স্বতন্ত্র উৎসব ঈদ
এল ঈদুল ফিতর, এল ঈদ ঈদ ঈদসারা বছর যে ঈদের আশায় ছিল নাক’ নিদ। হ্যাঁ, সুদীর্ঘ
এক
[হিন্দু প্রধান ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে মুসলিম প্রধান অবিভক্ত বাংলায় আমার জন্ম। আমার জন্মের এক বছর দশ মাস পর মুসলিম প্রধান অবিভক্ত আসাম এবং মুসলিম প্রধান অবিভক্ত পাঞ্চাব ভাগ করে ব্রিটিশ ভারতের আটশ’ শতাংশ জায়গা নিয়ে, ভারতীয় উপমহাদেশের নব্বই শতাংশ জায়গা নিয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সমাজপ্রধান ভারত স্বাধীন হয়। আল্লাহর অশেষ রহমত এই যে, আমার শৈশবে, বাল্যে, কৈশোরে কিংবা প্রথম যৌবনে এই দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাস জানার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তাই সেই অজ্ঞতার মধ্যেই মনে অনেক আশা ছিল, আনন্দ ছিল। শৈশবে, বাল্যে এবং কৈশোরে দুই ঈদ আমার কাছে যথার্থই উৎসব ছিল। ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্ট পরবর্তীকালের ভারতীয় উপমহাদেশের সরকার এবং শিক্ষিতজনদের তাই ধন্যবাদ যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের যেই একশ’ নব্বই বছরের ইতিহাস জানার সুযোগ স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছেলে-মেয়েদের আজো দেননি। সে সুযোগ দিলে ভারতীয় উপমহাদেশের ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্ট পরবর্তীকালের মুসলিমপ্রধান দেশের মুসলমানদের হয়তো সম্বিৎ ফিরত এবং স্বাধীন ভারতের মুসলমানদেরও অনেকটা প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন হতো। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা লিমিটেডের প্রকাশনী সংস্থা আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড থেকে প্রকাশিত ইতিহাসবিদ অমলেশ ত্রিপাঠীর লেখা “স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস (১৮৮৫-১৯৮৫) শীর্ষক গ্রন্থে দেখছি যে, ভ‚-রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে (সেই ১৭৫৭-র ২৩ শে জুন থেকে) সহযোগী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সমাজ প্রধান একটি শক্তিশালী ভারত ব্রিটিশরা চেয়েছিল। আর ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্টের বিভাজনের জন্য পÐিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের আলোচনা মোতাবেক ভিপি মেনন প্রণীত প্ল্যান পার্টিশন কার্যকর হলে “হিন্দুরা উচ্চতর স্তরের সুবিধা ভোগ করবে” এ বিষয়ে পÐিত জওহরলাল নেহরু এবং সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলসহ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের আর সবার মতো মহাত্মা মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীও নিশ্চিত হয়েছিলেন। সেটা ১৯৪৭-এর ১৪ জুনের বিবরণে পাওয়া যায়। তা হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠাকামী এবং হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক একজাতিতত্ত¡ আরোপকামী দৃষ্টিভঙ্গিতে “হিন্দুরা উচ্চতর স্তরের সুবিধা ভোগ করবে” এই ব্যবস্থাটাই যখন হয়েছিল, তখন হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত মুসলমানরা নিশ্চয়ই নিম্নতর স্তরের সুবিধা ভোগ করবে”, এই ব্যাপারটার নিশ্চয়তা বিধানের সংস্থানও নিশ্চয়ই উক্ত প্ল্যান পার্টিশনে ছিল। ১৯৪৪-এর ২৪ শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে লেখা মহাত্মা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর চিঠিতেই ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্টের বিভাজনের অত্যন্ত সুস্পষ্ট রূপরেখাই তো পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্টের বিভাজনটা ঠিক সেভাবেই হয়েছিল, যেভাবে বৈশ্বিক ব্রাহ্মণ শাসিত বর্ণ ও অধিকার ভেদাশ্রয়ী মনুসংহিতার সমাজের জাতীয়তাবাদী মহল চেয়েছিলেন। পড়াশোনা করলে এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকে না।
দুই
বেশ কিছুদিন আগে বার্মা (মিয়ানমার) থেকে নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে অসহায় মুসলমানরা যখন এদেশে আসতে বাধ্য হচ্ছিলেন, আর তাদেরকে অনুগ্রহ করে যখন আসতে দেয়া হচ্ছিল এবং কোনো কোনো দেশের সাহায্য সামগ্রী যখন বিমানে আসার ছবি টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছিল; সে সময় টেলিভিশনেই একদিন ঢাকাস্থ ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাহেবের কাছে শুনলাম যে, মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানরা থাকবেন সে সব আশ্রয়স্থল নির্মাণের কাজ ভারত সরকার করে দিয়েছে বা দিচ্ছে। এরই কাছাকাছি সময়ে সে সব আশ্রয়গুলোর ছবি যেগুলোকে এখন ট্রানজিট শিবির বলা হচ্ছে, ঢাকার দৈনিক কাগজ “যুগান্তর” এ দেখলাম। খুব কষ্ট হলো। এই নির্যাতিত নিরীহ মানুষগুলোকে তো এখানে স্রেফ আবদ্ধ হয়েই থাকতে হবে। তাদের ভিটে, ঘরবাড়ি, জমি-জায়গাগুলো কোথায়? সেসব আর ফিরে পাবেন না তারা?
[১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তাদের যে নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল, সেই নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে না? জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই ট্রানজিট শিবিরগুলোতেই থাকতে হবে তাদের? রক্ষীদের প্রহরায় তারকাঁটা ঘেরা এলাকায়]
[মানুষকে তাঁর নাগরিকত্ব ফিরিয়ে না দিলে আর কী ফিরিয়ে দেয়া হয়? সেই নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার কথা তো শুনিছ না!]
[আমরাও সব অসহায়? কিছুই করার ক্ষমতা আর আমাদের নেই? সাতচল্লিশের মধ্য আগস্টের সত্তুর-একাত্তুর বছর পর এরকমই হয়ে গেল আমাদের অবস্থা! এই অবস্থায় এই মনে ঈদ উৎসবের আনন্দ আসে?]
তিন
[ভারতীয় উপমহাদেশে আমাদের প্রতিবেশী হিন্দু ও খ্রিস্টান সমাজে মনুষ্যত্ববোধে উন্নীত অনেক মহৎ মানুষ আছেন। কোনো জাতীয়তাবাদী জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সব মানুষই যে জাতীয়তাবাদী হন, এমনটা আদৌ নয়। জাতীয়তাবাদী নন, এমন অনেক মানুষ ইহুদিদের মধ্যেও আছেন, এ বিষয়ে ২০০৬-এর আগে একটা খবর লক্ষ সেটা করে উপলব্ধি করেছি। যাদের সবাইকে চিনি না এবং জানি না, এমন একটা জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে শনাক্ত করে জাতীয়তাবাদী হ’তে হলে সততা, ঔচিত্যবোধ, মনুষ্যত্ববোধ বিসর্জন দিয়ে প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত জনগোষ্ঠীর সবাইকে নির্বিচারে ঢালাওভাবে অধিকারবঞ্চিত করে সাম্প্রদায়িক হতে হয় কিংবা প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে দেগে দিয়ে বা চিহ্নিত জনগোষ্ঠীর মানুষদের জান-মাল কেড়ে নেয়ার ব্যাপারে একটা গঠমন সৃষ্টি করে ফ্যাসিস্ট হতে হয়। এরকম হওয়ার মতো অধ:পতিত ও হীন মানসিকতা সবার থাকে না। মানুষের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার মতো মানসিক যোগ্যতা সবার থাকে না। ফলে সবাই জাতীতাবাদী হতে পারে না। আসামে যারা অযথা অন্যায়ভাবে মুসলমানদেরকে প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে শনাক্ত করে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছেন তারা জাতীয়তাবাদী। হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদী। হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক একজাতিতত্ত¡ আরোপকামীও তারা।]
[কোনো জনগোষ্ঠীকে প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে দেগে দিয়ে বা যারা চিহ্নিত করে জাতীয়তাবাদী হন তারা একজাতিতত্ত¡ আরোপকামীও হন। তারা তাদের প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত জনগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরাভিত্তিক জাতিসত্ত¡া মুছে ফেলে সেখানে নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও নিজেদের ধর্মীয় সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরা ভিত্তিক নিজেদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতিসত্ত¡া আরোপ করে একজাতিতত্ত¡ আরোপকামী হন। সেটাও স্মরণ রাখা দরকার আমাদের।]
[জাতীয়তাবাদীরা আবার নরমপন্থী এবং চরমপন্থী, উভয় প্রকাশেরই হন। তবে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সবসময় সব ক্ষেত্রেই একটাই হয়। সে দিক দিয়ে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ ১৮৮২’র ১৫ই ডিসেম্বর-এর আদেশে গড়ে ওঠা অনুশীলন সমিতি (১৯০২), যুগান্তর দল (১৯০২) ও অন্যান্য আধা সামরিক সাংস্কৃতিক রাজনেতিক সন্ত্রাসবাদী গুপ্ত সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠনের সভ্য প্রভাবিত নিখিল ভারত হিন্দু মহাসভা (১৯১০), ভারতের জাতীয় কংগ্রেস (১৮৮৫), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (১৯২০), ফরোয়ার্ড বøক (১৯৩৯, রেভলিউশনারি সোস্যালিস্ট পার্টি (আরএসপি ১৯৪০) অনুশীলন সমিতির সভ্য মনিসিংহের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (১৯৪৭), অনুশীলন সমিতির সভ্য মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্ত্তীর নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টি (১৯৪৭), অনুশীলন সমিতির সভ্য ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওরার প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (আরএসএস ১৯২৫) এবং আরএসএস-এর শাখা সংগঠন ভারতীয় জনতা পার্টি (১৯৮০)’র মধ্যে জাতীয়তাবাদ এবং একজাতিতত্ত¡ আরোপকামী দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। আসাম পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এ কথাটি স্মরণ রাখতে হবে।]
চার
ঢাকা থেকে প্রকাশিত ১ আগস্ট ২০১৮ তারিখ বুধবারের “যুগান্তর” এর অষ্টম পৃষ্ঠায় একটা খবরে দেখেছি, ৩০ শে জুলাই ২০১৮ তারিখ সোমবার ভারতের আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধীকরণ বা “ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অব সিটিজেনস” (এমআরসি)-র দ্বিতীয় ধাপের যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জন নাগরিকের নাম নেই।
“আসামের দেখাদেখি নাগরিক তালিকা আরো দুই রাজ্যে” এই শিরোনামে “যুগান্তর” এর এই অষ্টম পৃষ্ঠায় পরিবেশিত খবরে আছে “সরকার মুসলিম শরণার্থীদের টার্গেট করেই এই তালিকা তৈরি করেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।”
এই খবরেই আছে, “ভারতের আসাম রাজ্যের দেখাদেখি” মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খÐ, এই দুটো রাজ্যও নাগরিক তালিকা প্রকাশ করতে চাচ্ছে।”
বিভিন্ন দৈনিকে দেখেছি, ভারতীয় জনতা পার্টি দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ইত্যাদি সব প্রদেশেই “অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” খুঁজে বের করে তালিকা প্রণয়ন করবে। কেউ বাধা দিয়ে এ উদ্যোগ যে রোধ করতে পারবে না, সে কথাও জানিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টি সভাপতি অমিত শাহ।
এই আশঙ্কা কেবল ভারতীয় জনতা পার্টির নয়। ভারতীয় মহাদেশের মুসলমানদের প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে শনাক্ত করে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে গড়ে ওঠা হিন্দু সমাজের নরমúন্থী-চরমপন্থী নির্বিশেষে জাতীয়তাবাদী মহলের। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ তামাম ভারতীয় উপমহাদেশকে তারা কেবল এক হিন্দু জাতির এবং হিন্দু ধর্মের দেশ বানাতে চান। এ নিয়ে তাদের জাতীয়তাবাদী মহলে কোনো দ্বিমত নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান শিখ, জৈন, পার্সিদের পাশে নেয়ার কর্মসূচির একটা অংশ হিসেবে ‘নির্যাতিত’ শরণার্থী হিসেবে গণ্য করে তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার একটা সিদ্ধান্ত ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের আমল থেকেই অবাধে কার্যকর হয়ে আসছে। সেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের আমল থেকেই কেবল মুসলমানদেরকেই “অনুপ্রবেশকারী” বলে অভিহিত করেন বলে কেবল ভারতের বাইরের মুসলমানদেরকে নয়, ভারতের মুসলমানদেরকেও তারা ভারতের প্রকৃত নাগরিক বলে স্বীকার করতে চান না হিন্দু সমাজের জাতীয়তাবাদী মহল। ক্রুসেডের চেতনাসম্পন্ন সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজিভাষী শেতাঙ্গ খ্রিস্টান বণিকদের জাতীয়তাবাদী মহলের ইচ্ছা পূরণের লক্ষ্যে বিশেষ করে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে প্রতিপক্ষ ও শত্রæ হিসেবে শনাক্ত করে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মসলিম উৎখাতকামী।
যে হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমান সমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ইসলামী সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরা ভিত্তিক মুসলিম জাতিসত্তা ও উক্ত মুসলিম জাতিসত্তা সংশ্লিষ্ট সাহিত্য-সঙ্গীত, স্থাপত্যশিল্প ইত্যাদি মুছে ফেলে হিন্দু সমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও হিন্দুদের ধর্মীয় সংস্কৃতির পরম্পরা এরং এই পরম্পরা ভিত্তিক হিন্দু জাতিসত্তা ও এই হিন্দু জাতিসত্তা সংশ্লিষ্ট সাহিত্য-সঙ্গীত, স্থাপত্যশিল্প ইত্যাদি আরোপ করার যে হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক একজাতিতত্ত¡ কায়েম করার যে ধ্যান-ধারণা, যে চিন্তা-ভাবনা ও আকাক্সক্ষা তারা তাদের মনের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন, সেটা তারা এই একবিংশ শতাব্দীতেও আবেগহীন ও দৃঢ়সঙ্কল্প হয়ে বাস্তবায়িত করতে বদ্ধপরিকর। এই বিষয়টা আমাদের স্কুল-কলেজে-ইাউনিভার্সিটির কোনো বিভাগের পাঠ্যবইতে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় এ বিষয়ে আমরা অবহিত হওয়ার সুযোগ পাই না। কিন্তু হিন্দু ঘরেরই মনুষত্ব বোধে উত্তীর্ণ কোনো কোনো মহৎ মানুষদের লেখা পড়লে, তাঁদের কাছে আসার সুযোগ পেলে এ বিষয়ে অবহিত হওয়ার সুযোগ হয়। তাঁরা কেউ কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও এ সব জানান।
ভারতের আসাম প্রদেশের এবং অন্যান্য প্রদেশের এই জাতীয় নাগরিক নিবন্ধীকরণ প্রসঙ্গে এটাও স্মরণ রাখা দরকার যে, আমাদের সুসলমানদের কোনো সমাজ নেই। ওদের অর্থাৎ হিন্দুদের কিন্তু একটা সমাজ আছে। ওদের হিন্দু প্রধান স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র এবং স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং শাসন বিভাগ। আমাদের এবং ভারতের অন্যান্য প্রদেশের হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক এক জাতিতত্ত¡ প্রকৃত সমস্যাটা কিভাবে কাজ করছে এবং বিস্তার লাভ করছে সে প্রসঙ্গে এটাও খেয়াল রাখা দরকার যে, আমাদের মুসলমানদের কোনো সমাজ নেই। আমারা মুসলমানেরা আক্ষরিক অর্থেই সমাজহীন অর্থেই মানুষ। আমাদের এই সমাজহীন সমাজটা অপর রাষ্ট্রপ্রধান। অর্থাৎ আমাদের রাষ্ট্রের নিচে, আমদের রাষ্ট্রের আইন বিভাগের, বিচার বিভাগের এবং শাসন বিভাগের নিচে আমাদের এই সমাজহীন সুসলমান সমাজ।
১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টের পর অনুশীলন সমিতির সভ্য মনিসিংহের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির অনুশীলন সমিতির সভ্যদের, যুগান্তর দলের সভ্যদের ও অন্যান্য আধাসামরিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদী গুপ্ত সশস্ত্র স্বধীনতা সংগ্রামী সদ গঠনের সভ্যদের প্রভাবে এবং অনুশীলন সমিতির সভ্য মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চত্রবর্ত্তীর নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির অনুশীলন সমিতির সভ্য, যাগান্তর দলের সভ্য ও অন্যান্য আধাসামরিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সন্ত্রসবাদী গুপ্ত সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠনের সভ্যদের প্রভাবে এবং ভারতরে জাতীয় কংগ্রেসের অনুশীলন সমিতির সভ্যদের, যুগান্তর দলের সভ্যদের ও অন্যান্য আধাসামরিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সন্ত্রসবাদী গুপ্ত সশন্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠনের সভ্যদের প্রভাবে আমরা যে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ এবং অঞ্চলভিত্তিক জাতীয়তাবাদ গড়ে তুলেছে তা কাজ করছে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমপ্রধান দেশের বিভিন্ন ভাষা-ভাষী প্রধান মুসলিমপ্রধান প্রদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে কেবল নয়, খোদ মুসলমান সমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ইসলামী সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরাভিত্তিক মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধেও। এ কারণে ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট থেকে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত খোদ পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এমএ ক্লাসে মুসলমান সমাজের ইতিহাস ঐতিহ্য ও ইসলামী সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরাভিত্তিক মুসলিম জাতিসত্তা সংশ্লিষ্ট সাহিত্য-সঙ্গীত অচ্ছ্যুৎ হওয়ার অংশ হিসেবে সাম্য ও সহাবস্থানের কবি আমাদের প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য-সঙ্গীত অবশ্য-পাঠ্য হতে পারেনি। এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে, ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট থেকে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এমএ ক্লাসে অবশ্য পাঠ্য ছিল কেবল মাত্র হিন্দু সমাজের ইতহিাস ঐতিহ্য ও হিন্দুদের ধর্মীয় সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির পরম্পরা ভিত্তিক হিন্দু জাতিসত্তা সংশ্লিষ্ট সাহিত্য-সঙ্গীত। ‘‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তেন’’ এবং ‘‘বৈষ্ণব পদাবলী” ও অবশ্যপাঠ্য ছিল। কিন্তু সাম্য ও সহাবস্থানের কবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য-সঙ্গীতও অবশ্য পাঠ্য ছিল না। অতত্রব উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে, ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট থেকে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর ভিত্তিক মুসলিম জাতিসত্তা মুছে ফেলে সে জায়গায় হিন্দু সমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও হিন্দুদের ধর্মীয় সংস্কৃতির পরস্পরা এবং হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির পরম্পরাভিত্তিক হিন্দু জাতিসত্তা ও এই হিন্দু সাংস্কৃতি জাতিসত্তা সংশ্লিষ্ট সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্প আরোপ করার হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতি একজাতিতত্ত¡ কাজ করেছিল। ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্টের পর থেকে এই পরিবেশে বড় হওয়া মুসলমান ঘরের সন্তানদের পক্ষে বর্মার (মিয়ানমারের) বৌদ্ধ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক একজাতিতত্ত¡ বুঝে ওঠা কঠিন ছিল বলে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে সেখানকার মুসলমানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার তাৎপর্য তারা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেননি। ফলে এ ব্যাপারে তাঁরা পুরোপুরিই নির্লিপ্ত ও নির্বিকার ছিলেন। ভারতের আসামে এবং অন্যান্য প্রদেশে হিন্দু সমাজের জাতীয়তাবাদী মহল কী করছেন এবং কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে কেন করছেন সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করে তাঁরা এখনো নির্বিকার এবং নিশ্চিন্ত আছেন। কারণ এ সবের তাৎপর্য উপলব্ধি করার মতো পড়াশোনা বা শিক্ষা তাঁদের নেই।
অবশ্য সমস্যাটা উপলব্ধি করতে হলে অন্তত গত তিনশ’ বছরের ইতিহাসের ধারাবাহিকতাটাও জানতে এব বোঝতে হবে। জাতীয়তাবাদ কী এবং একজাতিতত্ত¡ কী সেটাও জানতে হবে। জাতীয়তাবাদ কী এবং একজাতিতত্ত¡ কী সেটাও জানতে ও বুঝতে হবে। আমাদের স্কুলে-কলেজ-ইউনিভার্সিটির পাঠ্যতালিকার সেসব জানার এবং বোঝার কোনো সংস্থান রাখা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অতএব যাঁরা জানেন না বা বোঝেন না, তারেদরকে কোনো দোষ দেয়া যায় না।
যথার্থ মনুষ্যত্ববোধে উত্তীর্ণ মানবাধিকার কর্মী, লেখক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক-গবেষক হার্শ মেন্ডারের খুবই প্রয়োজনীয় এবং অসাধারণ একটা লেখা গত ৯ ই আগস্ট বৃহস্পতিবার ঢাকার দৈনিক কাগজ ‘‘যুগান্তর’’-এর পঞ্চম পৃষ্ঠায় ‘আসামের বিদেশি’ দের দুর্ভোগ শোনার এখনই সময়’’, এই শিরোনামে ছাপা হয়েছে। মনুষ্যত্ব বোধে উত্তীর্ণ এই মহৎ মানুষটির লেখা পড়ে জানতে পারলাম যে, আসামে ভারতের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রহীন করে দেয়ার পর গত ৯ বছর আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকেই ‘‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” বলে অভিহিত সুসলমানদেরকে ছয়টি ডিটেনশন সেন্টারে অস্বাভাবিক কষ্টকর অবস্থায় বন্দী করে রেখে দুর্বিষহ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। মানবধিকারকর্মী হার্শ মেন্ডারের ভাষায় ‘‘একেবারে ব্যক্তিগতভাবে আন্তর্জাতিক আইন, ভারতের সংবিধানের নিশ্চয়তা এবং প্রাথমিক মানবাধিকারের লঙ্গন’’ ঘটিয়ে রাষ্ট্রহীন করে দেয়া এই মুসলমানদেরকে ‘‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’’র তকমা দিয়ে মুসলমানদেরকে ‘‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’’র তকমা দিয়ে কেবলমাত্র মৃত্যুর দিন গুনতে বাধ্য করা হচ্ছে। মনুষ্যত্ববোধে উত্তীর্ণ মানবাধিকারকর্মী হার্শ মেন্ডার জানিতেছেন যে, স্বামী-পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নারীদের এক জেলে রাখা হচ্ছে। তাদের স্বামীদেরও এভাবেই রাখা হচ্ছে অন্য জেলে এবং ছয় বছরের বেশি বয়সের তাদের সন্তানদের রাখা হচ্ছে জেলের বাইরে। ‘‘তাদের একদিনের জন্যও প্যারোলে মুক্তি দেয়া হচ্ছ না, অন্য ডিটেনশন সেন্টারে আটক তাদের আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে ও সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। সারাদিন তাদের কোনো কাজ বা আনন্দ নেই এবং তাঁদের অনর্দিষ্টকালের বন্দিত্বের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য কোনো আইটি সহায়তাও নেই। আর ৩০ জুলাইয়ের এনআরসি খসড়া প্রমাণ করেছে যে, সামনের দিনগুলোতে আরো লাখ লাখ মানুষ সম্ভবত নিজেদের এমন নরক যন্ত্রণায় খুঁজে পেতে যাচ্ছেন। ‘‘....আরো বেশি ভোগান্তি ও মেরুকরণের দিকে চালিত হতে পারে। প্রতিটি চেষ্টা-প্রক্রিয়ার মূলে যদি সহানুুভ‚তি না রাখা হয় তবে চূড়ান্ত এনআরসি আরেকটি রক্তাক্ত মঞ্চ তৈরি করতে যাচ্ছে। যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ১৯৮০-এর দশকে।’’
সেই ১৯৮০-র দশকের মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনুষ্যত্ববোধে উত্তীর্ণে মানবাধিকারকামী হার্শ মেন্ডার এভাবে উল্লেখ করছেনÑ “১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাঙালি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদেশবিরোধী আন্দোলন হয় আসামে। আসাম মুভমেন্ট নামে পরিচিত আন্দোলনটি মূলত ছিল ছাত্র গ্রæপগুলো পরিচালিত। তাদের দাবি ছিলÑ অবিলম্বে সব বিদেশিকে আটক, নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া ও দেশ ছাড়া করতে হবে। আন্দেলনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে ১৯৮৩ সালে ১৮ ফেব্রæয়ারি, যখন আসামের সেন্ট্রাল নেলিয়ে জেলার গ্রামাঞ্চলজুড়ে দুই হাজারের বেশি বাঙালি মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়। এটি ছিল আধুনিক ভারতের সবচেয়ে লোমহর্ষক নরহত্যাগুলোর একটি এবং দ্য নেলিয়ে ম্যাসাকার হিসেবে পরিচিত। আজ পর্যন্ত এসব হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত এক ব্যস্তিরও বিচার করা হয়নি, শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা।”
হিন্দু জাতীয়তাবাদী সমাজের নিচে স্বধীন ভারত রাষ্ট্র এবং স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের আইন বিভাগ , বিচার বিভাগ এবং শাসন বিভাগ থাকলে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই এমনটাই হবে। আর ভারতীয় জনতা পার্টি যখন ভারতের সব প্রদেশ জাতীয় নাগরিক নিবন্ধীকরণের মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন করে “ভারতে অনভিপ্রেত” “অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” বলে অভিহিত করে ক্রমেই সারা ভারতের আরো বিপুল সংখ্যক মুসলমানকে ‘রাষ্ট্রহীন’ করে সারা ভারতব্যাপী মুসলিম নিধনযজ্ঞের, মুসলিম গণহত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করবে; তখন আর এই মর্মান্তিক সমস্যাটি কেবল তো আসামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না! পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁদের জাতীয়তাবাদী সমাজকে জানেন এবং এ বিষয়ে সঠিক ধারণা পোষণ করেন বলেই সঠিকভাবেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেটার গুরুত্ব দেয়ার মতো শিক্ষা-দীক্ষা আমাদের নেই।
এই পরিবেশ-পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে মনে আর ঈদের উৎসব পালন করার মতো আনন্দ নেই! সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই আমাদের এই সমাজহীন মুসলমান সমাজের কথা ভেবে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।