বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সত্যবাদিতা ও মিথ্যাবাদিতা অনিষ্টের উৎস। সত্যবাদিতার অনুসরণ ও মিথ্যাবাদিতা পরিহার একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতি সাধন করে, অপরদিকে সামাজিক জীবনেও এর সুফল পাওয়া যায়। এর ওপরই সমূহ কল্যাণের ভিত্তি স্থাপিত। মহানবী (সা:) বলেছেন: ‘স্মরণে রেখ, সত্যবাদিতা রক্ষা করো এবং মিথ্যাবাদিতার ধ্বংস সাধন করো।’ আল্লাহ তায়ালা কেবল সত্যবাদী হওয়ার নির্দেশই দান করেননি, বরং সর্বদা সত্যবাদীদের সহযোগিতা, তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং তাদের সাহচর্য লাভ করার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমেনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সূরা : তওবা)
একবার রসূলুল্লাহ (সা:) কে সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কে কিভাবে নিজেকে নিকৃষ্ট মনে করতে পারে?’ রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, ‘তা এইভাবে যে কারো আল্লাহ সম্পর্কে কোনো কথা বলার প্রয়োজন, অথচ সে তা বলে না। এ ধরনের লোককে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘আমার সম্পর্কে অমুক কথা বলতে তোমাকে কে বাধা দিয়েছিল?’ সে বলবে, ‘লোকের ভয়।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার পক্ষে উচিত ছিল, সবচেয়ে বেশি আমাকেই ভয় করা’।
ইমাম গাজ্জালী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইয়াহিয়াউল উলুম’ এ সত্যবাদিতার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একে ছয় ভাগে বিভক্ত করেছেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, (১) কথায় সত্যবাদিতা, (২) উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যে সত্যবাদিতা, (৩) সংকল্পে সত্যবাদিতা, (৪) সংকল্প পূরণ করার ব্যাপারে সত্যবাদিতা, (৫) আমল বা কর্মে সত্যবাদিতা, (৬) দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা।
অন্তরে পোষণ করা, মুখে উচ্চারণ করা এবং কর্মে বাস্তবায়িত করাÑ এই তিনটি সত্যবাদিতাই উপরোক্ত শ্রেণিসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারাই মুসলমান যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর বিশ^াস স্থাপন করেছে এবং কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ করেনি। আর আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল দ্বারা জেহাদ করেছে, এরাই সত্যবাদী লোক।’ (সূরা : হুজুরাত)
ইসলাম সত্যবাদিতার জন্য সকল প্রকারের ভয়-ভীতি ও নিন্দাকে উপেক্ষা করার আদেশ দিয়ে একে মুসলমানদের উন্নত নৈতিকতা বলে ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং এরা (সত্যবাদিরা) কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না।’ (সূরা : মায়েদা)
রাসূলে করিম (সা:) বলেন, ‘কারো যদি সত্য কথা জানা থাকে, তাহলে বলা উচিত এবং এতে মানুষের ভয়-ভীতি প্রতিবন্ধক হওয়া ঠিক নয়।’
হজরত ইবনে মসউদ (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘সত্যবাদী হও, সত্যবাদিতা সৎ পথের সন্ধান দেয় এবং সৎপথ বেহেশতে নিয়ে যায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে, আল্লাহর দরবারে তাকে সিদ্দিক বলে লেখা হয়।’ (বোখারী)
হজরত উমর (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, হুজুর (সা:) কে প্রশ্ন করা হলো, ‘বেহেশতে প্রবেশকারির আলামত কি?’ হুজুর (সা:) বললেন; ‘সত্য কথা বলা। বান্দা যখন সত্য কথা বলে, তখন সে একটি সৎ কাজ করল। যে সৎ কাজ করে সে শান্তিপ্রাপ্ত হয় এবং যে শান্তি পায় সে যেন বেহেশত লাভ করল।’ (আহমদ)
হজরত ইমাম হাসসান (রা:) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা:) বলেছেন যে, ‘সত্যবাদিতা অন্তরের শান্তি স্বরূপ।’ (তিরমিজি) হজরত মনসুর ইবনে মোতামের বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘সত্য কথা বলার ইচ্ছা করতে থাকবে, চাই এতে কোনো বিপদ আসুক না কেন। স্মরণ রেখো, সত্য কথা বলাতেই নাজাত নিহীত রয়েছে।’
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সত্যবাদিতার অনুসরণ এবং মিথ্যাবাদিতার পরিহার করা। কেননা ‘আছছীদকু ইউনজী ওয়ালকিজবু ইউহ্লিকু’, অর্থাৎ- সত্য মানুষকে রক্ষা করে এবং মিথ্যাচার ধ্বংস করে। এই নীতি অনুসরণ করা জান্নাত লাভের পথ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।