দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুতের পাঁচ লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭ হাজার ৫৩৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ৭৫১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫৮ কোটি ৫৭ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মোঃ জিয়াউল ইসলাম, আইএমইডির সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন থেকে ফাইবার অপটিক ব্যবহার করে উইন উইন সিচ্যুয়েশন তৈরি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫৭৫ কিলোমিটার সেকেন্ডারি লাইনে অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং চালুকরণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে গিয়ে এ নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, এই অপটিক্যাল ফাইবার অপটিক ব্যবহার করে টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে যারা কাজ করেন তারাও যেমন লাভবান হবেন, আবার সরকারও যেন তেমনি লাভবান হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন সংশ্লিষ্ট সুবিধা ভোগীদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, অগ্রিম রাজস্ব আদায়, উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান, নন-টেকনিক্যাল লস শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, ডিমান্ড সাইড লোড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা সহজতরকরণ এবং বিদ্যুতের অপচয় কমানোর জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৩টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। যেসব স্থানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং পবা উপজেলা। নাটোর সদর উপজেলা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা। বগুড়া সদর,শাহাজাহানপুর এবং কাহালু উপজেলা। পাবনা সদর, দিনাজপুর সদর, ঠাকুঁরগাঁও সদর, পঞ্চগড় সদর এবং নীলফামারী সদর ও সৈয়দপুর উপজেলা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উপজেলাভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ‘উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠমো উন্নয়ন’ নামের একটি বড় প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, উপজেলা শহরে মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ শহরবাসীর জীবন যাত্রার মান বাড়ানো ও পরিবেশের উন্নয়নের বিষয়গুলো বিবেচনা করে অপরিহার্য অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে। মৌলিক নাগরিক সুবিধা অর্থাৎ সড়ক, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হবে।
অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে, নর্দান ইলকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী লিমিটেড এলকায় পাঁচ লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন প্রকল্প, ব্যয় হবে ৪১৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫১১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ, ব্যয় ১৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন ¯িøপওয়ে নির্মাণ, ব্যয় হবে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫৭৫ কিলোমিটার সেকেন্ডারি লাইনে অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং চালুকরণ, ব্যয় ৬৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন,ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (রাস্তা ও ড্রেন), ব্যয় হবে ৬৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ, ব্যয় হবে ২৩১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে দুঃস্থ জনগোষ্ঠির সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতি) প্রকল্প, বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।