Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিঝুমদ্বীপে সবুজে স্বর্ণ পানিতে রুপা দেখবেন

আনোয়ারুল হক আনোয়ার : | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

মাত্র দুই দশক আগের কথা। নোয়াখালী জেলার দক্ষিণাঞ্চল ছিল অবহেলিত। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ছিল না উন্নয়নের ছোঁয়া। ডাঙ্গা ও পানিতে ভয়ঙ্কর বনদস্যু বাহিনীর অবাধ বিচরণে উপকূলীয় জনগণ ছিল ভীতসন্ত্রস্থ। ২০০৪ সালে সাধারণ লোকদের প্রতিরোধে পতন ঘটে দস্যু বাহিনীর। এরপরই অবহেলিত উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চলকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন দিন পাল্টেছে চেহারা।
নোয়াখালী জেলা সদরের দক্ষিণাঞ্চল ও দ্বীপাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের আমূল পবির্তনের পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে স্বর্ণদ্বীপ, ভাসানচর ও নিঝুমদ্বীপ দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় আলাদা স্থান পেয়েছে। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে মেঘনার বুক চিরে অর্ধ শতাধিক চর জেগেছে। এতে মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার আয়তন বর্তমানে একটি বড় জেলার সমান। এছাড়া প্রতিবছর স্থলভাগের আয়তনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নোয়াখালীর উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চল পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। এরমধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত নিঝুমদ্বীপ দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক নিঝুমদ্বীপে আসেন। এক সময় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। মেঘনার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘স্বর্ণদ্বীপ’।
জলদস্যু বাহিনীর এক সময়ের সদর দপ্তর ‘জাহাইজ্যার চর’ দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর হাতের ছোঁয়ায় বর্তমানে সবুজ ঘেরা নয়নাভিরাম স্বর্ণদ্বীপ। এই দ্বীপকে ঘিরে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটছে। এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল জানান, কুমিল্লা জেলা থেকে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কুমিল্লা শহরের অভ্যন্তরে টমছম ব্রীজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার ফোরলেন সড়কের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এছাড়া বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে সোনাপুর জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার ফোরলেন সড়কের কাজ শুরু হয়েছে।
অপরদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন খাতকে আকৃষ্ট করতে সোনাপুর জিরো পয়েন্ট থেকে ৪ নম্বর ঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে হাতিয়া চেয়ারম্যানঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। আর এগুলো বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
নোয়াখালীর উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চলের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালী সফরকালে দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেও কতিপয় মামলাবাজের কারনে উদ্যোগটি স্থবির হয়ে আছে।
নিঝুমদ্বীপ ছাড়াও জেলার দক্ষিণাঞ্চলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবাদে পর্যটন শিল্প বিকাশে উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তেমনি মেঘনার জলরাশি বেষ্টিত ভাষাণচরে পর্যটনে হাতছানি দিচ্ছে। জেলার দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিমান বন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী নোয়াখালী সফর করেন।
জেলা শহরের দক্ষিণে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর মেঘনা উপকূলবর্তী সূবর্ণচরে একটি ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন সময়ের দাবি। উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১২’শত একর জমির উপর স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া সেখানে ৩০০ একর ভূমিতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট রয়েছে। মেঘনা তীরবর্তী নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার একর খাস ভূমি রয়েছে। কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনের জন্য এই অঞ্চলের বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। তাই নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে কৃষি, মৎস্য, ফলজ ও বনজখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিশেষ করে স্বর্ণদ্বীপ, ভাষানচর ও নিঝুমদ্বীপসহ আকর্ষণীয় স্থানসমূহে পর্যটকদের যাতায়াত সহজতর করার লক্ষ্যে দ্রুত ও নিরাপদ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ঢাকা সদরঘাট থেকে হাতিয়ার তমরদ্দি ও সোনাদিয়ার চরচেঙ্গা রুটে সরাসরি লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। এতে পর্যটকদের জন্য কিছুটা সহায়ক হলেও ঢাকা থেকে নিঝুমদ্বীপ রুটে সরাসরি লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে ভ্রমণকারীরা সরাসরি নিঝুমদ্বীপে যাতায়াত করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে হাতিয়ার এমপি আয়েশা ফেরদৌস ইনকিলাবকে জানান, সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ, ভাষাণচর, স্বর্ণদ্বীপসহ গোটা উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চলে দেশ-বিদেশী পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। হাতিয়া উপজেলার আয়তন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে দেশের জন্য অপার সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
নোয়াখালীর সোনাপুর-জোরালগঞ্জ সড়ক চালু হলে মাত্র দেড় ঘণ্টায় বন্দরনগরী যাতায়াত সম্ভব হবে। এতে করে এই এলাকায় উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী সহজে বন্দরনগরীতে পরিবহন ছাড়াও পর্যটনেও প্রভাব পড়বে। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল মেঘনা পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। প্রতিদিন শত শত ট্রলার মৎস্য আহরণ করে থাকে। সে সুবাদে জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।
এছাড়া নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে ছোটবড় মিলিয়ে শতাধিক মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। নোয়াখালীতে একটি মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপিত হলে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির পথ সুগম হবে। এক কথায় নোয়াখালীর উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চলে পর্যটন, শিল্প-কারখানা ও নৌবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জাতীয় অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে।



 

Show all comments
  • Md. Kamrul Hasan ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১১:৪৯ এএম says : 0
    অপার সৌন্দর্যের স্থান নিঝুমদ্বীপ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিঝুমদ্বীপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ