আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ হয়ে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এদের পতন অনিবার্য ও অত্যাসন্ন। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের যাতাকলে দেশবাসীকে অন্ধকার দম আটকানো অবস্থায় ফেলা হয়েছে, যাতে জনগণের প্রতিবাদী মিছিল রাজপথে এগিয়ে যেতে না পারে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার শেষ মরণ কামড় দিচ্ছে। কিন্তু তাদের সময় পার হয়ে গেছে। যতই জেল জুলুম নির্যাতনের পথ বেছে নিন কোন এন্টিবায়োটিকই আপনাদের টিকাতে পারবে না। গতকাল (রোববার) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার পতনের আলামত দেখে সরকার গ্রেফতারের হিড়িক শুরু করেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচনের আগেই এ সরকারের পতন হবে এমন আলামত দেখে দেশব্যাপি মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি আর নির্বিচারে গ্রেফতারের হিড়িক শুরু হয়েছে। ঈদের প্রাক্কালেও দেশজুড়ে গণগ্রেফতারের অবিরাম অভিযান চলছে- গ্রেফতার করা হচ্ছে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ হাজার কর্মীদেরকে। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন এদেশে হবে না। আগামী নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এবার গায়ের জোর খাটিয়ে কোন লাভ হবে না।
ক্ষমতার মসনদ হারানোর ভয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী অপশাসনের ছোবলে শুধু দেশের জনগণই নয়, দেশ-বিদেশে সমর্থন হারিয়ে এতিম হয়ে পড়ে আওয়ামী নেতারা। এজন্য তারা এখন পাগলের প্রলাপ বকছে। এদের বক্তব্য বিবৃতি সামঞ্জস্যহীন। পাগলামির ঘোরের মধ্যে আওয়ামী সরকার এখন নিমজ্জিত।
রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এক উদ্ভট কথা বললেন। তিনি নাকি ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। তার পরেই তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বললেন সেই হত্যাকান্ডের সাথে নাকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত। তাদের (সরকার) কি আসলেই এখন পাবনায় যাওয়ার উপক্রম হয়েছে? নাকি পাবনায় যাওয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন? এটা জনমনে একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে তারা খুব শেয়ানা পাগল, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, মসনদে থাকার জন্য বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়।
জালিয়াতির উপর নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন তাড়াহুড়া করে দেড় লাখ ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন (ইভিএম মেশিন) কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ক্রয় ও সংরক্ষণের জন্য এ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির সাথে সংলাপে আওয়ামী লীগ ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সুশিল সমাজ, পেশাজীবীসংগঠন ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও একাধিকবার বলেছেন সবাই না চাইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ব্যক্তির গণমাধ্যমে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য জনগণের নিকট অঙ্গিকারনামার মতো বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে সিইসি বিপুল টাকার অংকে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন ক্রয় করার উদ্যেগ নিচ্ছেন। একই সঙ্গে কমিশনের সচিব বলেছেন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিধান অর্ন্তভূক্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন-যা সম্পূর্ণভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে ম্যানিপুলেট করার জন্য ইভিএম ব্যবহার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের সচিবের যৌথ প্রজোযনা। ইভিএম মানেই ত্রুটিযুক্ত নির্বাচন। ইভিএম দিয়ে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইভিএমে সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। এ মেশিন দ্বারা ডিজিটাল কারচুপি হওয়া সম্ভব। ইভিএম সম্পর্কে এর আগে বিস্তারিত আমারা জানিয়েছি। আগামী নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকারকে পূনরায় ক্ষমতায় বসানোর জন্যে বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহারের পাঁয়তারা করছে সিইসি ও কমিশনের সচিব। আগামী নির্বাচন পুরোপুরি জালিয়াতির ওপর সাজাতেই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ।