দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মোস্তফা ওয়াদুদ
একদা হাওয়া (আ.) একা একা জান্নাতে ঘুরাঘুরি করছেন। এমন সময় তিনি একটি কাঁন্নার আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ালেন। হাওয়া (আ.) দারুণ বিস্মিত হলেন। জান্নাতে তো কোনো মানুষের পদচারণা নেই। তাহলে কান্নার আওয়াজ কোথা হতে আসছে। একটু এগিয়ে দেখতে পেলেন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ফেরেশতা কাঁদছে। ফেরেশতারূপী শয়তান হাওয়াকে দেখে বলতে লাগলেন-‘আপনার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে। তাই কাঁদছি।’ হাওয়া (আ.) কারণ জানতে চাইলে শয়তান একটি ফলের গাছের দিকে ইশারা করে বললো-এ গাছের ফল যে ভক্ষণ করবে সে কখনো জান্নাত হতে বের হবে না। সে আমরণ জান্নাতে থাকতে পারবে। শয়তান মিথ্যা কথা বলে হাওয়া (আ.)কে প্ররোচনা দিতে লাগলো। হাওয়া (আ.) বললেন আমি আমার প্রভুর নির্দেশ কিছুতেই অমান্য করতে পারবো না। শয়তান আবারো তাকে এ ফলের মিথ্যা গুণাগুণ করতে লাগলো। দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ এ নিয়ে বাকবিত-া হলো। হাওয়া (আ.) বলেন খাবো না। আর শয়তান বললো আপনার ভালোর জন্যই ফলটি খেতে বলেছি। এভাবে জেরা চলছিলো। দুজনের জেরার একটি সময় এসে হাওয়া (আ.) শয়তানেরর প্ররোচনায় পড়ে গেলেন। হাওয়া (আ.) এ নিষিদ্ধ ফল খেয়ে নিলেন। পরে কৌশলে শয়তান বিবি হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে আদম (আ.)-এর অজান্তে এ নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করিয়ে দিলেন। যার আলোচনা কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে।
‘অতঃপর শয়তান তাদের উভয়ের অন্তরে কুমন্ত্রণা প্রদান করলো। যাতে তাদের সতর যা গোপন ছিলো তা তাদের সম্মুখে উন্মোচিত করে দেয়। আর শয়তান বললো, তোমাদের প্রতিপালক যে তোমাদেরকে এ বৃক্ষ হতে বারণ করেছেন। তা শুধু এজন্য যে, তোমরা যাতে ফেরেশতা হয়ে যাও। কিংবা অনন্ত জীবন লাভ করো। সে নানারকম শপথ করে বললো, আমি তোমাদের হিতাকাক্সক্ষী হয়ে ভালো উপদেশ দিচ্ছি। অতঃপর সে তাদেরকে ধোঁকায় নিপতিত করলো। যখন তারা নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করে নিলো। তখন তাদের গুপ্তাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে পড়লো। অতঃপর তারা লজ্জিত হয়ে জান্নাতের পাতা দিয়ে তাদের লজ্জাস্থান ঢাকতে লাগলেন। এরপর তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এই বৃক্ষ হতে বারণ করিনি? আর আমি কি বলিনি যে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আরাফ : ২০,২১)
যখন তারা নিষিদ্ধ ফল খেয়ে নিলেন তখন আল্লাহ তায়ালা হাওয়া (আ.) ও আদম (আ.)কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন। বললেন এ মুহূর্তে তোমরা জান্নাতে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছো। সুতরাং তোমরা পৃথিবী হতে কষ্ট সাধনা করে আমার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পুনরায় জান্নাতে ফিরে আসবে। এ সময় মা হাওয়া (আ.) দুনিয়ার পশ্চিম গোলার্ধে জেদ্দা শহরে অবতরণ করলেন। আর আদম (আ.) পূর্ব গোলার্ধে শ্রীলংকার সন্দীপে। তারপর কয়েক শত বছর পর তারা একত্রিত হয়েছিলেন। এরপর তারা উভয়ে দুনিয়া আবাদ করতে লাগলেন। আল্লাহর নির্দেশে সপ্তম আকাশে অবস্থিত বায়তুল মামুরের নীচে মক্কায় বাইতুল্লাহ শরীফ নির্মাণ করলেন। পৃথিবীতে তাদের মাধ্যমে মানব জন্মের সূচনা করলেন।
হযরত আদম (আ.)-এর ঔরসে মা হাওয়া (আ.)-এর গর্ভে মোট ২৩৯ জন মতান্তরে ৩৬১ জন সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তন্মধ্যে হযরত শীষ (আ.) ছাড়া বাকি সবাই জোড়া জোড়া জন্ম হয়েছিলেন। আর বিধান ছিলো এক জোড়ার সহোদর ভাই অপর জোড়ার ভগ্নির সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। কিন্তু একই জোড়ার পরস্পর ভাই-বোনদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ ছিলো। মা হাওয়া সবসময় আদিপিতা আদম (আ.)-এর সাথে সাথেই থাকতেন। আদমের প্রতি যেসব বিধানাবলী আসতো তা সর্বপ্রথম পালনকারী ছিলেন মা হাওয়া (আ.)। আদম (আ.) আল্লাহর নবী ছিলেন। তাই মা হাওয়া আদম (আ.)কে সেভাবে মেনেছেন যেভাবে স্বামী হিসেবে মেনেছেন। হযরত আদম (আ.)-এর মৃত্যুর এক বছর পর মা হাওয়া ইন্তেকাল করেন। সে হিসেবে মা হাওয়া (আ.) এর বয়স হয়েছিলো ৯৬১ বছর। তবে সঠিক বয়সের ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।