Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক পরিবহন আইন শুভঙ্করের ফাঁকি

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নিরাপদ সড়ক আইন-২০১৮তে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে সোমবার তড়িঘড়ি করে মন্ত্রীপরিষদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে দুর্বৃত্ত ও গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে। এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। যদিও এ আইন আদৌ সংসদে পাস হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। এ আইন নিরাপদ সড়কের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ আইন গণপরিবহনে নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আসবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর অবিরাম হামলা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগ সশস্ত্র অবস্থায় হামলা করেছে তা দেখে দেশের মানুষ হতভম্ব। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর ও নিষ্ঠুর হামলায় ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসহ সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় বইছে। পুলিশ হলো আইনের রক্ষক, তাদের পাশে এসব অস্ত্রধারীরা। পুলিশ অস্ত্রধারীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এমন দৃশ্য কি কোন স্বাধীন দেশে চিন্তা করা যায়? এটা ভোটারবিহীন ও জবাবদিহী হানাদার সরকারের চরম নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত হলো শেখ হাসিনার হাত। শেখ হাসিনা তাঁর গুন্ডাবাহিনীকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছেন মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন “নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে । তিনি বলেন, আমি এখন শঙ্কিত এসব স্কুল ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের উপর প্রচ্ছন্ন হুমকি। গত সোমবার দেশবাসী শেখ হাসিনার সোনার ছেলেদের সশস্ত্র আক্রমণ প্রমাণ করে দিয়েছে তাঁর নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করা হয়েছে। রামপুরায় ইষ্ট ওয়েষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বসুন্ধরায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশের সহযোগিতায় সরকারি দলের হামলাকারীদের হিংস্রতা তীব্র রুপ ধারণ করেছে। এর আগে ধানমন্ডিতে পুলিশ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আর কোন বাবা মায়ের কোল খালি হোক আমি চাইনা”। তাঁর এ বক্তব্যও মানুষের মনে আতঙ্ক ধরিয়েছে। প্রতিনিয়ত মায়ের কোল খালি হচ্ছে গুম, খুন ও বিচারবর্হিভ‚ত হত্যার মাধ্যমে। অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার জন্যই এ সর্বনাশা সহিংস নীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করছে সরকার।
পুলিশের সাথে অস্ত্রধারী কারা এমন প্রশ্ন তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিডিআর গেটে হামলা, সেখানে গুলি বর্ষণ হচ্ছে, এই অস্ত্রটা কোথা-থেকে আসল? কারা গুলি করল? পুলিশ যে অস্ত্রধারীদের পাহারা দিয়ে ছাত্রদের দিকে গুলি করাচ্ছে, লাঠি পেটা করাচ্ছে তারা কি বিরোধী দলের লোক হতে পারে? এটা কি পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। পুলিশ আর ছাত্রলীগ-যুবলীগ একাকার। এটা দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ওঠেছে, আর মিথ্যাচার করে তাদের রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন। মনে রাখবেন দেশ-বিদেশের মানুষ ও গণমাধ্যমের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়নি। অস্ত্রধারী ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের নাম ধরে ধরে ছবি প্রকাশ হয়েছে। সুতরাং ছাত্রলীগের হাতে কিভাবে এ অস্ত্র আসল, কিভাবে তারা গুলি করলো, প্রধনমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন।
সাবেক এই ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদেরকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেনি। সাংবাদিকদের রসিকতা করে বলেছেন কারা হামলা করেছে তালিকা দেন। আমি বিচার করব। ওবায়দুল কাদের সাহেব সাংবাদিক ছিলেন বলেই আমি জানতাম কিন্তু তিনি এখন গণমাধ্যমে চোখ রাখা ভুলে গেছেন বলেই এ ধরণের অন্ধ, অজ্ঞ ও অর্বাচীনের মতো কথা বলছেন। মানুষ তাঁর বক্তব্যকে ‘কমিক এন্টারটেইনমেন্ট’ হিসেবে ধরে। ওবায়দুল কাদের সাহেব ছাত্রলীগের রাম দা, পিস্তল, লোহার রড ও লাঠি দেখতে পান না। কিছু চতুস্পদ প্রাণী আছে কালারব্লইন্ড, আর আওয়ামী সরকার হচ্ছে ক্ষমতাব্লইন্ড।
বিএনপির তিন নেতার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সরকার উসকানির কথা বলে মামলা দিয়েছে বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের নামে। বিএনপি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। সমর্থন দিয়েছে সকল রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সরকারের ভুল ধরিয়ে দিয়েছে। আপনারা তাদের সাধুবাদ জানালেন- এ কথা যদি উস্কানির পর্যায়ের না পড়ে তাহলে বিএনপি কোথায় উস্কানি দিল? কিন্তু মামলা দেওয়া হলো বিএনপি নেতাদের নামে। স্বভাবনিষ্ঠুর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এর চেয়ে ভাল কিছু আশা করা যায় না। সরকারের নাশকতার মিশন আনসাকসেসফুল বলেই এখন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকাশ্যে হামলা করে রক্তাক্ত করার নীতি গ্রহন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এড. আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ