পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ষ ১৪ জুলাই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
ষ অবসান হচ্ছে শত বছরের অপেক্ষার
ষ চলাচল করবে চারটি ট্রেন
অবশেষে পাবনা জেলার বাসিন্দাদের একশ’ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। আগামী ১৪ জুলাই চালু হচ্ছে ঈশ্বরদী-পাবনা নতুন রেলপথ। ওই দিন পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে বিশাল জনসমাবেশ থেকে নতুন এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের ২ ফেব্রæয়ারি একই স্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রæতি রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হকের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে একশ’ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রেলকে গুরুত্ব দিয়ে একাধারে উন্নয়ন করে চলেছে। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে গণমানুষের পরিবহনে রুপান্তর করতে চান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা একে একে সারাদেশকেই রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনবো ইনশাল্লাহ।
রেল সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাঝগ্রাম-ঢালারচর ভায়া পাবনা রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে। প্রকল্পটির প্রথমে বরাদ্দ ছিল ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেল লাইন ও স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ। এই রেলপথে নতুন রেল স্টেশন আছে ১১টি। স্টেশনগুলো বি ও ডি ক্যাটাগরির। রেলপথে ছোট বড় মিলিয়ে সেতু আছে ১১৩টি। লেভেল ক্রসিং আছে অন্তত ৫০টি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৪ দশমিক ২১ একর। ইতোমধ্যে এই রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, উদ্বোধনের দিন থেকে পাবনা এক্সপ্রেস-১,২,৩,৪ নামে চারটি ট্রেন চলাচল করবে। ৬টি বগী নিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল করবে ঈশ্বরদী-পাবনা-রাজশাহী-পাবনা-ঈশ্বরদী রেলপথে। ৪২৩ আসনের ট্রেনগুলো চলবে সপ্তাহের প্রতিদিনই।
জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৪ সালে পদ্মা নদীর উপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু হলে সেই সময়ে দাবি ওঠে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত একটি লিংক রেললাইনের। সেই সময় ব্রিটিশরা এ দাবি পূরণে প্রতিশ্রæতিও দেয়। তবে সেই প্রতিশ্রæতি আর বাস্তবায়িত হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সরকার পাবনাবাসীর দীর্ঘ দিনের এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ প্রকল্প হাতে নেয়। সে সময় পাবনায় নদীকেন্দ্রীক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও স্থলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা অরো শক্তিশালী করতে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে নগরবাড়ী পর্যন্ত রেলপথের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পাবনা শহরের টাউন হল মুক্তমঞ্চ মাঠে এক ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা পাবনার মানুষকে প্রতিশ্রæতি দেন আগামীতে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পাবনারবাসীর প্রাণের দাবি এ রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এবার নকশার কিছুটা পরিবর্তন এনে রেলপথটি ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটির (একনেক) এর বৈঠকে এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৮২ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৬২৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ২ ফেব্রæয়ারি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন। আগামী ১৪ জুলাই একই স্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী নতুন এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন। রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক এ সময় পাবনা রেলস্টেশনে অবস্থান করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী হুইসেল বাজিয়ে পতাকা উড়িয়ে নতুন ট্রেন চালু করবেন।
জানা গেছে, পাবনা জেলার ১১টি থানার মধ্যে ৩টি থানার অল্প সংখ্যক মানুষ রেলপথ সুবিধা পেলেও জেলার মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। এ রেলপথ নির্মাণের দাবি ছিল পাবনাবাসীর দীর্ঘ দিনের। আগামী ১৪ জুলাই সেই অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। পাবনা এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, এই রেলপথ চালুর মাধ্যমে ঈশ্বরদী ও পাবনার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হবে। এলাকারও ব্যাপক উন্নয়ন হবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই রেলপথে পাবনা এক্সপ্রেসে-১,২,৩,৪ নামে চারটি ট্রেন সপ্তাহের প্রতিদিন চলাচল করবে। পাবনা এক্সপ্রেস-১ প্রতিদিন ভোর পৌনে ৬টায় ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে পাবনা পৌঁছাবে সকাল পৌনে ৭টায়। পাবনা এক্সপ্রেস-২ সকাল সোয়া ৭টায় পাবনা থেকে ছেড়ে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে পৌঁছাবে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। সেখান থেকে ৮টা ১২ মিনিটে ছেড়ে ট্রেনটি রাজশাহী পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৯টায়। পাবনা এক্সপ্রেস-৩ প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৫টায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে থামবে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে। সেখান থেকে ৬টা ২৭ মিনিটে ছেড়ে ট্রেনটি পাবনা স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে। ট্রেনগুলোতে এসি চেয়ার ও শোভন চেয়ার শ্রেণি থাকছে। চলার পথে ব্রডগেজের ট্রেনগুলো পাবনা, টেবুনিয়া, দাশুরিয়া, মাঝগ্রাম, ঈশ্বরদী, ঈশ্বরদী বাইপাস, আজিমনগর, আব্দুলপুর, লোকমানপুর, আড়ানী, নন্দনগাছী, সরদহরোড, বেলপুকুর, হরিয়ান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী স্টেশনে থামবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।