পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের হার কমিয়ে আনায় পুঁজিবাজারে অর্থের পরিমাণ বেড়ে গেছে। যার প্রমাণ পাওয়া গেল চলতি সপ্তাহেই। পর পর দুই দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ১৬ কার্যদিবসে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১শ শতাংশ। পুঁজিবাজারে লেনদেনের এই অবস্থাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়ায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা অর্থের একটা বড় অংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পুঁজিবাজারমুখী হয়ে পড়ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মুদ্রাবাজারের বিকল্প মার্কেট বলা হয় পুঁজিবাজারকে। বিনিয়োগকারীরা যখন দেখে ব্যাংকে আমানত রাখলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে, তখন তারা ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আবার ব্যাংকের আমানতে সুদ কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের অর্থ ব্যাংক থেকে সরিয়ে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসে। অর্থাৎ, ব্যাংকের আমানতের টাকা চলে আসে পুঁজিবাজারে।
তিনি বলেন, জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই অবস্থায় ব্যাংকে যাদের সেভিংস বা সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের আমানতের সুদ আরও কমবে। এর পরিমাণ ২ থেকে ৩ শতাংশ নেমে আসবে। এতে অনেকেই মনে করছেন, ব্যাংকে টাকা না রেখে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে লাভের সম্ভাবনা বেশি। যে কারণে আমানতকারীদের একটা বড় অংশ ব্যাংকে টাকা না রেখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। আর এই কারণেই পুঁজিবাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় লেনদেনও বাড়ছে। মির্জ্জা আজিজ বলেন, সব দেশেই এটা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যাংকে সুদের হার কমে গেলে পুঁজিবাজারে অর্থের সরবরাহ বেড়ে যায়। এটা পুঁজিবাজারের জন্য কিছুটা ইতিবাচক। তবে এর ফলে যেন শেয়ার আবার অতিমূল্যায়িত হয়ে না পড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, বাজারে নতুন শেয়ার নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের মতো আবার ধ্বস নেমে আসতে পারে।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, মানি মার্কেট আর ক্যাপিটাল মার্কেটের মধ্যে একটা সর্ম্পক আছে। তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদের হার কমলে পুঁজিবাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়ে। কারণ হলো, মানুষ বেশি লাভের আশায় ব্যাংকের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। এটা সিম্পল ইকোনোমি। আবার ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে গেলে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দেখা দেয়। আবু আহমেদ আরো বলেন, এছাড়াও লেনদেন বাড়ার পিছনে আরো কিছু কারণ আছে, তারমধ্যে অন্যতম হলো, বর্তমানে আর্থিক প্রাতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বেশকিছু বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও জুন ক্লোজিং শেষ হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে শেয়ার কিনতে শুরু করেছে। ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়ছে।
ডিএসই সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর ডিএসইতে ১ হাজার ৯১ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। ওইদিনের পর থেকে পরের প্রায় ৮ মাস অর্থাৎ গত ৯ জুলাই পর্যন্ত ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়নি। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও অর্থ সংকটের কারণে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকারও নিচে নেমে আসে। টাকার সংকটে গত ২০ মার্চ ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৪১ কোটি টাকা। এছাড়াও বাকি সময়গুলোতে ডিএসইতে গড় লেনদেন ছিল ৪০০ কোটি টাকার মতো। পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজের কমিশন কমে যায়। এতে করে ব্রোকাররা লোকসানের কবলে পড়ে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অনেক প্রতিষ্ঠান খরচ কমিয়ে আনতে লোকবল ছাঁটাই করতে হয়েছে।
গত ২০ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) উদ্যোগে ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। চলতি ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। এই হার নির্ধারণের আগে অধিকাংশ ব্যাংক ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করত। আর ব্যাংক ঋণের সুদের হার ছিল ১১ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু হঠাৎ করে আমানতের সুদের হার কমে আসায় আমানতকারীরা বিপাকে পড়ে। তাদের একটা বড় অংশ আমানত তুলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। নতুন আমানতকারীরা ব্যাংকে আমানত না রেখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করছেন। ব্যাংকের সুদের হার কার্যকর হওয়ার পর গত ২ জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে লেনদেন বাড়ছে ডিএসইতে। এর আগে ব্যাংকের সুদের হার কমার বিষয়টি গত ১৯ জুন চ‚ড়ান্ত হয়। তখন থেকে লেনদেন বাড়তে শুরু করে। গত বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।