Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সরকারের গ্রিন সিগন্যালে কয়লা খনিতে লুটপাট -সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, সারাদেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের মুখে উন্নয়নের জোয়ার আর বাস্তবে চলছে মহালুটপাট। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, পুকুর-নদী, সেতু-ব্যাংক, সোনা-দানা এসব লুটপাটের পর এবার লুট হয়েছে বিপুল পরিমাণ কয়লা। আর এই বিশাল কয়লা লুটের তদন্ত যথারিতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শুরু করেছে। আসলে দুদক তো সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন। আর বিরোধী দলের জন্য দুদক টর্চারিং মেশিন। গত দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এত বিশাল পরিমাণ কয়লা লুটপাটের পর দুদক তদন্ত শুরু করেছে। এ যেন রোগী মরিবার পর ডাক্তার আসিলেন। আসলে দুদকের তদন্ত আইওয়াশ মাত্র। এই অবৈধ সরকারের আমলে মহাদুর্নীতি, সুপার দুর্নীতি, মেগা দুর্নীতিরই জয়জয়কার। শেয়ারমার্কেট থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু হয়ে ব্যাংক-বিমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরীক্ষা ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার হাইপার দুর্নীতি মহা ধুমধামেই চলছে। আর এর সবই হচ্ছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। তথ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়েছেন যে, পিয়নের চাকরি নিতে গেলেও নাকি ১০ লাখ টাকা লাগে। এই ১০ লাখ টাকার ভাগ কে কে পায়, সেটিও তথ্যমন্ত্রী জানালে ভালো করতেন।
রিজভী বলেন, কয়েক বছর ধরে লোপাট হয়ে গেল লাখ লাখ টন কয়লা, অথচ খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। কারণ, খনি কর্তৃপক্ষই শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল। আবার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বিপুল পরিমাণ কয়লা লোপাট হওয়া বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীন থাকাটা রহস্যজনক।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী শাসনামলে এত বিপুল পরিমাণ কয়লা চুরিতে কেউ বিস্মিত নয়, কারণ মেগা চুরির ঘটনা কেবল আওয়ামী লীগের আমলেই ঘটে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এখন পুকুরচুরি নয়, সাগরচুরি হয়। দুর্নীতি-দুঃশাসনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগেরই। মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরে অসাধু ব্যবসায়ী ও খনি সিন্ডিকেটই জাতীয় সম্পদ কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে না লাগিয়ে কালোবাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রমাণ কয়লা লোপাটের সঙ্গে খনি দুর্নীতির তদন্তে নাম আসা প্রকল্পের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিদেশ যেতে ৪২ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। তাই এই কয়লা লোপাটের মহাদুর্নীতির দায় সরকার বা সরকার প্রধান এড়িয়ে যেতে পারেন না।
মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্মসম্পাদক বলেন, আইন হাতে নিয়ে বেআইনি পন্থায় চালানো হচ্ছে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান। এ অভিযানে জনমনে আতঙ্কের হিম শীতল স্রোত বইছে। প্রতিদিনই বন্দুকযুদ্ধের নামে চলছে মানুষ হত্যার উৎসব। মাদক অভিযান শুরু থেকে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে প্রায় আড়াইশ জন ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের বাহিনীগুলো গর্বের সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযানের কথা বলছে জোরেশোরে। কৃতিত্ব দাবি করছেন মাদক নির্মূলের; কিন্তু জনসমাজে মাদকের ব্যাপ্তি কতটুকু কমেছে, তা সবাই টের পাচ্ছে। বেআইনি কর্মকান্ড বেআইনি পন্থায় দমন করা যায় না, প্রয়োজন হয় ন্যায়ভিত্তিক আইনের শাসনের প্রয়োগ।
তিনি বলেন, আওয়ামী আদর্শে রঞ্জিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রশাসন কখনই নিরপেক্ষভাবে অপরাধ ও অপরাধীকে চিহ্নিত করে তা নির্মূল করতে পারে না। এই কারণে মাদকের গডফাদাররা অধরাই থেকে যাচ্ছে, বদিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ক্ষমতাসীনদের অনুগ্রহভাজন হয়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্যায্য-অন্যায় নির্দেশ পালন করছে। এই কারণে তারা বাংলাদেশে এত রক্ত ঝরিয়েও মাদকের বিস্তার রোধ করতে পারেনি।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, আমরা বারবার বলেছি, দেশজুড়ে ক্রসফায়ারের হিড়িক মূলত দেশের জনগোষ্ঠীকেই আতঙ্কিত করা। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মনে ভয় ঢোকানোর জন্য এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযানে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ