Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ঈদে বাড়বে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখে আসছে বৃহস্পতিবার থেকেই ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় দেখা যাবে সড়ক ও নৌপথে। কিন্তু দেশের প্রধান দুটিসহ সবগুলো ফেরি সেক্টরেই বেহল দশা। বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় গভীরতা সঙ্কটে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে ফেরি চলাচল প্রায় বন্ধ।
গতকাল সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ফেরিতে যানবাহন পারাপার ৭ হাজারের নিচে নেমে গেছে। অপক্ষেমান ছিল প্রায় দেড় হাজার যানবাহন। এর মধ্যে হাজারের বেশি যানবাহন মাওয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। ইতোমধ্যে মাওয়ায় রো-রো এবং ডাম্ব ফেরিসহ কে-টাইপ ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিআইডব্লিউটিসি মাওয়ার পরিবর্তে আরিচায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট দিয়ে যানবাহন পারাপারের পরামর্শ দিয়েছে। গতকাল সকালে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় অপেক্ষমান ছিল ৫ শতাধিক যানবাহন। অপরদিকে ঈদ উল আজহার আগে ও পরে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মরত লোকজনের নির্বিঘ্ন যাতায়াতে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে বিআইডব্লিউটিসি’র বিরুদ্ধে।
ইতোমধ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া থেকে ৪টি রো-রো এবং একটি কে-টাইপ ফেরি আরিচায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব ফেরি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে যানবাহন পারপার করবে। কিন্তু পদ্মার দুই তীরে অতিরিক্ত ফেরি পরিচালনা করার মত ঘাটের অভাব রয়েছে। ফলে অতিরিক্ত ফেরি পরিচালন কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
বিআইডবিøউটিএ মাওয়ায় পদ্মার লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ড্রেজিং শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ পুরো ড্রেজিংয়ের দু’টি ইউনিট মাওয়ায় অবস্থান করছে। আজ সকালের মধ্যে ফেরি পারাপার নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও তার অধিনস্ত সংস্থাগুলো। বিভিন্ন ধরনের ৭টি ড্রেজার মাওয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। আর আজ সকাে ল থেকেই ফেরি পারাপারে উন্নতি ঘটবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
এবার বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার পাশাপাশি সীমান্তের ওপারে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে অসময়ে পদ্মায় দ্রুত পানি হ্রাস পেতে থাকে। ফলে মাওয়ার লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে পদ্মার গভীরতা কমে যাওয়ায় ৩৫ লাখ কিউবিক মিটার পলি অপসারনের কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
প্রায় ৫ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারনের মধ্যেই উজানের বালু মিশ্রিত আকস্মিক ঢলে পুরো এলাকা সয়লাব হয়ে পদ্মার তলদেশ আবার ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলে প্রায় দেড়শ মিটার এলাকায় গভীরতা ৫ থেকে ৭ ফুটেরও নিচে নেমে আসায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত শনি ও রোববার দুই দফায় কাঠালবাড়ী-শিমুলিয়া রুটে কয়েক দফায় একাধিক ফেরি ডুবো চরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিল। এতে মাওয়ায় মধ্যম মানের ফেরির সাহায্যে অ্যাম্বুলেন্সসহ হালকা যানবাহন পারাপার চালু রয়েছে।
আর এ অবস্থাতেই বিআইডব্লিউটিএ জরুরি ভিত্তিতে নৌ চ্যানেলটি নতুন করে ড্রেজিং করার সিদ্ধন্ত নিয়েছে। গতকাল সকালে ৭টি ড্রেজার জড়ো করা হলেও পদ্মার গভীরতা এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যে, প্রয়োজনীয় স্থানে ড্রেজার নিয়ে যাওয়া সম্ভবই হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং ইউনিটের প্রধান প্রকৌশলীসহ অপরাপর প্রকৌশলীদের মতে, লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে সাড়ে ৩ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ করতে হবে। তবে আগে দেড় লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ করে অতিরিক্ত আড়াই লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং করলেই পুরো চ্যানেলটি সব ধরনের ফেরি চলাচলের জন্য আপতত উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।
আজ সকালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে দেড় লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ সম্পন্ন করে পরবর্তী ২ লাখ ঘন মিটার অপসারনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে ড্রেজিং বিভাগ। আজ সকালেই কে-টাইপ ফেরি চলাচলের জন্য চ্যনেল উন্মুক্ত করাসহ আগামীকালের মধ্যে সব ধরনের ফেরি চলাচলের জন্য চ্যানেল উন্মূক্ত করা সম্ভব হবে।
এদিকে দেশের অন্যত্র ফেরি সেক্টরে সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে। প্রায় সর্বত্রই পারপারের জন্য যানবাহন অপেক্ষমান রয়েছে। মূলত ফেরি সঙ্কটই এর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শরিয়তপুর-চাঁদপুর রুটে দুটি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে ১৬৫ টি যানবাহন পরাপার করা হয়। ওই সময়ে উভয় দিকে অপেক্ষমান ছিল প্রায় ১৮০ টি যানবাহন।
সবচেয়ে দীর্ঘ পথের ভোলা-লক্ষীপুর রুটে ৩টি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে ১৩৫ টি যানবাহর পারাপার করা হলেও অপক্ষেমান ছিল আরো ১২০টি। ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী লাহারহাট-ভেদুরিযা রুটে ৩টি ইউটিলিটি ফেরির সাহায্যে ২৮১টি যানবাহন পারাপারের পর অপেক্ষমান ছিল আরো ১৮০টিরও বেশি।
এদিকে ঈদের আগে ও পরে নৌপথে নিরাপদ যাতায়াতে বিআইডবিøউটিসি’র উদাসীনতায় ক্ষুদ্ধ সাধারণ যাত্রীরা। পর্যাপ্ত নৌযান থাকলেও সংস্থাটি ঈদের আগে ১৬ আগষ্ট একটি বিশেষ ট্রিপ ছাড়াও ১৭ ও ২০ আগষ্ট দুটি বিশেষ ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করার কথা জানিয়েছে। এরমধ্যে ১৭ আগষ্ট সংস্থাটি নিয়মিত ট্রিপ বন্ধ থাকার স্থলে একটি নৌযান চালাবে। আর ১৮ ও ১৯ আগষ্ট ঘরে ফেরা মানুষের অতিরিক্ত চাপের সময় সংস্থাটির কোন নৌযান থাকছে না।
এমনকি ঈদ পরবর্তী শনিবার কর্মস্থলে ফেরার দিন সংস্থাটি তার নিয়মিত ট্রিপে মোড়েলগঞ্জের পরিবর্তে হুলারহাট থেকে একটি ছোট আকারের নৌযানকে বরিশাল-চাঁদপুর হয়ে ঢাকায় পাঠাচ্ছে। পরদিন রোববার নিয়মিত ট্রিপে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে একটি কথিত বিশেষ সার্ভিস মোড়েলগঞ্জের পরিবর্তে পিরোজপুরের হুলারহাট থেকে ঢাকায় পাঠিয়েই সব দায় শেষ করছে বিআইডব্লিউটিসি।
বিগত বছরগুলোর মত এবারও ঈদের আগে ও পরে সারা দেশ থেকে কমপক্ষে দশ লাখ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করবেন। কিন্তু বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যাত্রীদের সুবিধা না দেখার অভিযোগের আঙুল উঠেছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল সংস্থার পরিচালক-বাণিজ্য ও জিএম-বাণিজ্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ