পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিরাপদ সড়ক ও জিগাতলায় ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গতকালও হামলা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী এবং পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের উপর এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অষ্টম দিনে উত্তরা, জিগাতলা, ফার্মগেট, মিরপুর ও রামপুরা এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশসহ শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে ৮জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জিগাতলায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সাজোয়া যান নিয়েও ধাওয়া করা হয় শিক্ষার্থীদের। রোববার সকাল ১১টা থেকে শাহবাগ, জিগাতলা, মিরপুর, উত্তরা, মধ্যবাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক, রামপুরার প্রধান সড়কগুলোয় অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বাসশূন্য ঢাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। রাস্তায় বিআরটিসির গুটি কয়েক বাস ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন দেখা যায় নি। নগরবাসীর একমাত্র ভরসা রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও ট্রাক-পিকআপ। অনেককেই মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌছেছেন। রাজধানীর কোন বাস টার্মিনাল থেকে গতকাল দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। ঢাকায়ও আসেনি দূরপাল্লার কোন বাস। এতে করে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে সাধারন মানুষকে।
সায়েন্সল্যাব-জিগাতলায় ব্যাপক সংঘর্ষ আহত শতাধিক
শনিবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের মারাত্মক হামলার প্রতিবাদে সকাল ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে জমায়েত হতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়ায় কাটাবন সড়ক, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে জিগাতলা এলাকায় গেলে তাদের ওপর আবারও একই ধরনের হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যারয় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহের সময় দুর্বৃত্তদের হাতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও মারধরের শিকার হন। এসময় পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বারডেমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার সকাল ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন হঠাৎই তীব্র গতি পায়। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ এলাকা থেকে বিক্ষোভ করে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে জিগাতলা এলাকার দিকে রওনা দেন। শনিবার জিগাতলা ও ধানমন্ডি এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় ওই এলাকায় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে পিলখানা পার হয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে ঘুরে চলে যেতে বলে। কিন্তু তারা পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে ধানমন্ডি ৩/এ সড়কে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের একাংশ সেখান থেকে ঘুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরির পথ ধরে। কিন্তু অপর অংশ সেখানেই অবস্থান করে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তখন সাজোয়া যান নিয়েও ধাওয়া করা হয় শিক্ষার্থীদের । এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে হঠাৎই ধানমন্ডি লেকের দিক থেকে একদল লোক লাঠি সোঁটা, রামদা, কিরিচ ইত্যাদি নিয়ে এসে তাদের ওপর চড়াও হয়। এসময় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ একের পর এক কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এর সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে। তাদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার ও অন্তত ৮জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তারা আরও অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের অনেকেই হেলমেট পরে এসে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষের ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুষ্কৃতকারীদের হামলায় অন্তত চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। তিনজনের মাথা ফেটে গেছে। এছাড়াও একজনের গাল ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে গেছে। রক্তক্ষণ ঠেকাতে ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক তাদের পপুলার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম মাহমুদুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। আহতদের মধ্যে একজন নারী শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় মহড়া দিতে দেখা গেছে।
মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির উদ্দেশে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় এলে সেখানে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৮ জন শিক্ষার্থী আহতাবস্থায় ভর্তি হয়েছে। তারা হচ্ছেন- ঢাবির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান (২১), সুসমিতা রয়েল লিসা (২৩), তুষার (২৪), মারুফ (২৫) ও শিমন্তী (২৬), বুয়েটের রাকিন (২৩), আইইউবি’র ছাত্র এনামুল হক (২৪) ও তামিম (২৩)।
ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, কারা হামলা চালিয়েছে তা আমরা জানি না। আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। সাইন্সল্যাব মোড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশি অস্ত্র ও লঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাদের পরিচয় আমরা জানি না। আমরা আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তারা বিভিন্ন দিকে সরে গেছে। এখন ফুটওভার ব্রিজের নিচে কারা তা আমরা জানি না।
মিরপুর
সকাল থেকে মিরপুর ১, ২ , ১০ নম্বর থেকে ভাসানটেক এলাকা পর্যন্ত শাসক দল ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। বাংলা কলেজ এবং মিরপুর থানা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের রাজপথে মিছিল করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। বেলা ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় ফায়ার সার্ভিস অফিসের কাছে ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদেরও গতকাল রাজপথে দাঁড়াতে দেয়নি ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও মিরপুর ১০ নম্বর ও ২ নম্বর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে মিরপুর এলাকায় বিআরটিসি ছাড়া গণপরিবহন দেখা যায়নি।
বসুন্ধরা-রামপুরা
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু সময়পর এলাকার প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স বা রোগিবাহী গাড়ী ছাড়া কিছুই চলাচল করতে দেননি তারা। মধ্যবাড্ডার লিংকরোড এলাকার কনফিগার ব্যাপারী টাওয়ারের নিচে সকাল ১০টায় অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের বাধা দিতে একই সময় থেকে অবস্থান করছে আওয়ামীলীগসহ যুব ও ছাত্রলীগের সদস্যরা। রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশন পর্যন্ত এবং অন্যদিকে মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত শক্ত অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বেলা ১২টার পর ওই এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে সমবেত হতে শুরু করেন। দুপুর ১টার দিকে আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতকর্মী যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সেচ্ছাসেবকলীগসহ প্রায় ১০০জনের একটি দল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাতে এগিয়ে যায়। এ সময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে পিছু হটে দলীয় লোকজন। তারা চলে যাওয়ার পর এলাকার প্রধান রাস্তা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় পেছনে অবস্থিত বাঁশের আড়ৎ থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে তারা রাস্তায় অবস্থান নেয়। পরে বিকেলের দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যায়।
উত্তরায় পিটুনি মোটরসাইকেলে আগুন
উত্তরা হাউস বিল্ডিং গোলচত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বেলা ১টার দিকে হামলার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টা থেকে ওই এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন কয়েকজনকে ধরে বেধড়ক পিটুনি দেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতাদের ফেলে যাওয়া তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় হাউস বিল্ডিং গোলচত্বরে আইইউবিএটি, উত্তরা হাইস্কুল, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১টার দিকে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে মোটারসাইকেলযোগে ছাত্রলীগের একটি দল এলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ার মুখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে গেলে আগুন ধরিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হাতে লাঠিসোটা ও রড নিয়ে বিক্ষোভ করে।
ফার্মগেটে ছাত্রদের উপর হামলা
গ্রীনরোড এলাকায় এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত একদল শিক্ষার্থীদের মিছিলে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গ্রীনরোড ক্যাম্পাস থেকে ফার্মগেট মোড়ে মিছিল নিয়ে যাবার সময় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। এ সময় হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাচ ভাঙচুর করে। ১০-১৫ মিনিট এ হামলা চলে। পরে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
মতিঝিলের শাপলা চত্বর
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার পর থেকে ১২টা পর্যন্ত মতিঝিলের রাস্তায় কোনো শিক্ষার্থী ছিলেন না। তবে দুপুর ১২টার পর থেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে জড়ো হতে থাকেন নটরডেম কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে কয়েকঘন্টা অবস্থান করে এবং গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে তারা ফিরে যান। শান্তিনগর মোড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সেখানে ভিকারুননিসা, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের এবং স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এ সময় তারা চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। শান্তিনগরে দুটি পুলিশ ভ্যান ও দুজন পুলিশ অফিসারের গাড়িও আটকায় তারা। বিকাল ৩টার দিকে বিজয়নগর মোড়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এক মোটর সাইকেল আরোহীর লাইসেন্স পরীক্ষা করতে গেলে তিনি লাইসেন্স না দেখিয়ে চলে যেতে উদ্যত হন। এসময় শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আরোহী সড়কে পড়ে যান। বিকাল ৪টার দিকে বংশালের নর্থ সাউথ রোডে ১০ জনের একটি দল গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করে দিতে দেখা যায়। নয়াবাজারের ইংশিল রোডেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে যানবাহনের লেন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলন থেকে ওঠা ৯টি দাবি পূরণের ঘোষণা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানানো হলেও শুধু আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, আগের দিন ফুল চকলেট দিয়ে পুলিশ শিক্ষার্থী ভাব বিনিময় করলেও গতকাল সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে দাঁড়াতে তাদের দেয়নি পুলিশ। সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টের আশেপাশে অবস্থান নেয়। ছিল সাদা পোষাকের পুলিশও। সকাল এগারোটার দিকে শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকে সাহেব বাজার বড় মসজিদ চত্ত্বর এলাকায়। পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায়ও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা। দুপুর ১২টা থেকে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র শিববাড়ির মোড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুরের পর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও এর বিচার দাবি করছেন। একইসঙ্গে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানায়।
দিনাজপুর অফিস জানায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। এ সময় শত শত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জিগাতলায় হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই। দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই’ স্লোগান দেন।
জাবি সংবাদদাতা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল হামলার প্রতিবাদে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। দিনের শুরুতে ধর্মঘটের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ ডিপোতে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হয় কয়েকহাজার শিক্ষার্থীরা। সেখান শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে শিক্ষার্থীদের অবস্থা দেখে ফিরে যায়। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস পদক্ষিণ করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে দিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যায়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে আবারও শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে মিলিত হয়।
রাউজান (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’র শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ৩ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। নিরাপদ সড়কের জন্য ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়েছে দাবি করে চুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা লাঠি,লোহার রড নিয়ে গতকাল পর্যন্ত কাপ্তাই সড়কে অবস্থান নেয়। এই সময় শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রমিক-জনতার ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সংঘর্ষ ঘটে নি বলে জানা যায়। এই সময় পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। হামলা-ভাংচুরের ভয়ে পাহাড়তলী বাজারে মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ করে রাখেন ব্যবসায়ীরা।
রাবি সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ কবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বরেন্দ্র, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার সকালে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্লাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীরা রাস্তার দু’দিকে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী অবস্থান করেন। এদিকে দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও নিরাপদ সড়কের দাবিতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানবন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা অর্নিদিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়।
শাবি সংবাদদাতা জানান, রাজধানীর জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নয় দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট দিনব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সকাল সাড়ে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে এবং ছাত্রদের উপর হামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এদিকে ধর্মঘটের কারণে অধিকাংশ বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে চুয়াডাঙ্গায় সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টায় শহরের শহীদ হাসান চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। শিক্ষার্থীদের এই সমাবেশ থেকে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ সারা দেশে নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়। এ সময় তারা ঢাকাতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার সকালে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহরের শহীদ হাসান চত্বর সড়কে অবস্থান নেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।