পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনার গরমিল নিয়ে তোলপাড় চলছে সারাদেশে। ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির পরে আবারও আলোচনার শীর্ষে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ চুরির ওই বিষয়টি এখনও সুরাহা না হলেও ‘ভল্টের সোনা’ নিয়ে ফের নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। যা মানুষের মধ্যে নানান সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন- জব্দকৃত স্বর্ণের হিসাবে গরমিলের দায় কার, এ ঘটনায় দায়ী কে? আবার অনেকের মতে, আসলে প্যাঁচটা কোথায়? এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক গোয়েন্দা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ গবেষণায় স্বর্ণের গড়মিলের বিষয়টি উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, ওই যৌথ তদন্ত প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষরও রয়েছে। ফলে ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে যোগাযোগ ঘাটতিতেই এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিষয়টিকে ছোট করে দেখছি না। পর্যালোচনা করা হবে। কারো বিরুদ্ধে গাফেলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র মতে, শুল্ক গোয়েন্দাদের উদ্ধারকৃত স্বর্ণ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা হয়। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে গচ্ছিত এই স্বর্ণের গরমিল দেখা দিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রক্ষিত স্বর্ণের হিসাবে গরমিল হতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা এর আগেও আলোচনায় এসেছিল। গত বছরের ৪ জুন বহুল আলোচিত আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণ আটকের পর ইস্যুটি সামনে আসে। স্বর্ণ আটকের পর তা সঠিকভাবে মেপে বুঝে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দেয়। একই সঙ্গে কোন অঘটন ঘটলে দায় কে নেবে-সে আশঙ্কার কথাও জানানো হয়। এমন আলোচনার মধ্যেই গত বছর একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে স্বর্ণের পরিমাপ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপন জুয়েলার্সসহ স্থল ও বিমান বন্দরে প্রায়ই ধরা পড়ছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা স্বর্ণ। আটক করা এসব স্বর্ণ রাখা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। এছাড়াও আলোচিত অনেক প্রতিষ্ঠানের জব্দকৃত স্বর্ণও এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার তথ্য বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শুধু অস্থায়ী ভল্টেই জমা আছে প্রায় ১৬শ কেজি স্বর্ণ। যার বাজার মূল্য প্রায় আটশ কোটি টাকা। জমা আছে অনেক মূল্যবান পাথর ও ধাতু। এসব স্বর্ণের প্রকৃত পরিমাপ বা একই স্বর্ণ এখন অক্ষত রয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনিয়ম পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটির জায়গায় এখন আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। গত এক বছরের বেশি সময় অনুসন্ধান করে এই অনিয়ম পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক ড. মোঃ সহিদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করবেন।
অপরদিকে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিবেদনকে বাংলাদেশ ব্যাংক অস্বীকার করছে। গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ভল্টে স্বর্ণ যেভাবে রাখা হয়েছিল সেভাবেই আছে। কোনো প্রকার হেরফের হয়নি। তবে শুল্ক গোয়েন্দাদের জমাকৃত সোনার পরিমাপের সঙ্গে তাদের পরিমাপের হিসেবে কিছুটা গরমিল দেখা দিয়েছে। একটি রিং মানের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব স্বর্ণকার যখন এটি পরিমাণ করেন তখন বলেছিলেন, সেই রিংয়ে ৪০ শতাংশ স্বর্ণ আছে। কিন্তু পরে প্রতিবেদন করার সময় ইংরেজি বাংলার হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত শখ জুয়েলার্সের স্বর্ণকার এই ভুলটি করেছিলেন। অবশ্য শখ জুয়েলার্সের মালিক গিয়াস উদ্দিন স্বর্ণকারকে দায়ী করলেও গিয়াস উদ্দিন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, আমি সোনার মান যাচাই করেছি অ্যানালগ পদ্ধতিতে-কস্টিপাথরে। কিন্ত শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ডিজিটাল মেশিনে করেছে। ফলে হয়ত দুই জনের হিসাবে দুই রকম হয়েছে। চাকতিতে ৪০ শতাংশ সোনা ৮০ শতাংশ হলো কিভাবে? এ প্রশ্নের জাবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেটা ২০১৫ সালের কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন শুল্ক গোয়েন্দারা সোনা রাখতে আসে, তখন আমাকে বলা হয়েছিল কী পরিমাণ সোনা আছে তা পরিমাপ করে বের করে দিতে। তখন আমি কষ্টিপাথরে সোনার মান যাচাই করে ৪০ শতাংশই বলেছিলাম, কিন্তু তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ডবুকে যিনি লিখছিলেন তিনি ভুলে ইংরেজিতে ৪০ এর জায়গায় ৮০ লিখেছিলেন। ওই কর্মকর্তা কে ছিলেন? আমি যখন সোনার পারসেনটেজ বলছিলাম খুব সম্ভবত সেটা লিখছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা অরবিন্দ বাবু। তবে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা কানু দাও সেখানে ছিলেন। যতটুকু মনে পড়ে অরবিন্দ বাবু অথবা কানু দা এই দুজনের যে কোনও একজন লিখেছিলেন।
গিয়াস উদ্দিন দাবি করেন, আমি তো বলার সময় ঠিকই বলেছিলাম, কিন্ত উনারা লেখার সময় বাংলার বদলে ইংরেজিতে লিখেছেন। প্যাঁচটা লেগেছে এখানেই, লেখার সময়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তাদের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার (আপনি) এই ভুলটি করেছিলেন। এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি তো লিখি না। আমি শুধু পরীক্ষা করে যেটা বলি, সেটা লিপিবদ্ধ করেন বা লেখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ওই দিন সেখানে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাও ছিলেন। এছাড়া ২২ ক্যারেটের জায়গায় ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়টি দুটি ভিন্ন যন্ত্রে পরিমাপের কারণে হয়েছে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, অনেক সময় দেখা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দারা যে পরিমান সোনা জমা রাখে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিমাপে কোন সময় তা বেশি আবার কোন সময় তা কম হয়েছে! কারণ সোনার সঠিক ওজন পরিমাপে বাংলাদেশ পিছিয়ে! একই পরিমান সোনার ওজন একেক স্বর্ণের দোকানে একেক রকম হয়। যার কারণে শুল্ক গোয়েন্দাদের জমাকৃত সোনার ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। যদিও ভল্টে সোনা জমার নীতিমালা অনুযায়ী, শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছ থেকে সোনা জমা নেওয়ার সময় অবশ্যই পরিমাপ বুঝে নিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ নিয়ে গরমিলের পর নতুন করে ভল্টে রাখা স্বর্ণের নিলাম ডাকায় গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে। ২০০৮ সাল থেকে গত সাড়ে ৮ বছর ধরে জব্দ করা স্বর্ণ নিলামে তুলছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিলাম ডাকার জন্য দুই মাস আগে শুল্ক গোয়েন্দারা চিঠি দিলেও ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, সঠিক সময়ে নিলাম না ডেকে ভল্টে স্বর্ণ ফেলে রাখায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ খাত। জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের ভেতরের উৎস থেকে বৈধ স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাজুস নেতারা দীর্ঘদিন ধরে দেশে বৈধ স্বর্ণ সরবরাহের ব্যবস্থা করারও দাবি জানাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে নিলাম ডাকার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৭ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয় শুল্ক গোয়েন্দা। পাশাপাশি চোরাচালান বন্ধে দ্রুত স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা করারও সুপারিশ করা হয়। এনবিআর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা রাজি হাসান বরাবর পাঠানো হয় ওই চিঠি। চিঠি দেয়া হলেও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, স্বর্ণের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কিছু ম্যানুয়ালি (কষ্টি পাথর) কিছু মেশিনের মাধ্যমে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছুটা গড়মিল হয়েছে। এটা যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আসলে সেভাবে বড় কিছু নয়।
মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে যে সব চিঠি আদান প্রদান হয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কারো অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ ঘটনা তদন্তে কোন কমিটি গঠন করা হবে কিনা জানতে চাইলে সিনিয়র এই সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত প্রয়োজন মনে হয়নি। তবে প্রয়োজন হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।