পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে চালকদের বিআরটিএ-তে লিখিত, মৌখিক ও গাড়ি চালানোর পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতিটি পরীক্ষায় আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। টাকা দিলেই এসব পরীক্ষায় পাশ করা যায়। তারপরেও বেশিরভাগ চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছে। বিআরটিএ-এর হিসাবে, সারাদেশে নিবন্ধিত ভারী যানবাহনের বিপরীতে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রায় ৮২ হাজার কম। অর্থাৎ এখনও ৮২ হাজার চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে।
জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) তিন পর্বে পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলো হলো, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এবং প্রাকটিক্যাল বা গাড়ি চালানো পরীক্ষা। চালকরা জানান, বিআরটিএ-এর দালালদেরকে টাকা দিলে এই পরীক্ষাগুলোতে অনায়াসে পাশ করা যায়।
প্রথম ধাপে ২০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার জন্য কমপক্ষে ১২ নম্বর পেতে হয়। অথচ লেখাপড়া না জেনেও টাকার বিনিময়ে লিখিত পরীক্ষায় ১২ নম্বর পেয়ে পাশ করে যাচ্ছে লাইসেন্স পেতে আগ্রহীরা। ২০ নম্বরের প্রশ্নের মধ্যে ১২ টি প্রশ্নের উত্তর টিক চিহ্নের। বাকী ৮টিতে সামান্য কিছু শব্দ লিখতে হয়। সরেজমিনে কেরানীগঞ্জ ইকুরিয়া বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, একেবারে নিরক্ষর ব্যক্তিও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে টাকার বিকল্প নেই। দালালদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হালকা যানবাহনের জন্য ৭ হাজার এবং ভারী যানবাহনের জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিলেই মেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর সাথে চুক্তি করে দালালরা পরীক্ষার খাতায় শুধু নাম ও পরীক্ষার রোল নম্বর লেখার পরামর্শ দেয়। পরীক্ষার্থী কোনোমতে নিজের নাম ও প্রবেশপত্র দেখে রোল নম্বরটা খাতায় লেখে। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খালি খাতাই জমা দিয়ে আসে। পরীক্ষার হলে ডিউটিরত ব্যক্তি দালালদের কথা মতো ওই খাতায় একটা সঙ্কেত দিয়ে দেয়। যা দেখে পরীক্ষক নিজেই ১২ টি প্রশ্নের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে ১২ নম্বর দিয়ে দেন। সেক্ষেত্রে লিখিত প্রশ্নের উত্তরগুলো ফাঁকাই থাকে। কিন্তু তাতে পাশের জন্য কোনো অসুবিধা হয় না।
লিখিত পরীক্ষার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যারা উত্তীর্ণ হয় তাদেরকে খানিকক্ষণের মধ্যেই মৌখিক পরীক্ষার জন্য একটি কক্ষে ডাকা হয়। এক্ষেত্রে পরীক্ষক দুরে বসে থাকেন। একজন একটা লাঠি দিয়ে দেয়ালে সাঁটানো সড়কের বিভিন্ন চিহ্ন দেখিয়ে পরীক্ষার্থীর জানতে চান এগুলোতে কি বোঝায়? এক্ষেত্রে টাকা লেনদেন হয়ে থাকলে পরীক্ষার্থীকে আগে থেকেই চিহ্নগুলোর নাম ক্রমানুসারে জানিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ প্রথমে ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’। দ্বিতীয়ত: ‘সামনে ডানে মোড়’, তৃতীয়ত ‘ইউ টার্ন নিষেধ’ ইত্যাদি রোড সাইনের কথা আগেভাগেই জানিয়ে রাখা হয়। পরীক্ষার্থী এভাবে ৫টা চিহ্নের মধ্যে তিনটা মনে রাখতে পারলেই পাশ।
তৃতীয় পর্বে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় পেছনের দিকে গাড়ি পার্কিং করতে বলা হয়। একটি নির্দ্দিষ্ট সীমানার মধ্যে দিয়ে গাড়িটি পেছনের দিকে নিতে হয়। পেছনে নেয়ার সময় সীমানা পিলারের সাথে গাড়ি স্পর্শ করলে পরীক্ষায় ফেল হিসাবে ধরা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, যারা আগে থেকেই দালালদেরকে টাকা দিয়ে চুক্তি করেন তারা গাড়ি পেছনের দিকে নেয়ার সময় সীমানা পিলারের সাথে স্পর্শ করলেও দালাল দুরে বসা ম্যাজিস্ট্রেটের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ওকে স্যার’। অথবা একবার স্পর্শ করলে আবার সুযোগ করে দেন। এভাবে কাউকে তিনবারও সুযোগ করে দিয়ে ‘পাশ’ বলে উল্লেখ করতে দেখা গেছে। আর চুক্তি না করলে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা নেয়ার সময় এমনভাবে তাকে ব্যস্ত রাখা হয় যেনো তিনি গাড়ি চালানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে না পারেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় ১২ নম্বরের টিক চিহ্নের শুভঙ্করের ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ-এর সচিব মোহাম্মদ শওকত আলী ইনকিলাবকে বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্দ্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান নেই। সাধারণত অল্পশিক্ষিত লোকজনই ড্রাইভিং পেশায় আসে। সে কারনে তাদের জন্য এরকম পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে ফাঁকির কিছু দেখি না। সচিব বলেন, আগামীতে সড়ক পরিবহন আইনে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে পঞ্চম বা অস্টম শ্রেণি পাস রাখা হতে পারে। নতুন এ আইন পাশ হলে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করা হবে।
আরটিএর তথ্য মতে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত হয়েছে ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০টি যানবাহন। এসব যানবাহনের বিপরীতে বৈধ লাইসেন্সধারী চালক আছে ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৬ জন। সারাদেশে সরকারিভাবে নিবন্ধিত যানবাহনে একজন করে চালক রাখা হলেও প্রায় অর্ধেকসংখ্যক যানবাহনেই বৈধ লাইসেন্সধারী চালক নেই। দেশে বাস ও ট্রাকসহ ভারী যানবাহন আছে দুই লাখ ২০ হাজার ৭৬৫টি। এসব নিবন্ধিত যানবাহনের বিপরীতে চালকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৫টি। এ হিসাবে, এ নিবন্ধিত ভারী যানবাহনের তুলনায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রায় ৮২ হাজার কম। অর্থাৎ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই ভারী যানবাহন চালাচ্ছে ৮২ হাজার চালক। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।