Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আতঙ্ক কাটছে না

বিশেষ অভিযান শিক্ষার্থীদের ওপরে আগ্রাসন : রিজভী

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ব্লকরেইড ও বিশেষ অভিযানে উদ্বেগ বেশি
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও গ্রেফতার আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। আন্দোলনে অংশ নেওয়া ও সংহতি প্রকাশকারী স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের বøকরেড ও অঘোষিত বিশেষ অভিযানের কারণে এ আতঙ্ক দিন দিন আরও বাড়ছে। ইতোপূর্বে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের নানা উদ্যোগের ফলেও ক্লাসে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকার একদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে ছাত্রদের ক্লাসে উপস্থিত হতে বলছে; অন্যদিকে রাতের অন্ধকারে বøকরেড চালিয়ে তাদের আবার গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এমন দ্বিমুখী আচরণের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কিত হয়ে গ্রেফতারের ভয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে।
রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অভিযোগে জানান, ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় পুলিশ র‌্যাবের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও তাদের কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগে অনেকগুলো মামলা করে। এসব মামলায় দেড় হাজারের বেশি লোককে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। ভাংচুরের অভিযোগে এইসব মামলা করা হলেও গণমাধ্যমে দৃশ্যমান অস্ত্রধারী ও হেলমেট পরিহিত মূল অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বরং আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আটক করে ওইসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া অভিযানগুলোতে এই যাবত যাদের আটক ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
অভিভাবকদের অভিযোগ, একদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অঘোষিতভাবে বøকরেড ও বিশেষ অভিযানে আতঙ্ক আড়ও বাড়ছে। তারা অভিযোগ করেন, বুধবার রাতব্যাপী বসুন্ধারা আবাসিক এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের বøক রেড ও বিশেষ অভিযানের কারণে সন্তানদের পাশপাশি তারাও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। সারা রাত না ঘুমিয়ে সন্তানদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভয় দেখিয়ে সরকার আসলে কি বার্তা দিতে চাচ্ছে সেটি বোধগম্য নয়।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক অভিভাবক বলেন, কয়েকদিন ধরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যুষিত এলাকায় বøক রেড ও বিশেষ অভিযান চালানোর কারণে তার সন্তাকে ঘরের বাইরে যেতে দিতে সাহস পাচ্ছেন না। তিনি এ ধরণের অঘোষিত অভিযান বন্ধসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের আটক ও হয়রানি না করতে সরকারকে অনুরোধ জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বসুন্ধরা এবং বাড্ডা এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে ২২ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় দিন ধরে চলা আন্দোলনের সময় সংঘটিত নানা ঘটনায় ঢাকার ১৬টি থানায় ৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৫১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও নড়াইলে ২ মামলায় ১০ জন ও পটুয়াখালীর একটি মামলায় এক শিক্ষিকাকে আটকের বিষয়টি জানা গেছে। এর মধ্যে গত বুধবার রাতে উস্কানির অভিযোগে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জুম বাংলার সিইও ইউসুফ চৌধুরী (৪০) ও বুয়েটের ছাত্র দাইয়ান আলমকে (২২) গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগ।
আতঙ্কের বিষয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের (এখানে স্কুল শাখা আছে) অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এ স্কুলে একদিন না গেলেই ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। একটানা তিন দিন অনুপস্থিত থাকলে ভর্তি বাতিল করে দেয়। যার কারণে শত আতঙ্কের মধ্যেই ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে উপায় নেই। রাজধানীর প্রথম সারির কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না। যে সব অভিভাবকরা সাহস করে পাঠাচ্ছেন তারাও সন্তান ঘরে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে থাকেন বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জানান, একটি আন্দোলনের কারণে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তবে আগের তুলনায় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ক্রমন্বায়ে বাড়ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ উপস্থিতি শতভাগে উন্নীত হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। এদিকে গতকাল সকালে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অজানা আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁর দাবি, অরাজনৈতিক ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর জন্যই পুলিশ বুধবার সারা রাত বসুন্ধরাসহ আশপাশের এলাকায় বøকরেড চালিয়ে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করে। রিজভী বলেন, এ পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের আটকের পর কোমরে দড়ি বেঁধে রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি এই অভিযানকে সরাসরি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরণের নির্মম আগ্রাসন বলে দাবি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ