Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোস্টার টাঙানোর জায়গার অভাব

তিন সিটির হালচাল

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১০:৪০ পিএম, ১১ জুলাই, ২০১৮

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় গত মঙ্গলবার দুপুরে। প্রথমবারের মতো এই তিন সিটিতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক জানাই ছিল। বাকী ছিল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। প্রতীক বরাদ্দের জন্য ১০ জুলাই নির্ধারণ করা হলেও তৈরি ছিল প্রতীক সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন, কার্ডসহ নির্বাচনী প্রচারণার উপকরণ। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রস্তুত রেখেছিলেন নিজেদের নির্বাচনী পোস্টার। অপেক্ষা ছিল কেবল প্রতীক বরাদ্দের। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার সাথে সাথেই প্রার্থীর পক্ষ থেকে প্রেসে নির্দেশ দেয়া হয় পোস্টার ছাপানোর। কোথাও কোথাও প্রার্থীরা পোস্টার আগেই ছাপিয়ে রেখেছিলেন প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর তা প্রেস থেকে বের করেন। আর কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রাপ্ত প্রতীক বসিয়ে দ্রæততম সময়ে ছাপানোর অনুরোধ জানান প্রেস মালিকদের।
তাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই পোস্টার-ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। শুরু হয় দেয়ালে দেয়ালে, রাস্তার পিলার, ডিভাইডারে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার সাঁটানো। রাস্তায় হাটার সময় ওপর দিকে তাকালেই চোখে পড়ে ঝুলছে নির্বাচনী পোস্টার। বিভিন্ন গ্রæপে বিভক্ত হয়ে চালানো প্রচারণায়ও ভোটারদের হাতে তুলে দেয়া হয় প্রতীক সম্বলিত লিফলেট। শহরের বড় সড়ক থেকে শুরু করে গলি পথ সবজায়গায় দড়ি দিয়ে টানানো হয় পোস্টার। পোস্টার, ব্যানার টানিয়ে প্রচারণার এই প্রতিযোগিতায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়, এক প্রার্থীর পোস্টার টানানোর পর অপর প্রার্থী তার পোস্টারের জন্য জায়গাও পাচ্ছেন না। রাতভর পাহাড়াও বসাচ্ছেন কোন কোন প্রার্থী, কে কার পোস্টারের ওপর পোস্টার লাগাচ্ছেন তা দেখার জন্য। প্রতীক বরাদ্দের পর যেন বদলে গেছে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার চিত্র। নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। ভোট নিয়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। তবে রাজশাহীতে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পোস্টার সাটানোর জায়াগা না পাওয়া এবং বাধা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এবারের নির্বাচনে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নৌকা, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ধানের শীষ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) হাবিবুর রহমান হাবিবকে কাঁঠাল, ইসলামী আন্দোলনের শরিফুল ইসলাম হাতপাখা, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদকে হাতি প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নৌকা, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সিলেট মহানগর বিএনপি’র বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বাসগাড়ি, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের টেবিল ঘড়ি, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম খান হাতপাখা, বাসদের প্রার্থী আবু জাফর মই, স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের হরিণ মার্কা পেয়েছেন।
বরিশালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নৌকা প্রতীক, বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ধানের শীষ, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস লাঙল, বাসদের প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী মঈ, সিপিবির একে আজাদ কাস্তে ও ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহবুব। আর কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকম প্রতীক।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রচারণার বিষয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সুপরিকল্পিতভাবে কোনও জায়গা না রেখে পুরো শহর নৌকার পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের এই ‘দখলের’ কারণে ধানের শীষের পোস্টার সাঁটানোর জায়গা পাচ্ছেন না তারা। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পোস্টার-ব্যানার লাগানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।
প্রতীক ঘোষণার আগে থেকেই পোস্টার প্রস্তুত থাকায় ঘোষণার পরপরই রাজশাহী শহরে পোস্টার-ফেস্টুনে ভরে গেছে ৯৭ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটারের পুরো এলাকা। মঙ্গলবার সকালে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে দুপুরের মধ্যে ৩০টি ওয়ার্ডের আনাচে-কানাচে নৌকা প্রতীকের সাদাকালো ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। ধানের শীষের ফেস্টুন চোখে পড়লেও পোস্টার চোখে পড়েনি খুব একটা। তবে দিনের প্রথমভাগে মাইকে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণা চালানো হয়। সঙ্গে লিফলেট নিয়ে ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা ছিল বিএনপির। শহরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, নিউমার্কেট, লহ্মীপুর, সিনএনবির মোড়, গ্রেটার রোড, দরিখরবোনা, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, শহীদ কামারুজ্জামান চত্ত¡র, শিরোইল বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রতিটি রাস্তার ডিভাইডার, বিদ্যুতের খুটি, প্রাতিষ্ঠানিক দফতরের ওয়ালে টানানো হয়েছে ব্যানার। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে ও নির্বাচনী কার্যালয়ে ফেস্টুন টানানো হয়েছে।
বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা (আওয়ামী লীগের কর্মীরা) নগরীর প্রতিটি স্থান দখল করে দলীয় পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে। অন্য দলের প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানোর মতো কোনও জায়গা রাখেনি।
সিলেটেও পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানের ছেয়ে গেছে নগরীর অলিগলি সব জায়গা। নগরীর আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, ওসমানিনগর, হুমায়ূন রশিদ চত্ত¡র, মদিনা মার্কেট, জালালাবাদ, লিচুবাগান, চৌকিদেখি, বন্দর বাজার, তালতলা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার সাঁটানো দেখা যায়। দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানোর পাশাপাশি সড়কের একপাশ থেকে অপর পাশে দঁড়িতে ঝুঁলছে প্রার্থীদের পোস্টার, কোথাও বা ব্যানার। প্রার্থী ও সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, হাতে তুলে দিচ্ছেন পছন্দের প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত লিফলেট। কম যান না কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় তারা অলিগলিতে ছেয়ে দিচ্ছেন পোস্টার ব্যানারে। পোস্টার সাঁটানোর প্রতিযোগিতায় কোন কোন প্রার্থী জায়গায়ই পাচ্ছেন না তার নিজের পোস্টার সাঁটানোর জন্য।
একই অবস্থা বরিশাল শহরেও। নগরীর নথুল্লাবাদ, বিবিরপুকুর পাড়, জিরো পয়েন্ট, লঞ্চ ঘাট, হিরণ পয়েন্ট, রূপাতলী, সাগরদি, মেডিকেল মোড়, বন্দর এলাকা, চক বাজার, বিএম কলেজ মোড়, বগুড়া রোড, কাউনিয়া, কাশীপুর, ভাটীখানা এলাকার কি বড় সড়ক কি গলি পথ সব জায়াগা ছেয়ে গেছে পোস্টারে। রাজশাহীতে কেবল নৌকার পোস্টার দেখা গেলেও সিলেটের মতো বরিশালেও ধানের শীষ ও নৌকা দুই প্রার্থীরই পোস্টার দেখা যায়। সাথে অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদেরও পোস্টার রয়েছে শহর জুড়ে। আর কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা পোস্টার টানিয়েছেন নিজ নিজ এলাকার গলি পথ, সড়কের পাশে দেয়াল, বিদ্যুতের পিলার, গাছ, বাড়ির দেয়ালসহ যে যেখানে যেভাবে পেরেছেন। নির্বাচনী পোস্টারই সিটি করপোরেশন এলাকায় উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন এসব এলাকার ভোটার ও প্রার্থীরা। তিন সিটিতে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। সাথে সাথে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে এসব এলাকার ছাপাখানাগুলোতে। ####



 

Show all comments
  • Shahin Ahmed ১২ জুলাই, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 0
    দেশ এখন ডিজিটাল। কস্টকরে আর ভোটারদের ভোটদেয়া লাগবেনা।।দুপুরের মধ্যেই ব্যালটপেপার শেষ হবে।আর সন্ধ্যায় জানিয়ে দেয়া হবে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিজয়ী।
    Total Reply(0) Reply
  • নিঝুম ১২ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৯ এএম says : 0
    এবার কী জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবেন নাকি আগের মত হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Liton Howlader ১২ জুলাই, ২০১৮, ৩:০০ এএম says : 0
    এদেশে আর নির্বাচন হয়না হয় নির্যাতন।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibul Ahasan ১২ জুলাই, ২০১৮, ৩:০০ এএম says : 0
    তারা মিছিল, মিটিং, ভাংচুর, পোস্টারিং, বিলবোর্ডিং, হরতাল, অবরোধ, ভ্যানে চড়া, প্লেনে চড়া, সমুদ্র সৈকতে নামা ইত্যাদি গণতন্ত্রের সবকিছুই করতে পারবে সরকারি দলে থেকে। কিন্তু বিরুধি দলের জন্য বিলবোর্ডিং তো দূরের কথা, পোস্টারিং ও করতে পারছে না। ১০জন লোকও একসাথ হতে পারছে না। জনসভা তো দূরের কথা, ঘরোয়া মিটিং ও করতে পারছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • gy ১২ জুলাই, ২০১৮, ৯:১৪ পিএম says : 0
    বাংলাদেশে বিরোধী দলের ভূমিকা কি ? সর্বদা না বলা আর বয়কট করা সুতরাং.....................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ