Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুরূদ শরীফের ফজিলত

মাওলানা আব্দুল হান্নান তুরুকখলী | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলে পাক (সাঃ) এর উপর স্বয়ং আল্লাহপাক দুরুদ পাঠ করেন। দুরূদ শরীফ একটি মকবুল ইবাদত। রাসূল (সাঃ) এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- ‘‘ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আ’লান্নাবিয়্য। ইয়া আইয়ু হাল্লাজিনা আমানু সাল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা’’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তারা নবীর উপর দুরূদ পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর উপর দুরূদ পড় এবং যথাযথ সম্মানের সাথে তাঁকে সালাম জানাও (সূরা আহযাবঃ আয়াত- ৫৬)। উক্ত আয়াত দ্বারা দিবালোকের ন্যায় একথাই প্রমাণিত যে- স্বয়ং আল্লাহপাক এবং তাঁর ফেরেস্তারা সর্বদা নবীর উপর দুরূদ পড়েন। আয়াতে- ‘‘ইন্নাল্লাহা ওয়ামালা ইকাতাহু ইউসাল্লুনা’’...... আরবী বাক্যটি জুমলায়ে ইসমিয়া যা কোন কালের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। যখন থেকে নবী আল্লাহর ইলমে নবী, তখন থেকেই দুরূদ শুরু হয়েছে। আর এই দুরূদ শরীফ পাঠ সর্বদা চলতে থাকবে। কোনদিন দুরূদ পাঠ বন্ধ হবেনা। দুরূদ পাঠ বন্ধ হবে এমন সময় পৃথিবীতে কখনও আসবেনা। আল্লাহপাক অবিনশ্বর। আল্লাহ ছাড়া যখন কোনো সৃষ্টি থাকবেনা তখন আল্লাহর স্মরণ বন্ধ হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর জমিনে নবীর স্মরণ বা নবীর উপর দুরূদ পাঠ কখনও বন্ধ হবেনা। কারণ নবীকে সৃষ্টির কেউ স্মরণ না করলেও, তাঁর উপর কেউ দুরূদ পাঠ না করলেও স্বয়ং আল্লাহপাকতো নবীকে কস্মিনকালেও ভুলবেননা। আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় হাবীবকে সর্বদা স্মরণ করবেন এবং তাঁর উপর সর্বদা দুরূদ পাঠ করবেন। এটা পবিত্র কোরআনের উক্ত আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত।
মহান আল্লাহপাক নবী-রাসূলগণকে সৃষ্টি করে তাঁদের মর্যাদা স্বরূপ অনেক হুকুম আহকাম প্রদান করেছেন। যেমন হযরত আদম (আঃ)কে সিজদা করার জন্য ফেরেস্তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু নবী-রাসূলগণের প্রতি সম্মানসূচক কোন নির্দেশে আল্লাহপাক একথা বলেননি ‘‘এ কাজে আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং তোমরাও উহা কর।’’ একমাত্র রাসূলে পাক (সাঃ) এর শানে আল্লাহপাক এই নির্দেশ প্রদান করেছেন- ‘‘আমি এবং আমার ফেরেস্তাগণ নবী (সাঃ) এর উপর দুরূদ পাঠ করি। সুতরাং তোমরাও তাঁর প্রতি দুরূদ ও সালাম জানাও।’’ হযরত আদম (আঃ)কে ফেরেস্তাদের দ্বারা সিজদা করানো হয়েছে। এর দ্বারা বুঝা গেল- হযরত আদম (আঃ) এর সম্মান শুধু ফেরেস্তাদের দ্বারা দেখানো হয়েছে। পক্ষান্তরে রাসূল (সাঃ) এর সম্মান প্রদর্শনে স্বয়ং আল্লাহপাক নিজে শরীক রয়েছেন। যখন আল্লাহপাক ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবীর প্রতি দুরূদ পাঠ করেন সেখানে সেই নবীর প্রতি আমাদের দুরূদ পাঠ করার প্রয়োজনীয়তা কি? এর জবাব হল- নবী (সাঃ) এর উপর আমাদের দুরূদ পাঠ করা তাঁর প্রয়োজনে নয়, যদি তাই হতো তাহলে নবীর প্রতি আল্লাহর দুরূদ প্রেরণের পর ফেরেস্তাদের আর দুরূদ পাঠের প্রয়োজন ছিলনা। প্রকৃত কথা হল- নবী (সাঃ) এর প্রতি আমাদের দুরূদ প্রেরণ তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের জন্য। যেমন- আল্লাহপাক তাঁর জিকির করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ আমাদের জিকিরের তাঁর কোন প্রয়োজন নেই (তাফসীরে কবীর)। নবী (সাঃ) এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ তাঁর প্রয়োজনে নয়; বরং আমাদেরই স্বার্থে। এতে ইহ-পরকালীন বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে।
রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সালাত ও সালাম বসে/ দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় পাঠ করা যায়। কোন কোন আলেম তাদের অজ্ঞতার কারণে বলে থাকেন- ‘‘রাসূলে পাক (সাঃ) এর প্রতি দুরূদ ও সালাম দাঁড়িয়ে পাঠ করা জায়েজ নয়’’ কোরআন-হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণেই এরা বিভ্রান্তিকর ফতোয়া দিয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সাঃ) এর প্রতি দাঁড়িয়ে দুরূদ ও সালাম পাঠ করতে মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- ‘‘সাল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলীমা’’ অর্থাৎ তোমরা তাঁর উপর (নবীর উপর) দুরূদ পড় এবং যথাযথ সম্মানের সাথে তাঁকে সালাম জানাও (সূরা আহযাবঃ আয়াত-৫৬)। উক্ত আয়াতে রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরূদ ও সালাম বসে বা দাঁড়িয়ে পড়ার কথা নিদিষ্ট করে বলা হয় নাই, রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরূদ ও সালাম বসে বা দাঁড়িয়ে পড়তে হবে বলে কোন শর্ত আরোপ করা হয় নাই। অর্থাৎ এখানে হুকুম আম। রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরূদ ও সালাম যেমন বসে পাঠ করতে পারবে তেমনি দাঁড়িয়েও পাঠ করতে পারবে। তবে আমরা সাধারণত: কাউকে সালাম জানাতে বা সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে যাই আর কারো সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে সম্মান প্রদর্শনের অতি উৎকৃষ্ট নিদর্শন। প্রকৃত মুমিনের পরিচয় দিতে হলে রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। রাসূল (সাঃ) হচ্ছেন আমাদের মূল ঈমান। তাঁকে সম্মান জানানো আমাদের উপর অপরিহার্য কর্তব্য। তাই তাঁর উপর দুরূদ ও সালম পাঠ করার সময় দাঁড়িয়ে যাওয়াই উচিত। রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- ‘‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে সাহায্য কর ও সম্মান কর’’ (সূরা ফাতাহঃ আয়াত-৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- ‘‘যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে এবং তাকে সম্মান করে ও তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম’’ (সূরা আরাফঃ আয়াত- ১৫৭)। রাসূল (সাঃ)কে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের উপর অবশ্য কর্তব্য বিধায় তাঁকে যথাযথ সম্মানের সাথে সালাম জানানোর জন্য আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ)কে সালাম জানানোর সময় রওজা শরীফের সামনে নিজেকে হাজির ধ্যান করে দাঁড়িয়ে সালাম জানানো একটি অতি উত্তম আদব। রাসূল (সাঃ)কে সালাম জানানোর এটাই সর্বোত্তম পন্থা।
নবী করিম (সাঃ এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করার গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহপাক তা কবুল করতে পারেন আবার কবুল নাও করতে পারেন। কিন্তু দুরূদ শরীফ এমন একটি মকবুল ইবাদত যা পাঠ করলেই আল্লাহপাক তা কবুল করে নেন। কেননা এই পূণ্যময় কাজটি স্বয়ং আল্লাহপাক নিজে করে থাকেন। দুরূদ শরীফ ব্যতীত কোনো আমল মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়না। চলবে



 

Show all comments
  • নাসির ২৬ জুলাই, ২০১৮, ৪:২২ এএম says : 0
    এই লেখাটির জন্য অষংখ্য মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • ২৬ জুলাই, ২০১৮, ১:৩৫ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply
  • ২৬ জুলাই, ২০১৮, ৬:১৯ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন sondor kiso kotha amader jibonky sondor kora tola.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ হারুন-অর-রশিদ মন্ডল ১৩ জুন, ২০২০, ৮:২৫ পিএম says : 0
    আসসালামু আলাইকুম l সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম উপর দরুদ শরীফ পড়ার পড়ার মতো বা বহু বহু গুন সওয়াবের লক্ষণ l তাই আমরা প্রতিদিন প্রত্যেকটা নামাজে দরুদ শরীফ পাঠ করা হয় l তাছাড়া প্রতিদিন আমরা সব সময় আল্লাহর রাসূলের উপর দরুদ শরীফ পাঠ করে থাকি l দুরুদ শরীফ পাঠের গুরুত্ব বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে । কিন্তু মহান আল্লাহতালা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর উপর দরুদ শরীফ পড়েন না । মহান আল্লাহতালা উনার উপর রহমত বর্ষণ করেন । অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর উপর রহমত বর্ষণ করেন এই অর্থ সঠিক সমাধান । বহু তফসিরে এর এর উল্লেখ রয়েছে । বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য সবিনয় নিবেদন করছি ।ভুল ত্রুটি ক্ষমা প্রার্থনীয়
    Total Reply(0) Reply
  • সাইদুল িইসলাম ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৪১ পিএম says : 0
    মাশা আল্লাহ অনেক ভাল আলোচনা করেছেন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের মধ্যে আদব আকলাখ হারিয়ে ফেলেছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুরূদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ