Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলনাঞ্চলের চামড়া বাজার

মূর্তিমান আতঙ্ক ভারতীয় ব্যবসায়ীরা, সর্তক অবস্থানে বিজিবি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, হুন্ডির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ

আবু হেনা মুক্তি : | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহায় খুলনাঞ্চলের চামড়া বাজারে মূর্তিমান আতঙ্ক ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। দেশীয় অসাধু পাচারকারী ও ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে এ সিন্ডিকেটের কারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে ভারতীয়রা। এছাড়াও বাজার ধরতে দেয়া হচ্ছে অগ্রিম টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতা, পুঁজি সঙ্কট, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রির টাকা সময় মত না পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রতিবছর চামড়া পাচারে সুযোগটি কাজে লাগায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
সূত্র জানায়, দেশীয় ব্যবসায়ীদের পুঁজি সঙ্কটের সুযোগে নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিনিয়োগ করে করছে। ভারতের বাজারে প্রায় দ্বিগুন দামে বাংলাদেশের চামড়া বিক্রি হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি চোরাকারবারীরাও চামড়া ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেন দ্বিগুন লাভের আশায়। সীমান্ত এলাকাগুলোর চামড়া ক্রয়ের জন্য ভারতীয় টাকায় সয়লাব হয়ে গেছে সমগ্র খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে। উদ্দেশ্য চামড়া ভারতে নেয়া। আর এ জন্য প্রান্তিক অবস্থা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরাও অগ্রিম টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে কোরবানির চামড়ার বাজার খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাচার রোধে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে বলে বিজিবির পক্ষ তেকে জানানো হয়।
জানা গেছে, ভারতীয় ফড়িয়া ও দালালরা বৈধ অবৈধ পথে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে আসতে শুরু করেছে। বিনিয়োগ করছে হুন্ডির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা। দেশীয় কালোবাজারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে। খুলনা বড়বাজার কেন্দ্রীক হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ভারতীয় ফড়িয়াদের সকল প্রকার সহযোগীতা করে থাকে। এ কারনে এবারের কোরবানির চামড়া খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে লবনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
ট্যানারি মালিকরা জানান, ভারতীয় ফড়িয়াদের চক্রান্ত এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মসহ নানা কারণে খুলনাঞ্চলের অর্ধশতাধিক চামড়া প্রতিষ্ঠান এখন মাত্র ৮টিতে নেমে এসেছে । দেশে- বিদেশে চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অমিত সম্ভাবনা রয়েছে শিল্পটির। চামড়া শিল্পেরসাথে জড়িত লাখ লাখ পরিবার। এছাড়া দেশীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্বসমর্পণ করতে হয় তাদের। লাভ দূরের কথা যা বিনিয়োগ করেছেন তা তুলে আনাও দায় হয়ে যায় সবলে জানা সতারা । তাই পরিকল্পিতভাবে চামড়া ক্রয় বিপনন প্রক্রিয়াজাতকরন ও রপ্তানির প্রতি বিশেষ নজর তিকে সরকারের প্রতি তারা অনুরোধ জানিয়েছে। জনৈক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো: সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, গত ঈদে তিনি ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে প্রায় দেড় লাখ টাকার চামড়া সরবরাহ করেছিলেন। মহাজন তাকে মাত্র ৮১ হাজার টাকা দিয়েছেন। একইভাবে জুলফিকার আলী, আব্দুস সালাম, আমিরুল ইসলাম, ইমদাদ হোসেনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের চিত্র একই রকম। উপরন্তু মাহজনরা জোরপূর্বক এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে রেখেছেন যাতে তারা কোনো আইনগত সাহায্য নিতে না পারেন। খুলনার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি বছর কোরবানীর ঈদের সময় পশুর চামড়া কেনার জন্য কোন ঋনের সুবিধা পায় না। প্রতি বছরই পুঁজি সংকট দেখা দেয়। এবার এ সংকট তীব্র আকারে ধারন করেছে। দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সরকারকে পাচাররোধে বিশেষ অধ্যাদেশ জারি ও বর্তমানে যে আইন রয়েছে তার সঠিক প্রয়োগ এখন সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। অন্যথায় চামড়া সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়া

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ