Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাস্টার্সের সমমান পেল দাওরায়ে হাদিসের সনদ

মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সাধারণ শিক্ষার মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান স্বীকৃতি দিয়ে আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওয়ায়ে হাদিস (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আগে থেকেই হয়ে (কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে) আসছে, সেটাকে আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসা হচ্ছে। সারা দেশে ছয়টি বোর্ড কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এদেরকে নিয়ে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড করা হবে। এর নাম হবে আলহাইয়্যাতুল উলিয়ালিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ আর কার্যালয় হবে ঢাকায়। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিগুলোকে ভিত্তি করে সমমান দেয়া হয়েছে। মূলত এই সংক্রান্ত কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমর্যাদা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে নতুন আইন পাস হওয়ার আগেই গত মার্চে ১০১০ জন কওমি আলেমকে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া বৈঠকে মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৮ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদসহ কয়েকশ আলেমের উপস্থিতিতে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে কওমির সনদকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণাকে হেফাজতে ইসলামের মত ইসলামী দলগুলোর কাছে নতি স্বীকার হিসেবে দেখিয়ে বিভিন্ন বাম সংগঠন এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ সে সময় এর সমালোচনা করে। কওমির স্বীকৃতিতে বাংলাদেশে জঙ্গিরা জেঁকে বসতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়। দেশের প্রায় ৭৫ হাজার কওমি মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর ১৪ লাখ শিক্ষার্থী বের হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেই সময় বলেন, তাদের জীবনটা কি আমরা ভাসিয়ে দেব? তারা কি এদেশের নাগরিক না? তারা কি এদেশের মানুষ না? তাদের জীবনের কি কোনো মূল্য নাই? তাদের কি আমরা অন্ধকারে ঠেলে দেব? তাদের কি আমরা আলোর পথ দেখাব না? ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল গঠিত ওই কমিটিকে এখন এ আইনে আনা হচ্ছে জানিয়ে শফিউল বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে, কমিটিতে নয় ধরনের ব্যক্তি থাকবেন।
বেফাকুল মাদ্রারিসিল আরাবিয়ার সভাপতি কমিটির চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিলের সিনিয়র সহ-সভাপতি, কো-চেয়ারম্যান এবং বেফাকুল মাদ্রারিসিল আবারিয়া বা এর মহাসচিব মনোনীত আরও পাঁচজন সদস্য থাকবেন কমিটিতে। এছাড়া গওহরডাঙ্গার বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া, চট্টগ্রামের আন্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, বগুড়ার আযাদদ্বীনি এদারায়ে তালিম, বগুড়ার তানজীমুল মাদারিসিল কওমিয়া এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দুইজন করে সদস্য কমিটিতে আসবেন। চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে যে কাউকে কমিটিতে যোগ করে নিতে পারবেন, তবে সব মিলিয়ে তা ১৫ জনের বেশি হবে না। কমিটি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে’ থাকবে।
শফিউল বলেন,২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটাকে এখন আইনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হচ্ছে। ওই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে সনদকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত যত সনদ দেওয়া হয়েছে তা এ আইন অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
তিনি বলেন, বোর্ড কমিটি সনদ নিয়ে যাবতীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওয়ায়ে হাদিসের সনদ ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবির মাস্টার্স সনদের সমমান বিবেচিত হবে। এই কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানের দওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হবে। সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল ও সনদ তৈরিসহ অন্যান্য কাজে এক বা একাধিক কমিটি করা যাবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন ছাড়া মাস্টার্স ডিগ্রি কীভাবে দেওয়া হবে- এ প্রশ্নে শফিউল বলেন, এটা একটি ব্যতিক্রমী বিষয়। এটা হল মূলত কওমি মাদ্রাসায় প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে তাদেরকে মূল ধারায় নিয়ে আসা। সরকারের এই কাঠামোতে নিয়ে আসতে এটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।



 

Show all comments
  • মুহিববুল্লাহ ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ৭:০৬ এএম says : 0
    এটা সরকারের যুগন্তকারী সিদ্ধান্ত হিসাবে বিবেচিত হবে ৷
    Total Reply(0) Reply
  • Shahin ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৬:২৪ পিএম says : 0
    চাকরির ক্ষেতে তাদের কি হবে? তারা কোন কোন চাকরিতে আবেদন করতে পারবে? নাকি এই সার্টিফিকেট দিয়ে কিছুই করা যাবেনা? কেউ জানলে আমাকে ইমেইল অথবা কল করে জানান
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মন্ত্রিসভা

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ