Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিঝুমদ্বীপে কমছে হরিণ

৪০ হাজার থেকে ২৫/৩০ হাজারে নেমে এসেছে, কর্তৃপক্ষ নির্বিকার

আনোয়ারুল হক আনোয়ার : | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রাকৃতিক অপরুপ লীলাভূমি নিঝুমদ্বীপের সীমিত বনাঞ্চলে বসবাসরত ৪০ হাজার হরিণ থেকে ১০ হাজার হারিয়ে গেছে। হাজার হাজার হরিণের খাদ্য, বিচরণ, পরিচর্যা এবং ঘনত্ব দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নির্বিকার। বিভিন্ন সূত্র ও স্থানীয় অধিবাসীদের তথ্যমতে, তিন চার বছর পূর্বে নিঝুমদ্বীপে হরিণের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ হাজার। খাদ্য অপুষ্টিতে ও ঝড় জলোচ্ছাসে মারা যাচ্ছে শত শত হরিণ। তেমনিভাবে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র হরিণ শিকার করছে। এছাড়া মাছ ধরা নৌকা ট্রলারযোগে নিঝুমদ্বীপ থেকে প্রতিনিয়ত হরিণ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বিপূল হরিণ ও বনাঞ্চল তত্বাবধানে বন বিভাগের হাতে গোনা যে কয়েকজন কর্মচারী রয়েছে-তা প্রয়োজনের তূলনায় অপ্রতুল। দেশের বনজ সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগ রয়েছে। কিন্তু নিঝুমদ্বীপের মূল্যবান হরিণ সম্পদ রক্ষা কল্পে উক্ত বিভাগটি এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বিগত ২০১১ সালে নোয়াখালীর ডিএফও সানা উল্লা পাটোয়ারী সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত এক চিঠিতে নিঝুমদ্বীপ থেকে কিছু হরিণ দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।
নিঝুমদ্বীপের সীমিত বনাঞ্চলে নিয়ম অনুযায়ী মাত্র পাঁচ হাজার হরিণ বসবাসের উপযোগী হলেও এখন সেখানে বর্তমানে ২৫/৩০ হাজার সহস্রাধিক হরিণ রয়েছে বলে ডিএফও তৌহিদুল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, খাদ্যের অভাবে প্রতিনিয়ত হরিনের দল বেঁধে লোকালয়ে প্রবেশ করে রবিশস্য সাবাড় করছে। আর এ সূযোগে ফাঁদ পেতে হরিন শিকার করছে কিছু অসাধু চক্র। আবার প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে ঝড় জলোচ্ছাসের সময় শত শত হরিণ জোয়ারের পানিতে ভেসে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ষাটের দশকে হাতিয়া জাহাজমারা ইউনিয়নের পশ্চিম দক্ষিন প্রান্তে মেঘনার বুকে চিরে একটি এক খন্ড চর জেগে ওঠে। সে সময় চরটির নাম ছিল ‘বালুয়ার চর’। এর চার বছর পর হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক চাষাবাদের উদ্দেশ্যে বালুয়ার চর অর্থাৎ নিঝুমদ্বীপের গমন করেন। বিগত সত্তরের জলোচ্ছাসে চরটিতে মাত্র একজন প্রাণে বেঁচে যান। এরপর চরটির আয়তন বৃদ্বি তৎসহ মাটির স্থায়িত্ব মজবুত হবার পাশাপাশি হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিঝুমদ্বীপের বসতি গড়ে তোলে। ১৯৭৩ সালের দিকে উক্ত চরে বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে দ্বীপটির আয়তন বৃদ্বির পাশাপাশি লোক সমাগমও বৃদ্বি পেতে থাকে। ১৯৭৬ সালে নোয়াখালী বন বিভাগ দুই জোড়া চিত্রা হরিণ নিঝুমদ্বীপে অবমুক্ত করে। এরপর হরিনের বংশ বৃদ্বিতে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ৪/৫ হাজার হরিণ বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, খাদ্য, অপুষ্টির এবং শিকারীদের ফাঁদে পড়ে প্রতি বছর ২/৩ হাজার হরিণ মারা যাচ্ছে। হাতিয়ার কয়েকটি স্থানে হরিণের মাঝেমধ্যে হরিণের মাংশ বিক্রি হয়। এছাড়া বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা উপঢৌকন হিসেবে হরিণ সরবরাহ হয়। সরজমিনে দেখা গেছে, নিঝুমদ্বীপের দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জন্য প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শতাধিক ট্রলার নিঝুমদ্বীপ ঘেঁষে চলাচল করে থাকে। এদের মধ্যে বেশ কিছু ট্রলার মাছ ধরার নামে হরিণ পাচার করছে। বিশেষ করে ঢাকাও নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরে পাচার হচ্ছে হরিণ। একাজে একটি চোরাচালানী চক্র দীর্ঘদিন ধরে তৎপর রয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে হাতিয়া নিঝুমদ্বীপের বিপূল হরিণ সম্পদ রক্ষা পরিবশে ও বন বিভাগের জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত শত কোটি টাকা মূল্যের হরিণ অযত্ম ,অবহেলা ও শিকারীদের কবল থেকে রক্ষাকল্পে বন বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।



 

Show all comments
  • ইসমাইল ৩০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ পিএম says : 0
    দলীয় লোকেরা পুলিশের সহযোগিতায় হরিণ শিকার করছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিঝুমদ্বীপ হরিণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ