মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইফতেখার আহমেদ টিপু
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ঘটনা দেশের ভূ-প্রকৃতিতে যেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে তেমনি ভবিষ্যতে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। পাঁচ দশক আগে বাংলাদেশের মানুষের সুপেয় পানির প্রধান উৎস ছিল ভূপৃষ্ঠ অর্থাৎ পুকুর, নদী-খাল, বৃষ্টি আর জমিয়ে রাখা পানি। কৃষিকাজের জন্য দেশে প্রথম ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয় সত্তর দশকের শুরুতে। গত চার দশকে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে স্পুটনিক গতিতে। এখন শুধু কৃষিকাজ নয়, খাবার পানি, রান্না, গোসল, সেচ, এমনকি দৈনন্দিন কাজেও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষ। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানি কতটা নিরাপদ তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এক সময় খাবার পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেলে তা ভূমিধসসহ নানা বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেবে। এ আশঙ্কা ঠেকাতে তারা ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে উপরিভাগের পানি ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দুই থেকে তিন মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূগর্ভের পানির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা না হলে আগামী পাঁচ বছর পর আরও আশঙ্কাজনকহারে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। পাশাপাশি বাড়বে আর্সেনিকের আগ্রাসনও।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইড বাংলাদেশের এক জরিপে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ সুপেয় পানির উৎস থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া পানিতে আর্সেনিক দূষণের জন্য প্রায় ৩ কোটি মানুষ ঝুঁকিতে আছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যেসব এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সুপেয় পানির উৎস ছিল অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে সে জায়গাগুলোতে তীব্র পানি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়মিত জরিপে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আর স্বাভাবিক উচ্চতায় উঠে আসছে না। বিশেষ করে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের পানির স্তর প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। সেখানে বিগত ৩০ বছরে বার্ষিক গড় ১.৪% হারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আর এর মধ্যে রাজশাহীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নিচে নেমেছে। তাদের মতে এটি রোধ করার জন্য ব্যবহারকারীদের পানির অপচয় ও দূষণ রোধ করতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, ক্রমাগত পানি উত্তোলনের কারণে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বঙ্গোপসাগরের লোনা পানি দ্রুতগতিতে উত্তর দিকে প্রবেশ করে পানি লবণাক্ত হয়ে পড়তে পারে। ফলে আগামী এক থেকে দেড় দশকে রাজধানী ও তার আশপাশে সুপেয় পানির তীব্র সংকট তৈরি হবে। ইতিমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় কোটি মানুষ ভূগর্ভে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য হুমকিতে আছেন।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৫০ কোটি লিটার। কিন্তু সরবরাহ করা হয় ২০০ থেকে ২০৫ কোটি লিটার। অর্থাৎ প্রায় ৪৫-৫০ কোটি লিটার ঘাটতি থেকে যায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে জানা যায়, ঢাকায় গত এক দশকে আড়াই মিটার হারে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। মূলত ওয়াসার ৮৬ শতাংশ পানি আসে ভূগর্ভ থেকে। বাকি ১৪ শতাংশ আসে নদীর পানি শোধন করে। কিন্তু যেভাবে নদ-নদীগুলোর পানি দূষণ বাড়ছে তাতে এ পানিও পান অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। আর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপগুলোরও উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক নিয়মে ভূগর্ভস্থ পানির যে স্তর খালি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ঢাকাসহ আরও কিছু এলাকায় তা হচ্ছে না। এ বিপদ ঠেকাতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো শুধু নয়, তা সুসংরক্ষণেও নজর দিতে হবে। নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় খনন করে এসব জলাশয়ের ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। পানি যাতে দূষিত না হয় সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার। পানির অপর নাম যেহেতু জীবন, সেহেতু পানির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।