বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : নগরীর বক্সি বিটে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শুক্রবার হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তাদের প্রতিহত করতে অপর গ্রুপ এগিয়ে এলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন জানান, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কার্যালয়ের এসে হামলা চালায়। এসময় তারা অফিসের ভেতরে টেবিল চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে তাদের ওপর ঢিল ছুঁড়ে হামলাকারীরা। পরে শটগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তিনভাগে ভাগ হয়ে একদল লালদীঘির পাড়, একদল জেনারেল হাসপাতালের সামনে ও একদল জামালখান সড়কে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় এসব এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট ও সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জুমার নামাজের সময় তারা এলাকা ছেড়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে ওই ঘটনার পর থেকে দলীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
হামলাকারীরা চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার এমপি ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সকালে দলীয় কার্যালয়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে তা বাতিল করা হয়। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলা ও কর্ণফুলী থানার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণার কথা ছিল। আকস্মিকভাবে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে হামলা ও ভাংচুর চালায়। হামলার সময় কার্যালয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতা উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান মফিজুর রহমান।
প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের তারিখ ঘোষণা করেন। অথচ আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ তৃণমূলের মতামত নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। মোছলেম উদ্দিন সাহেব সেটা উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী নির্ধারণের জন্য তারিখ ঘোষণা করায় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এসেছিলাম। কার্যালয়ের ভেতর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে পাথর মারা হয়। পুলিশও আমাদের লক্ষ্য করে বেপরোয়া গুলি চালায়। এসময় উত্তেজিত নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে ভাংচুর করে। হামলায় কর্ণফুলী এলাকার জামাল মেম্বারসহ তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
ঘটনাস্থলে থাকা কোতয়ালি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার কথা ছিল। এটা নিয়ে আগে থেকেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির একটা আশঙ্কা ছিল। সেজন্য আমরা পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ করে কয়েক’শ নেতাকরর্মী স্লোগান দিতে দিতে কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে ভাংচুর শুরু করে। পুলিশ বাধা দিলে তাদের উপরও চড়াও হয় নেতাকর্মীরা। এসময় বাধ্য হয়ে পুলিশকে ১২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়তে হয়েছে। নেতাকর্মীদের হামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় কার্যালয়ের ভেতরে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। ভাংচুর করা হয়েছে আসবাবপত্র। বেশ কয়েকটি চেয়ার বাইরে এনে নালায় ফেলে দেয়া হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানার এবং লাগানো পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে আতংকে লালদিঘির পাড়, বক্সিরহাট বিট, কে সি দে আর রোড এলাকায় কয়েক’শ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ লালদিঘি থেকে আন্দরকিল্লা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেয়। পুলিশের প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা লালদিঘির পাড় থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে চলে যায়। সেখানে সড়কের একপাশ বন্ধ করে দিয়ে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। প্রায় আধাঘণ্টা পর তারা নগরীর সার্সন রোডে প্রতিমন্ত্রীর বাসার দিকে চলে যায়।
এর আগে মঙ্গলবার বোয়ালখালীর চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একই কার্যালয়ে ছুরি মারামারিতে আহত হয় দুই জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।