Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নামেই বিষমুক্ত সবজি

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বিষমুক্ত সবজি। স্বাদই আলাদা। কীটনাশক ব্যবহার করলে মানবদেহের অপুরণীয় ক্ষতি হয়। মারাত্মক ক্ষতি হয় পরিবেশের। সেজন্যই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট অধিদপ্তরের বিজ্ঞানীরা সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টির লক্ষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাঠে মাঠে চাষীদের প্রশিক্ষণ দেন। চাষিরা কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন শুরু করেন ‘ফেরোমন ট্রাপ’সহ আইপিএমএর বিভিন্ন পদ্ধতিতে। ভোক্তারা বাজারে ঢুকেই বিষমুক্ত সবজি খোঁজার কারণে ব্যাপক চাহিদায় আবাদ ও উৎপাদন বেড়ে যায় বহুগুণে।
কিন্তু প্রযুক্তি মাঠে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন কৃষি কর্মকর্তারা। মাঠে মারা যায় প্রকল্প। মাঠে মাঠে বিস্তৃত হওয়ার বদলে একবারেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন প্রকল্প। বর্তমানে সবজি বিষ ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণে।
বর্তমানে বাজারে যে সবজি পাওয়া যাচ্ছে তার প্রায় সবই নামেই বিষমুক্ত সবজি। বাস্তবে নেই। অথচ এ ব্যাপারে কোনরূপ আইন করা হয়নি। যে যার মতো ব্যবহার করছে সবজিতে বিষ। বিশেষ করে বেগুনে ব্যবহৃত বিষ সরাসরি মানবদেহে প্রবেশ করে বলে চিকিৎসকদের অভিমত।
মাঠপর্যায়ের কয়েকজন কৃষি কর্মকতা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমসহ ফলমুলে ফরমালিন ব্যবহার বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলেও সবজিতে বিষ ব্যবহারের সুনির্দ্দিষ্ট কোন নিয়ন্ত্রণ আইন নেই। যার কারণে আমরাও মাঠে চাষিদের কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে কঠোর হতে পারি না। দেশি বিদেশি কীটনাশক কোম্পানীগুলোকে কীটনাশক বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ, কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে নেমে কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার উপর জোরদার তৎপরতা বৃদ্ধি। সুনির্দ্দিষ্ট আইন প্রনয়ন, মাঠে মাঠে তদারকি বৃদ্ধি। আইপিএম পদ্ধতির প্রয়োগে কঠোর হওয়াসহ নানামুখী কর্মসূচী নেওয়া হলে ভোক্তারা বিষমুক্ত সবজির স্বাদ পাবেন। মানবদেহের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না। পরিবেশের জন্য উপকারী পোকা-মাকড় ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জচন্ডিদাস কুন্ডু জানান, শুধু সবজি নয়, সম্পূর্ণ নিরাপদ ফসল উৎপাদনের একটা নীতিমালা করেছে অচিরেই কৃষি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প শুরুর সময়ে (২০০৮ সালে) সবজি উৎপাদনের রেকর্ড সৃষ্টির যশোর অঞ্চলে ‘ফেরোমে ট্রাপ’ পদ্ধতি চালু হয়। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গাইদঘাটসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ব্যাপক আকারে বিষমুক্ত সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয়। সবজির মাঠে গেলে সহজেই চোখে পড়তো প্রায় প্রত্যেক ক্ষেতে ফেরোমেন ট্রাপ ব্যবহারের দৃশ্য। সেই দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। বিষমুক্ত সবজির উৎপাদনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়, এটি পোকা-মাকড় মারার গন্ধ ফাঁদ। যা প্লাস্টিকের কৌটা দিয়ে তৈরী। কৌটার দুইপাশে ছিদ্র করে তাতে এক ধরণের কেমিক্যাল বা নিমপাতা দেয়া হয়। গন্ধ ফাঁদে ‘ট্রাইকোগ্রামা ও ক্রাইসোপা’সহ উপকারী পোকা অবমুক্ত হয়। আর ক্ষতিকর পোকা-মাকড় মারা যায়। খরচ কম, লাভ বেশী। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে হত না। কিন্তু কীটনাশকের কারবারিরা চাষিদের পাল্টা প্রচার চালিয়ে পুনরায় সবজিতে বীজ ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলে। পোকা-মাকড় দমনে শর্টকাট পদ্ধতি কীটনাশক ব্যবহারে ফিরে যান চাষিরা।
অভিজ্ঞতার আলোকে বারীনগরের সবজি চাষী জয়নাল আবেদীন, পুলেরহাটের আবজাল হোসেন ও আমবটতলার আব্দুল কুদ্দুস জানালেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে নামেন কম। যার কারণে স্থায়ীভাবে কোন প্রকল্প সফল হয় না। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল কিন্তু বেগুনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা পদ্ধতি আবিস্কারেও ব্যর্থ হয়েছেন। বেগুনের পোকা-মাকড় দমনে ওই প্রযুক্তি মোটেও কাজে আসেনি। যার কারণেও চাষিরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সবজি

৪ এপ্রিল, ২০২২
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৯ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ