পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, পাহাড় ধস রোধে এবং সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহায়তা চেয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে বর্তমান সরকারের আমলের ডিসি সম্মেলন।
উন্নয়ন কাজ সম্পাদনের জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে মত পার্থক্য দেখা দেয়, তবে সমন্বয়হীনতা আছে এ রকম খবর আমার কাছে নেই। মত পার্থক্য আমার সঙ্গে সচিবের মধ্যেও হয়। সেটা বড় কথা নয়। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বদলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট নেয়ার বাধ্যবাধকতা প্রস্তাব শিথিল করা হবে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ধীরগতিসহ নানাবিধ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে ডিসিদের নির্দেশনা দেন মন্ত্রী ও সচিবরা। এদিকে সন্ধায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সঙ্গে ডিসিদের স্বাক্ষাত এবং প্রেসিডেন্ট সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রতিটি অধিবেশনে মন্ত্রী ও সচিবরা এ আহ্বান জানান। প্রতিটি অধিবেশনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সভাপতিত্ব করেন।
আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে বলা আছে। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। আগামীতেও এটা যেন অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মাদকের ব্যাপারেও যেন তারা জিরো টলারেন্সে থাকেন, সে বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা আছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, অধিবেশনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আমরা তুলে ধরেছি। বিভিন্ন জেলার দু’একটি সারের গুদামের ব্যাপারে তারা (ডিসিরা) অবহিত করেছেন, আমরা সেগুলো দেখব। এছাড়া সুগার মিলগুলো যেন পুরো বছর চালু থাকে, সেজন্য আমরা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আখের মৌসুম মাত্র তিন মাসের। তাই মিলগুলো যেন চালু থাকে, সেজন্য আমরা কাঁচামাল এনে রিফাইন করে সুগার বিটে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, আখের মৌসুমে আখ সংগ্রহ করে গুড় তৈরির দিকে যেন না যায়, সব আখ যেন সুগার মিলের দিকে আসে, সে বিষয়ে ডিসিদের লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। সার বিতরণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আলোচনার কোনো অবকাশ নেই। কারণ, সার বিতরণ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়ে আসছে। এমনকি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সেই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, ভয়াবহ রাস্তা অবরোধ, তখনও কিন্তু সার বিতরণে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা সব জায়গায় সার পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।
নির্মাণাধীন বিসিক শিল্পনগরীর কাজ দ্রæত শেষ করতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছি। শিল্পমন্ত্রী বলেন, এলাকাভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা বিবেচনা করে বিসিক বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় ৩৪টি শিল্পনগরী স্থাপন করছে। এরমধ্যে জমি অধিগ্রহণে ধীরগতিসহ নানাবিধ কারণে কয়েকটি শিল্পনগরীর বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে মত পার্থক্য দেখা দেয়
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, উন্নয়ন কাজ সম্পাদনের জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে মত পার্থক্য দেখা দেয়, তবে সমন্বয়হীনতা আছে এ রকম খবর আমার কাছে নেই। মত পার্থক্য আমার সঙ্গে সচিবের মধ্যেও হয়। সেটা বড় কথা নয়।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনতো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নির্বাচন নিয়ে আমি আজকে বিশেষভাবে কোনো আলোচনা করিনি। কারণ নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা অত্যন্ত সুচারুভাবে দেখতে হবে। এসব বিষয়ে মনে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচনা করবে।
তিনি বলেন, আমাদের অধিবেশনের আলোচনায় বিশেষ করে এসেছে একটি বাড়ি একটি খামার। এতোদিন আমরা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কথা বলেছি।পধ্রানমন্ত্রী নিজের উদ্যোগে ক্ষুদ্র সঞ্চয় পদ্ধতিটা চালু করেছেন। এটার অন্তর্নিহিত বিষয় হচ্ছে ঋণের আবর্তে কেন আমরা লোন নিবো। তার চাইতে আমরা সহায়তা করি। তাহলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা তা করতে পারবে। কাজে কেউ এ বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসক ও কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমার বিবেচনায় আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় ডাইরেক্টলি তাদের (ডিসিদের) সঙ্গে ইনভলব। কারণ আমাদের স্থানীয় সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রকই হচ্ছেন তারা। মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকটা কজের সঙ্গে তারা আমাদের সঙ্গে জড়িত। ডিসিরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সেগুলো গ্রহণ করেছি।
পাহাড় ধস রোধে ডিসিদের সহায়তা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, পাহাড় ধস রোধে ডিসিদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পাহাড় কাটা, বনের জমি লিজ নেওয়া, বনভূমির অবৈধ দখল, নদী দখল, নদী দূষণ নিয়ে ডিসিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা কীভাবে এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কক্সবাজারে বনের প্রায় ৫ হাজার একরের মতো জমির ক্ষতি হয়েছে। সেখানে আবার পুনঃবনায়ন করার ব্যাপারে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পাহাড় ধসে প্রাণহানির মূল কারণ হচ্ছে গাছগুলো আমরা কেটে ফেলেছিৃ অবৈধ স্থাপনাগুলো। তিনি বলেন, এর মধ্যে নতুন করে আসা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য থাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে বহুগুণ।
সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, স্থায়ী সমাধান আছে। এভাবে চলবে না। ব্যবস্থা হচ্ছে, পারমানেন্ট উচ্ছেদ করা, তাদের অন্য জায়গায় বাসস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাৃ এগুলো করতে পারলে এটা বন্ধ হবে। পাহাড়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম কন্টিনিউয়াসলি চলছে।
সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ বাড়াতে ডিসিদের সহায়তা
সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সারাদেশে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তার মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রী। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিযে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আমরা এ পর্যন্ত যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করছি সেগুলোর একটা বর্ণনা দিয়েছি ডিসিদের। আর দ্বিতীয়ত তাদের (ডিসি) বলেছি, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ও অভিভাবকদের মধ্যে অনেকটাই আগ্রহের অভাব লক্ষ্য করি। ডিসিরা কোন ধরনের সমস্যার কথা বলেছেন-কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, উনারা মূলত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার কথা বলেছেন। আমরা তো সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। রাতারাতি তো সবকিছু হবে না।
গোয়েন্দা রিপোর্ট নেয়ার বাধ্যবাধকতা প্রস্তাব শিথিল হচ্ছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেছেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বদলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট নেয়ার বাধ্যবাধকতা প্রস্তাব শিথিলের চিন্তা করা হচ্ছে। যার যেটা ম্যান্ডেট সে সেটা করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ কার্য অধিবেশনের
ডিসিরা কি চেয়েছেন জানতে চাইলে সচিব বলেন, তারা চেয়েছেন স্বেচ্ছাধীন তহবিলে বরাদ্দ বৃদ্ধি। অলরেডি সরকার তা করেছে। তারা দুর্গম ভাতার কথা বলেছেন। দুর্গম ভাতার বিষয়ে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনেক আগেই অনুরোধ করেছি, কিছু কিছু জায়গায় তাদের কষ্ট হয়। কয়েকটি জায়গায় নৌযান চেয়েছেন, এ বিষয়ে সরকার অলরেডি ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, ডিসিরা গাড়ি মেরামতের জন্য আর্থিক ক্ষমতা বাড়াতে বলেছেন-আমরা আগেই এ ব্যাপারে অনুরোধ করেছি। সার্কিট হাউজ কোনো জেলায় কম আছে, আমরা বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখব।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, তাদের প্রস্তাবের অনেকগুলো ইতোমধ্যে স্ব-উদ্যোগে অ্যাড্রেস করা হয়েছে। যে ম্যাসেজটি হয়তো ওই পর্যন্ত পৌঁছেনি।
পদোন্নতি-বদলির ক্ষেত্রে অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের বিষয়ে ডিসিদের আপত্তির এসেছে। এ বিষয়ে কী আলোচনা হল- জানতে চাইলে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, না, এটা নিয়ে আলোচনার সুযোগও নেই। যার যেটা ম্যান্ডেট সেটা নিয়ে কাজ করবে। আমি কী কাজ করব, সেটা আরেক জন বলতে পারবে না। সরকার যদি আমাকে কোনো কাজে অ্যাসাইন করে, সেটা সরকারই ভালো বোঝে। যার যেটা ম্যান্ডেট সে সেটা করবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, রেলপথ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি,পানি সম্পদ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়। অধিবেশনে মাঠ প্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম, অর্থ সচিব রউফ তালুকদার এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন/সংযুক্ত দপ্তরসমূহের প্রধানগণ এতে অংশগ্রহণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।