা মামলার খড়গ ঝুলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জামিন মেলেনি। তাদের অভিভাবকদের আহাজারি আর কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অভিভাবকরা এক থানা থেকে আরেক থানা, আদালত থেকে আদলতে ছুটাছুটি করেও জামিন করাতে পারেননি সন্তানদের। সরকারের কাছে মিনতি জানিয়ে জনসমর্থনহীন সরকারের পাষান হৃদয় গলেনি। অজ্ঞাত নামা মামলার নামে হাজার হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়েরের ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশের অভিভাকরা অজানা আতঙ্কে আছেন। তিনি বলেন, সরকারের এসব অনাচারের উত্তর একদিন দিতেই হবে। জবাবদিহীতার দিন ঘনিয়ে আসছে। ঈশান কোনে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে, যে কোন মুহুর্তে কালবৈশাখির মত্ত ঝাপ্টায় বিনা ভোটের সরকার হুড়মুড় করে পড়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়ায়
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জালনথির ওপর ভিত্তি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি বার বার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও নতুন নতুন মামলা ও অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাঁকে চিকিৎসা না দিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।
বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলার খড়গ ঝুলছে। কারবন্দি আছেন হাজারো নেতা-কর্মী। প্রতিনিয়ত চলছে গুম খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা আর মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন। এমন পরিস্থিতিতে এই ঈদে মানুষের মনে কোন আনন্দ, নেই কোন স্বস্তি। এ দুঃশাসনের অবসান ছাড়া দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে না। শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, সত্যিকারভাবে মানুষ তাঁর পছন্দ অনুযায়ী জনপ্রনিধি নির্বাচন করতে পারলেই কেবল মুক্তি মিলবে এ জাতির। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটককৃত সকল শিক্ষার্থীদের এবং আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমসহ সকল শিল্পী কুশলিদের মুক্তি দাবি করছি।
ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান ওবায়েদ, জাসাস সভাপতি ড. মামুন, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ।