পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষমতাসীন মহলের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া লাখ লাখ টন কয়লা অদৃশ্য হয়ে যায়নি মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের মুখে উন্নয়নের জোয়ার, আর কাজে দুর্নীতির পাহাড়। বড় পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এত বিশাল পরিমাণ কয়লা লুটপাটের পর দুদক তদন্ত শুরু করেছে। ‘যেন রোগী মরিবার পর ডাক্তার আসিলেন’। আসলে দুদক তো সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন। আর বিরোধী দলের জন্য দুদক টর্চারিং মেশিন। দুদকের তদন্ত আইওয়াশ মাত্র।
আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, গতকাল যখন এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের সম্পদ লুটপাট না করার জন্য আহবান জানিয়েছেন তখন কয়লা খনির দুর্নীতির খবরে দেশ-বিদেশ সরগরম। আসলে এই অবৈধ সরকারের আমলে মহা দুর্নীতি, সুপার দুর্নীতি, মেগা দুর্নীতিরই জয়জয়কার। শেয়ার মার্কেট থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু হয়ে ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে প্রাইমারী স্কুল থেকে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত পরীক্ষা ও সরকারী চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার হাইপার দুর্নীতি মহাধুমধামেই চলছে এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। তথ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়েছেন যে, পিয়নের চাকরি নিতে গেলেই নাকি ১০ লাখ টাকা লাগে। এই ১০ লাখ টাকার ভাগ কে কে পায় সেটিও তথ্যমন্ত্রী জানালে ভালো করতেন।
তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে লোপাট হয়ে গেল লাখ লাখ টন কয়লা, অথচ খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। কারণ খনি কর্তৃপক্ষই ‘শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল’। আবার বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির বিপুল পরিমাণ কয়লা লোপাট হওয়া বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীন থাকাটা রহস্যজনক।
খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ থাকার ঘোষণা, কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে আসা, গত বছর জুলাইয়ে বিদ্যুৎ কেন্দের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গত রোববার থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পরও মন্ত্রণালয়ের হুঁস হলো না কেন, তাতেই প্রমাণিত হয়-ক্ষমতাসীন মহলের গ্রীন সিগন্যাল ছাড়া লাখ লাখ টন কয়লা অদৃশ্য হয়ে যায়নি।
রিজভী বলেন, আওয়ামী শাসনামলে এত বিপুল পরিমাণ কয়লা চুরিতে কেউ বিস্মিত নয়, কারণ মেগা চুরির ঘটনা কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের আমলেই ঘটে, এছাড়া স্বয়ং অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন- এখন পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়। দুর্নীতি-দুঃশাসনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগেরই। মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরে অসাধু ব্যবসায়ী ও খনি সিন্ডিকেটই জাতীয় সম্পদ কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে না লাগিয়ে কালোবাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর প্রমাণ- কয়লা লোপাটের সাথে খনি দুর্নীতির তদন্তে নাম আসা প্রকল্পের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে বিদেশ যেতে ৪২ দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে। তাই এই কয়লা লোপাটের মহাদুর্নীতির দায় সরকার বা সরকার প্রধান এড়িয়ে যেতে পারে না।
বিচারবহির্ভূত হত্যার সমালোচনা করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আইন হাতে নিয়ে বেআইনী পন্থায় চালানো হচ্ছে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান। এই অভিযান জনমনে আতঙ্কের হিম শীতল স্রোত বইয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিনই বন্দুক যুদ্ধের নামে চলছে মানুষ হত্যার উৎসব। মাদক অভিযান শুরু থেকে এ পর্যন্ত বন্দুক যুদ্ধে প্রায় আড়াই শত জন ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের বাহিনীগুলো গর্বের সঙ্গে মাদক বিরোধী অভিযানের কথা বলছেন জোরেসোরে। কৃতিত্ব দাবি করছেন মাদক নির্মূলের, কিন্তু জনসমাজে মাদকের ব্যাপ্তি কতটুক হ্রাস পেয়েছে তা সবাই টের পাচ্ছে। বেআইনী কর্মকান্ড বেআইনী পন্থায় দমন করা যায় না, প্রয়োজন হয় ন্যায় ভিত্তিক আইনের শাসনের প্রয়োগ।
রিজভী বলেন, আওয়ামী আদর্শে রঞ্জিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রশাসন কখনোই নিরপেক্ষভাবে অপরাধ ও অপরাধীকে চিহ্নিত করে তা নির্মূল করতে পারে না। এই কারণে মাদকের গডফাদাররা অধরাই থেকে যাচ্ছে, বদিরা এখনো বহালতবিয়তে রয়েছে, তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ক্ষমতাসীনদের অনুগ্রহভাজন হয়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্যায্য-অন্যায় নির্দেশ পালন করছে। এই কারণে তারা বাংলাদেশে এত রক্ত ঝরিয়েও মাদকের বিস্তার রোধ করতে পারেনি। লোক দেখানো অভিযানে মাদকের শিকড় উপড়ে ফেলা যায়। যার কারণে ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, আমরা বারবার বলেছি- দেশজুড়ে ক্রসফায়ারের হিড়িক মূলত দেশের জনগোষ্ঠীকেই আতঙ্কিত করা। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মনে ভয় ঢোকানোর জন্য এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযানে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। ঝিনাইদহ ও নেত্রকোনার পর তিন দিন আগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ছাত্রদল নেতা বাদশাকে নির্মমভাবে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে, এরা কেউ মাদকের সাথে জড়িত ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত কয়েক বছর ধরেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীদের আটকের পর পকেটে মাদক ঢুকিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করে। মনে হয় তারা যেন আদিষ্ট হয়েই একটা কমন ফরমেট দাঁড় করিয়েছে এই হীন কাজটি করার জন্য। কয়েকদিন আগে মানিকগঞ্জে পকেটে মাদক ঢুকাতে গিয়ে ধরা পড়ে পুলিশ গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ।
তিনি আরো বলেন, এই অবৈধ ক্ষমতাসীনরা বাংলাদেশকে হননের দেশ, মৃত্যুর দেশ, আতঙ্কের দেশ ও রক্তপাতের দেশে পরিণত করেছে। গণতন্ত্রের দেহে ছুরি চালিয়ে বাংলাদেশে তারা লাশ আর রক্তের কর্মসূচি কায়েম রেখেছে। এদের আমলেই ইয়াবা আর ফেনসিডিলে সারাদেশ ছেয়ে গেছে। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী রেখে, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি না মেনে আগামী জাতীয় নির্বাচন একতরফা করতে দেশকে ভোটারশূন্য করার জন্যই সরকার ক্রসফায়ারকে নিজেদের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করছে। আমি দলের পক্ষ থেকে সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক এই মনুষ্যত্বহীন ও অমানবিক নিষ্ঠুর ক্রসফায়ারের কর্মসূচি বন্ধ করার জোর আহবান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনতে শুনতে বাংলাদেশের মানুষ ক্লান্ত-শ্রান্ত। আওয়ামী লীগ নিজেদের মানসম্মান সম্পর্কে সচেতন নয় বলেই তারা মিথ্যা উন্নয়নের গলাবাজী করে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে উন্নয়নের কথা শুনলেই মানুষের হাসি পায়। কিন্তু এত মেগা প্রজেক্টের আওয়াজ কিসের জন্য তা জনগণের বুঝতে বাকি নেই। কারণ এই মেগা প্রজেক্ট থাকলেই সেকেন্ড হোম ও বেগম পল্লী বানানো যায়। অথচ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংস হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টিতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন শহর তলিয়ে যায়, বিভৎস জলাবদ্ধতায় মানুষ, গরু-বাছুর-বাস ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবহন অর্ধেকের বেশি ডুবে থাকে। জলজট ও যানজটে নগরবাসীর দুর্ভোগ সীমাহীন। খানা-খন্দে ভরা রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সারাদেশে প্রায় ৮৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তাঘাটে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। হাট-বাজারের অবস্থাও বেহাল, সেখানেও কোন উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামীণ সড়ক গ্রামীণ অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় কর্মসংস্থান কমে গেছে, ফলে বেকারত্ব বাড়ছে ভয়াবহ আকারে। কোরবানী ঈদের প্রাক্কালে পশুর হাট, মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা যে কি দুর্বিষহ হয়ে পড়বে তা নিয়ে মানুষ চিন্তিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।