Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শনিবারের সন্দেশ সিরামিক-মেলামাইনে কাঁসা-পিতল শিল্পের দুর্দিন

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না : | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৮, ৩:২২ এএম

এক সময়ে কাঁসা-পিতল শিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে। এ শিল্পেই যেসব পরিবারের চাকা ঘুরে তাদের দুর্দশার শেষ নেই। সিরামিক ও মেলামাইনে কাঁসা-পিতলশিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে। তারপরও ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ধরে রেখেছেন কুষ্টিয়ার কয়েকটি কারখানার মালিক।
বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিনের উপহার, অতিথি আপ্যায়নে কাঁসা-পিতলের তৈরি তৈজসপত্রের কোনো বিকল্প ছিল না। জামাই ও আত্মীয়-স্বজনদের কাঁসার পাত্রে খেতে না দিলে তাদের অপমান করা হয়েছে বলে মনে করা হতো। সে সময়ের চাহিদার আলোকে কুষ্টিয়ায় গড়ে ওঠে প্রায় ৩০টি কাঁসা-পিতল কারখানা।
কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদীর তীরে বড়বাজার ঘোড়া ঘাটের পাশ দিয়ে পথচারী যাওয়ার সময় কাঁসা-পিতল তৈরি কারখানার বড় বড় হাতুড়ির শব্দে কানে আঙুল দিয়ে হাঁটত। কাঁসা-পিতল কারিগরদের হাতুড়ি আর যন্ত্রপাতির টুং টাং শব্দে যেন কানে তালা লেগে যেত। এখন আর সেই দিন নেই। সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে কাঁসার তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার। সিরামিক ও মেলামাইন দখল করেছে তার স্থান।
কুষ্টিয়ার উৎকৃষ্টমানের সামগ্রী থালা, কলসি, ড্যাগ, জগ, বালতি, কড়াই, বদনা, ঘঁটি বাটিসহ নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর সুনাম ছিল দেশজুড়ে। প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, কাঁসা-পিতলের আসবাবপত্র ব্যবহারে মানুষের অনীহাসহ বিভিন্ন কারণে শত বছরের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে কুষ্টিয়ার খুবই পরিচিত টুং টাং শব্দ। এরপরও অনেকেই পেশাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
বাজারে কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্রের কদর কমে যাওয়ায় মালিকরা কারখানা গুটিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে নামমাত্র কয়েকটি কারখানা রয়েছে। এখন আর কাজ করে তেমন আয় হয় না। দিন শেষে যা আয় হয়, তাতে সংসারের চাকা ঘুরতেই চায় না। বর্তমানে কাঁচামালের প্রচুর সঙ্কট। বিদেশ থেকেও কাঁচামাল আসছে না। ফলে কাজ কমে গেছে। যতটুকু কাঁচামাল আমদানি করা হচ্ছে, তা দিয়ে কোনোভাবে কাজ চলছে।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে কাঁসা-পিতল শিল্পের সাথে জড়িত এক কারিগর জানান, এক সময় এই শিল্পের কদর ছিল। বর্তমানে মেলামাইনের তৈজসপত্র বাজারে আসায় কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্রের কদর নেই বললেই চলে। আগে শত শত শ্রমিক কাঁসা শিল্পে কাজ করে ভালোভাবে সংসার চালালেও এখন আর আয় না থাকায় শ্রমিকরা পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, কাঁসা-পিতলের কাঁচামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ-বিজিবি ঝামেলা করে। তা ছাড়া কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র প্রতিবেশি দেশ ভারতে পাচার হচ্ছে। কুষ্টিয়ার তৈরি কাঁসা-পিতল উন্নতমানের হলেও বিদেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে এই ব্যবসা দিন দিন মার খেয়ে যাচ্ছে। সরকার সহযোগিতা করলেই পুরননো এ পেশা ফিরে পেত তার হারানো যৌবন। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে অদূর ভবিষ্যতে কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিল্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ