Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দা-ছুরি চাপাতির বাজার জমজমাট

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৫৯ এএম

এক সপ্তাহ পরে পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যে পশুর হাটের মতো জমে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের দা-ছুরি চাপাতির বাজার। কামারপাড়ার উত্তপ্ত লোহা পেটানোর শব্দই জানান দিচ্ছে কুরবানির আগমনী বার্তা। সারা বছর কামারীরা অলস সময় কাটালেও কুরবানির আগে তাদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। এ সময় আয়ও বেড়েছে অনেক। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত এমন ব্যস্ততা থাকবে। গত কয়েকদিন রাজধানীর কামারপাড়াগুলো ঘুরে কামারীদের এমন ব্যস্ততা চোখে পড়েছে।

ঢাকা মহানগরীর কারওয়ান বাজার, ওয়ারীর বনগ্রাম, নবাবপুর, হাসানবাদ, কামরাঙ্গীরচর, বাদামতলী, মোহাম্মদপুর ও মুগদা বাজারের বিভিন্ন কামারপট্টি ঘুরে দেখা গেছে দা-বঁটি চাপাতি বানানো ও শাণ দেয়ার কাজ। কামারিরা জানান, কয়েকদিন ধরে নতুন অর্ডার আসতে শুরু করেছে। তবে পট্টিগুলোতে নিজেদের উদ্যোগে পুরোধমে কাজ চলছে। নতুন অর্ডার ছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদার আলোকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন দোকানিরা। বিদেশ থেকেও দেশীয় উপযোগী অনেক পণ্য এনেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এখন ব্যস্ততা কম থাকলেও কয়েকদিন পরে বেড়ে যাবে। তখন দম ফেলার সময় থাকবে না। তখন রাত-দিন কাজ করে ক্রেতাদের হাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি তুলে দিতে হয়।
গতকাল সরেজমিনে কারওয়ান বাজার কামারপট্টির দিকে যেতেই কানে ভেসে আসে লোহা পেটানোর টুংটাং আওয়াজ। দোকানের সামনে গিয়ে দেখা গেলো সামনাসামনি বসে সমানতালে তাতাল লোহা পেটাচ্ছেন দু’জন কামার। একজন হ্যামার দিয়ে পিটিয়ে পাতলা করছেন অন্যজন হাতুড়ি পণ্যের আকৃতি দিচ্ছেন। কয়েকটি দোকানে হাতে টানা ‘হপার’ (বাতাশ বের হওয়ার যন্ত্র) দেখা গেলেও বেশিরভাগ দোকানে ছিল মোটরের তৈরি বিশেষ মেশিন বা হপার। কামাররা এর নাম দিয়েছেন ‘বুলার’। একটি মোটা পাইপের মধ্য দিয়ে বিরামহীনভাবে বাতাস প্রবেশ করছে কয়লার আগুনে। সেখানে লোহার মোটা মোটা পাত পুড়িয়ে লাল করে বানানো হচ্ছে দরকারি যন্ত্র। টিনের চিমনি বেয়ে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে যাচ্ছে বাইরের দিকে। কাজের সময় প্রচন্ড গরম লাগলেও ফ্যান চালাতে পারছিলেন না তারা। দেখা গেল- লোহা পুড়ে লাল হতেই সাঁড়াশি দিয়ে টেনে বের করে মোটা লোহার (রেল লাইনের কাটা অংশ) ওপরে রেখে উত্তপ্ত লোহা খন্ডটিকে হ্যামার ও হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে বঁটি, চাপাতি, ছুরিসহ নানা আকার দিচ্ছেন কামারীরা। প্রতিটি দোকানি হাঁক দিয়ে ডেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন।
এক দোকানি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অনেকে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে গেছেন। বেশিরভাগ ক্রেতা দা, ছুরি, বঁটি, ধামা, চাপাতি, কুড়াল কেনা এবং নতুন অর্ডার দেওয়ার পাশাপাশি পুরনো যন্ত্রপাতি শাণ দিতে এনেছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে- গরু জবেহ করার বড় ছুরির দাম ১ হাজার থেকে থেকে ৩ হাজার টাকা। মাংস কাটার ছোট ছুরি ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। হাড় কাটার দেশি চাপাতি বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। মান ভেদে প্রতি কেজির দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। বিদেশি চাপাতি ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বঁটি প্রতিটি ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকা। হাড় কাটার ছোট চাইনিজ কুড়াল ৫০০ থেকে ১২শ’ টাকা। চামড়া ছড়ানোর চাকু প্রতিটি ৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের রফিক এন্টার প্রাইজের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পরিচিত অনেক কাস্টোমার ঝামেলা এড়াতে ঈদের সপ্তাহখানেক আগেই দা, বঁটি, ছুরি বানানোর অর্ডার দিয়ে গেছেন। নতুন সরঞ্জামের চেয়ে পুরনোগুলো শাণ দেয়ার পরিমাণ বেশি। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ব্যস্ততা থাকবে।
কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, বছরের ১১ মাসই তাদের বসে থাকতে হয়। অন্য সময় কাজের চাপ খুব কম থাকে। যার কারণে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। অনেকে বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করে নতুন পেশা গ্রহন করেছে। তারা এই পেশায় সরকারকে দৃষ্টি দেওয়াসহ ব্যাংকগুলোর কাছে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার দাবি জানান।
দা-ছুরি কিনতে আসা মহাখালীর রবিউল আওয়াল জানান, ঈদের বেশি বাকি নেই। কয়েকদিন জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে যাবে। এ ছাড়া তখন কামারীদের ব্যস্ততা বেশি থাকবে বলে ভালো পণ্য পাওয়া নিয়েও শঙ্কা থেকে যাবে।
শান দিতে আসা ধানমন্ডির ব্যবসায়ী হাসান ইকবাল ইনকিলাবকে জানান, গতবছরের দা-ছুরিগুলো শান দিতে এসেছি। এ ছাড়া কয়েকটি নতুন ছোরা, একটি চাপাতি ও একটি চাইনিজ কুড়াল কিনেছি। তিনি বলেন, আগের তুলনায় দাম বেশি। কোন কোন পণ্যে এক থেকে দেড়গুন দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর অন্যান্য দ্রব্যাদির মতো এই পেশার কাঁচামালের দাম বাড়ছে। এছাড়া ব্যবসাটি মৌসুমভিত্তিক হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।
এদিকে, কামার পট্টির পাশেই মাংস কাটার জন্য ‘গাছের গুঁড়ি’ ও পাটি বিক্রি করতে দেখা গেছে। গাছের ধরণ ও আকারভেদে প্রতিটি গুড়ি ৩০০ থেকে এক চার হাজার টাকা এবং আকারভেদে বিভিন্ন ধরণের পাটি ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ