Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাঁঝ বিকেলের মেয়ে

তাহমিনা কোরাইশী | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ৩:৪৪ পিএম, ২০ আগস্ট, ২০১৮

আজকাল বেশ কান বাজছে মুনিয়ার। মনে হয়ে কে যেন ডাকছে ওকে। ফিরে চায় কে ডাকে আমায়? মুনিয়া ভাবছে ছোটবেলার খেলার সাথীরা নয়তো! মুনিয়া পাখি আয় আয় বেরিয়ে আয় উড়বি চল। ঐ খোলা আকাশটা তোর অপেক্ষায়। আর কতকাল থাকবি বন্দি শিবিরে। পরক্ষণেই মনে হয় না না খেলার সাথীরা এভাবে ডাকবে না তো। ওরা বলতো-খোলা মাঠ ডাকছে আয় মুনিয়া আয়, চল আকুন্দ ফুলে মালা গাঁথি। দিনভর পুকুরে সাঁতার কাটি। শাপলা-শালুক তুলি। তবে কে ডাকে আমায় এমন আকুল করে। আমিও ব্যাকুল হয়ে রই। আমাকে বিহŸল করে রাখে। দেখতে দেখতে দশটি বছর পার হয়ে গেছে এই সংসার জীবনে। দুই সন্তানের জননী সে। বাচ্চাদের স্কুলে-পড়ালেখা, স্বামীর অফিস এরপর পথ চেয়ে বসে থাকা। রুটিন বাঁধা জীবনে নেই আনন্দ উচ্ছ¡াস। কেবল একঘেয়ে সময় পার করা। বিয়ের আগের মুরাদ আর এখনকার মুরাদ আকাশ-পাতাল তফাৎ। দোষ দেয় না মুরাদকেও। দারুণ পরিশ্রমের কাজ করে যতটুকু অবসর পায় বাসায় আরামে কাটাতেই অভ্যস্ত। মুনিয়াকে মাথায়ও তুলে রাখে না। মাটিতেও ফেলে রাখে না।
কিন্তু তবুও মুনিয়ার মন কাঁদে। এক টুকরো মরুময় জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছে। চার দেয়ালে বন্দি উষ্ণ রূঢ় জীবন ভালো লাগছে না। খোলা হাওয়ার হাতছানি নেই। আজ মনটা ভীষণ উড়– উড়–। জানালা দিয়ে আকাশ দেখে। ও মা একি আকাশের মনটাও ভার। কেমন মুখ গোমরা করে আছে। মেঘে মেঘে ধূসর কালো বর্ণ। সবেমাত্র বিকেলের সংকেত এরই মাঝে রাতের মতো আঁধার। আকাশের কান্না মুনিয়ার কান্না একাকার হয়ে যায়। মুনিয়া পায়ে সিঁড়ি ভাঙে। ঐ ছাদের সাথেই আজ আকাশটা লেগে আছে ওকে ছোঁয়ার চেষ্টা। তুমুল বৃষ্টি দমকা হাওয়ায় মুনিয়ার শাড়ির আঁচল মেঘের সাথে উড়ছে। মেঘ ভাসছে মুনিয়াও ভাসছে। মেঘ হাসছে মুনিয়াও হাসছে। উড়ছে মুনিয়া তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, পাখির মতো উড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজে লেপটে যাওয়া কাপড়। দারুণ জোরে পড়ছে মিষ্টি সুরে। ছাদটা আজ পুকুর হয়ে যায়। মুনিয়া দু’চোখ বন্ধ করেই বর্ষার আমেজে ডুব সাঁতার। আজ সে বর্ষাগন্ধা মেয়ে, আজ সে মেঘের মেয়ে। বহুকাল এমন বর্ষণ দেখেনি সে। আনন্দে ভাসছে হাসছে মুনিয়া কতক্ষণ ওর জানা নেই একেবারে ভিজে একাকার।
হঠাৎ ওর কানে ভেসে এলো একটি কণ্ঠস্বর। কি করছো মুনিয়া বৃষ্টিতে ভিজছো। জ্বরটর বাধবে তো। কথা বলতে বলতে মুরাদ ওর কাছে এগিয়ে এসে ছুঁয়ে দেয় মুনিয়ার শরীর। বলে- তোমার সাথে আমিও ভিজে জ্বর বাধাবো। কি বলো? মুরাদের ছোঁয়ায় সারা শরীরে শিহরণ কেঁপে ওঠে মুনিয়া। চোখ খুলতে ইচ্ছা হয় না। অবাক বিস্ময়ে বোবা হয়ে যায়। আশাহত মেয়ে আজ আশার পালকে মুড়ে যায়। আরো নিবিড় আলিঙ্গনে মুরাদকে জড়িয়ে ধরে। তুমুল বৃষ্টিতে ভালোবাসার স্বপ্নরা ওম দেয়। মুনিয়া কাঁপাকাঁপি শালিক ঠোঁটে বলে-এতদিন কোথায় ছিল এই প্রেম। মুরাদ আরো নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বলে- তোমার শ্রাবণ আজ আমাকে উসকে দিয়েছে। শ্রাবণ ধারায় ধুয়ে যায় মুনিয়ার চোখের জল মনের ক্লান্তি। মুগ্ধ নয়নে একবার চোখ মেলে মুনিয়া-মুরাদের দৃষ্টিতে এঁকে দেয় ভালোবাসার রঙ। আপ্লুত আহ্লাদিত আনন্দিত প্রাগৈতিহাসিক এই শ্রাবণ ধারা। হারিয়ে যায় আদি বুনো সোদা গন্ধে দু’টি প্রাণ। মেঘের দেশে উড়ে যায় ভেসে যায় বর্ষা বিলাসী এই মন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদুল আজহা

৯ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন