Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সজীব ওয়াজেদের বক্তব্য পুলিশি নির্যাতনকে উৎসাহিত করবে

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য খুবই অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ফেইসবুকে দেয়া জয়ের বক্তব্য পুলিশী নির্যাতনকে আরও উৎসাহিত করবে। গতকাল (শনিবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
শহিদুল আলমকে নিয়ে শুক্রবার নিজের ফেইসবুক পেজে সজীব ওয়াজেদ জয় লেখেন “শুধুমাত্র সফল ও জনপ্রিয় হওয়ার জন্যই কি আজ শহিদুল আলমকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখার কথা বলা হচ্ছে? তাহলে কি আমিসহ সকল সফল ও জনপ্রিয় মানুষই আইনের ঊর্ধ্বে? জয়ের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, কাটছাঁটের পরেও বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও বন্দি অবস্থায় শারীরিক নির্যাতন না করার যে বিধান আছে সেটিকে অগ্রাহ্য করলেন তিনি। পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনের পক্ষে কথা বলে সংবিধান ও উচ্চ আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করলেন জয় সাহেব। উচ্চ আদালতেও এই ব্যাপারে নির্দেশনা আছে।
তিনি বলেন, একদিকে শহীদুল আলমের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের সশস্ত্র হামলার দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে হামলায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন সাংবাদিকরা। এখনো কেন সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী চিহ্নিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হল না তার জবাব কি সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেব দেবেন? শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর চিহ্নিত হামলাকারীরা আইনের ঊর্ধ্বে না নিচে বাস করেন তা জানাবেন কি তিনি?
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই ধারা প্রয়োগ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। লেখক, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট, রাইটস গ্রুপ, মুক্ত চিন্তার মানুষের মাথার উপরে ৫৭ ধারার তরবারি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই কালো আইনের ৫৭ ধারার নির্মম প্রয়োগে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে শহিদুল আলমকে। নির্দয় উৎপীড়নের রক্তে ভিজে গেছে তার পরিধেয় বস্ত্র। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা দেশবাসীকে জানাবেন কি কতটুকু আইনের ঊর্ধ্বে উঠলে একজন খ্যাতিমান মানুষ পুলিশী শারীরিক নির্যাতন থেকে রেহাই পান বা পান না?
পরিবহনের নৈরাজ্য এখনো যায়নি দাবি করে রিজভী বলেন, আন্দোলন দমানোর নামে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন বেপরোয়া চালকদের আরও বেশি বেপরোয়া করেছে। সড়কে নৈরাজ্য ও ভোগান্তি আরও বেড়েছে। কারণ পরিবহন সেক্টারে হঠকারী ও অবমৃশ্যকারিতার জনক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। এখনো নির্লজ্জ দাপট তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন।
সড়কে নৈরাজ্যের জন্য দায়ী সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। টাকার বিনিময় লাইসেন্স দেওয়া, আনফিট গাড়িকে ছাড়পত্র দেওয়া, রাস্তাঘাটের ভয়াবহ দুদর্শা, রাস্তা মেরামতে লুটপাটের কাজ না হওয়া ইত্যাদি সর্বব্যাপী দুর্নীতির জন্য দায়ী সেতু মন্ত্রণালয় ও সরকার। সড়কের অবস্থাপনার জন্যে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ছুটছে ট্রেনে। সেতুমন্ত্রী যদি সফলই হতেন তাহলে মানুষ ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে কেন? সড়ক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ মন্ত্রীর নাম ওবায়দুল কাদের। পরিবহন সেক্টারের সকল দুষ্কর্মকে বৈধতা দানের ফেরিওয়ালা হচ্ছেন তিনি।
স্বচছ মন নিয়ে আলোচনায় আসুন: সরকারকে স্বচ্ছ মন নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শুন্য টেবিলে তো আর আলোচনা হয়না। আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু থাকতে হবে। অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তারা যদি এটা না চায় তাহলে বুঝতে হবে তাদের মন স্বচ্ছ না। তাদের মন সাদা নয়, অফ হেয়াইট (ধূসর)। এর আগে একই দিন সকালে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন নির্বাচন প্রসঙ্গে পূর্ব শর্ত দিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়, শর্ত ছাড়া যে কোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
রিজভী বলেন, কোনো এজেন্ডা ছাড়া কোনো আলোচনা নয়, একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও অংশগ্রহণম‚লক নির্বাচন নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে আলোচনা হওয়া দরকার সে আলোচনার জন্য তো আমাদের দল সব সময় প্রস্তুত। আর এ ধরনের সংলাপের ডাক তো বিএনপি সব সময়ই দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী করে রাখবেন আর নির্বাচনের কথা বলবেন সেটা কিভাবে হয়। নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ এই কমিশন নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।###



 

Show all comments
  • রিয়াজ ১২ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৩৫ এএম says : 0
    আমারও সেরকমই মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ