বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গতকাল (শনিবার) ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি আনয়নকারী মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এরফলে বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ু এখন বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে জোরালো অবস্থায় রয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু হালকা ধরনের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। সেই সাথে মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে শ্রাবণে বিরাজমান খরা ও তাপদাহ কেটে গিয়ে দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা উপকূলে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হয়। এটি গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০২ কিমি পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। মৌসুমী নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল রাতের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যা বরাবর উপকূল অতিক্রম করছিল।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, লক্ষীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে অনতিবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
গরমের তেজ কমেছে
বাংলাদেশের উপকূলের অদূরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়া মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে শ্রাবণের অসময়ে টানা অসহনীয় গরমের তেজ কমেছে। সেই সাথে গতকাল (শনিবার) রাজশাহী ছাড়া দেশের সবক’টি বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় আগের দুই দিনের তুলনায় তাপমাত্রার পারদ ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পায় এবং রংপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.২ ডিগ্রি সে.। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১.৩ ডিগ্রি সে., গত বৃহস্পতিবার ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সে.। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় স›দ্বীপে ১০৪ মিলিমিটার। তবে দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা, কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে।
আজ (রোববার) সন্ধ্যা পর্যন্ত বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে। সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা আরও কমতে পেতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে জোরালো অবস্থায় রয়েছে।