সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠছে নগরী। প্রকাশ্যে-গোপনে চলছে প্রচার-প্রচারণা। কাউন্সিলর প্রার্থীরা কোন রাখঢাক না রেখেই প্রকাশ্যে ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। অথচ প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কোনরকম প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ। কেউই মানছেন না নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া নিয়ম। তবে দুই বড় দল এক্ষেত্রে আশ্রয় নিয়েছে ভিন্নপথের। তারা সিটি নির্বাচনের তফসিলকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশ চালাচ্ছে শহরতলিতে। এগুলোতে যোগ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। কাউন্সিলরদের প্রতীক এখনো ঠিক না হলেও রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক ইতোমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে তারা একটু বাড়তিই সুবিধা পাচ্ছেন। অন্য প্রার্থীরা যখন প্রতীকের অপেক্ষায় তখন তারা ভোটারদেরকে চিনিয়ে দিতে পারছেন নিজেদের প্রতীক।
নির্বাচন আচরণবিধির ১১ এর ২ ধারা মতে রয়েছে তফসিল ঘোষণা পর থেকে নির্বাচনী এলাকাতে কোনরকম মিছিল-সমাবেশ করা সম্পূর্ণ বেআইনী। আর সেই ভয়েই বড় দুই রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে নিতে শহরতলিতে আয়োজন করছেন সভা-সমাবেশ। নির্বাচন কমিশনও এক্ষেত্রে করছে নমনীয় আচরণ।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভয়ে গত ২ জুলাই সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় নগরীর বাইরে। দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকার ময়ূরকুঞ্জ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় তিন নেতা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার তিনদিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজন করে কর্মীসভা। শহরতলীর খাদিমনগরের একটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যানারে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি উল্লেখ থাকলেও সভায় আলোচনা হয়েছে শুধুই নির্বাচন বিষয়েই। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপত্বি ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেকের পরিচালনায় কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।
এদিকে সভাগুলোর ব্যাপারে দু’টি দলের নেতারা বলছেন তারা নির্বাচনী আচরণবিধিকে সম্মান জানিয়ে নগরীর বাইরে সভা করছেন। তারা চেষ্টা করছেন যাতে নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন না হয়। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এজন্যই আমরা শহরের বাইরে সভা করছি।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে নগরীর বাইরে সভার আয়োজন করা হয়েছে।’
জেলা নির্বাচন অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান- ‘যেহেতু নির্বাচন সিলেট নগরীতে তাই বাইরে কোনো সভা-সমাবেশ হলে এটি তাদের আওতায় পড়ে না। এটি তাদের দেখার বিষয় না।’ নির্বাচনী তফসিল মতে আগামী ৯ জুলাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে। আর প্রতীক বরাদ্দ ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত।
কামরানের কুশল বিনিময় আরিফের নির্বাচন কমিটি
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের প্রাক-ব্যস্ততা ও প্রস্তুতি বাড়ছে। নিজেদের জাহির করছেন সীমিত পরিসরের আয়োজনে। গতকাল শুক্রবার নগরীর দক্ষিণ সুরমার ঐতিহ্যবাহী কদমতলী এলাকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ মুসল্লিদের সাথে সালাম-কুশল বিনিময় করেন। এসময় এ সময় মুসল্লীদের কাছে তিনি দোয়া ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। কামরান বলেন- সিলেটের মানুষের প্রাণের মানুষ হিসেবে আমি সব সময় পাশে আছি। বিগত দিনে নির্বাচিত না হয়েও একদিনের জন্যও নগরবাসীর সঙ্গ ছাড়িনি। যখনই নগরবাসী ডেকেছেন তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে এসেছি। ভবিষ্যতে নগরবাসীর সুখে, দু:খে পাশে থাকবেন বলে জানান তিনি। এ সময় সেখানে এলাকার প্রবীণ মুরব্বী, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের যুব সমাজ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ হক আহবায়ক ্ও সদস্য সচিব হিসেবে স্থান পেয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক। গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর কাজিটুলাস্থ সদর উত্তর বিএনপি’র কার্যালয়ে এক সভায় এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে ও জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, ২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ থাকলে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয় সুনিশ্চিত। এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকার পথের্ ওয়ানা হন আরিফুল হক চৌধুরী। কেন্দ্রের বিশেষ ডাকে তিনি গেছেন বলে জানা গেছে। তার এ যাওয়াকে স্থানীয় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের ঐক্যের পথে ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।