Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সুষ্ঠু না হলে বিতর্কিত হবে দেশ-বিদেশে

সিটি নির্বাচন

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোটের হিসেবে পরাজিত হয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেক বেশি। সংঘাত ও সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পুলিশের সহযোগিতায় ভয়-ভীতির মাধ্যমে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাই, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে কৌশলে বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। নির্বাচন কমিশনও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের কথা স্বীকার করেছে। অনিয়মের বিষয়টি দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোরও।
এ বিষয়ে তারা প্রকাশ্যে কথাও বলেছেন। আসন্ন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সরকার ও ইসি একই কৌশল প্রয়োগ করবেন বলে মনে করছে বিএনপি। কিন্তু এরপরও এই তিন সিটিতে প্রার্থী ঘোষণা এবং অংশগ্রহণ করবে দলটি। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে আর খুলনা-গাজীপুর কৌশল প্রয়োগ হলে আবারও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এতে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, বিএনপির এই দাবি প্রতিষ্ঠিত হবে দেশে-বিদেশে। একইসাথে দলীয় নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক কাজ করতে পারছেন। এজন্য তিন সিটির নির্বাচনে সরকার ও ইসির সহযোগিতায় অনিয়ম হবে ধরে নিয়েই আন্দোলন-সংগ্রামের অংশ হিসেবে নির্বাচনকে দেখছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তামাশার নির্বাচন আর ভোট কারচুপির ঘটনার পরও আমরা তিন সিটিতে ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে এই জনবিচ্ছিন্ন সরকাররের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রমাণিত হচ্ছে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর নতুন মডেলে ভোট কারচুপি, জালভোট ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে বিএনপি। তাদের দাবি জোরালো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট অনিয়মের কথা তুলে ধরলে। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোও একই সুরে কথা বলেন। এই নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয় গাজীপুর সিটির নির্বাচন। কিন্তু খুনলা মডেলেই গাজীপুরে নির্বাচন হয়েছে বলে রাজনৈতিক দল, বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো জানিয়েছে। খুলনার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। বৃহস্পতিবার এক সভায় বার্নিকাট বলেন, গাজীপুরে ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া, গ পোলিং এজেন্টদের আটক রাখা অথবা কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। জনগণকে ভোট দিতে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে, অথবা বলা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার জন্য। অনেকে আবার ভোট দিতে গিয়ে দেখেছে তাদের ভোট আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা তাদের সামনেই জাল ভোট দেওয়া হয়েছে।
২৮টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপ (ইডবিøউজি) নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, নির্বাচনে তারা ১৫৯টি নির্বাচনি অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। অনিয়ম হয়েছে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ কেন্দ্রে।
অনিয়মের কথা ইতোমধ্যে স্বীকারও করেছে নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হয়েছে। তবে ওই দুই সিটির ভুল আসন্ন তিন সিটির নির্বাচনে পুনরাবৃত্তি হবে না। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী যে ওই দুটির সঙ্গে পরবর্তী তিনটি সিটির নির্বাচনের তুলনা হবে না। পরবর্তী তিনটি নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তার এই বক্তব্যের পর বিএনপি নেতারা বলেন, তারা যে খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে অনিয়মের অভিযোগ করে আসছিলেন অবশেষে তা স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশন। গাজীপুরে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়ক ও দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, আমরা ভোটের আগে থেকেই বলে আসছি অনিয়মের কথা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এখন তারা নিজেরাই স্বীকার করে নিচ্ছে অনিয়ম হয়েছে। আসন্ন তিন সিটিতেও ইসি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএনপির বিজয়ী ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হবে বলে মনে করেন তিনি।
খুলনা ও গাজীপুরের পর আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটির নির্বাচন। এই তিন সিটিতেই ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। এবারও তারা সেই বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। এজন্য রাজশাহী ও সিলেটে জনপ্রিয় দুই মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আরিফুল হক চৌধুরীকে আবারও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বরিশালে দেয়া হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও জনপ্রিয় নেতা মজিবর রহমান সারোয়ারকে।
এদিকে এই তিন সিটিতেও সরকার খুলনা ও গাজীপুরের মতো কৌশল প্রয়োগ করবে জেনেও তাতে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চায় এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যার কিছু অংশ ইতোমধ্যে সফল হয়েছে। বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে তারা খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনের অভিযোগগুলো তুলে ধরছে। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়মের বিষয় নিয়ে ইসি ও সরকারের ভূমিকা দেশের জনগণ ছাড়াও বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার, বিদেশি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়মিত এসব বিষয়ে সুর্নিদিষ্টভাবে ব্রিফ করছে।
গত ২৯ জুন সন্ধ্যায় ঢাকায় সফররত যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কমনওয়েলথ কার্যালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ব্রিটিশমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার কানবর হোসাইন বর। জানা যায়, বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, খালেদা জিয়ার মামলা, খুলনা-গাজীপুরের নির্বাচন ও আসন্ন তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এছাড়া আন্দোলন- সংগ্রামে সরকারের অব্যাহত অত্যাচার-নির্যাতন, গ্রেফতারের কারণে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হতে পারছিলেন না। কিন্তু নির্বাচনে কেন্দ্র করে দলটির তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গড়ে উঠছে একতা। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে বার্তা দিচ্ছে তা তারা সরাসরি পৌঁছে দিচ্ছেন বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নেতাদের কাছে। নেতাকর্মীরাও সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও দলীয় কর্মকাÐে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোও করে ফেলছে বিএনপি। ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আড়ালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও সেরে ফেলছে বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহীতে যদি খুলনা ও গাজীপুর স্টাইলে নির্বাচন হয়, তাহলে দুটো জিনিস আমরা জনগণের কাছে পরিষ্কার করতে পারবো। তা হলো- এক, দেশের মানুষের কাছে আমরা প্রমাণ করতে পারলাম দলীয় সরকারের অধীনে কোনো দিন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না; দ্বিতীয়টি হলো- নতুন করে চিন্তা করতে হবে যে সাধারণ নির্বাচনে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই আমরা নির্বাচন করব কিনা? আগামী তিন সিটি নির্বাচন সেই পথ দেখিয়ে দেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি নির্বাচন

১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১২ জানুয়ারি, ২০২২
২২ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ