Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম


কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর গতকাল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হক নুরসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। আহতারা হলেনÑ নুরুল হক নুর, আব্দুল্লাহ, আতাউল্লাহ, সাদ্দাম হোসেন, সাহেদ এবং হায়দার। এদের সবাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খান বলেন, ছাত্রলীগ অনেকের ওপর হামলা করেছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের এ হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন এবং অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ (রোববার) থেকে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খান। তিনি গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সংবাদ সম্মেলনে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (আজ) থেকে সকল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং সারাদেশে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারীদের ওপর হঠাৎ হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলেনÑ আরিফুর রহমান লিমন, আদিত্য নন্দী, নওশাদ সুজন, মেহেদী হাসান সানী, আল আমিন রহমান, মেহেদী হাসান রনি, সোহানুর রহমান সোহান, রফিকুল ইসলাম বাধন, ইয়াজ আর রিয়াজ, মামুন বিন সাত্তার, আল মামুন ও জিয়া হলের হাসানুর রহমান হাসু। আন্দোলনকারীদের ঢামেকে ভর্তি করার পর ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মোটরসাইকেলে করে ঢামেকে মহড়া দিয়েছে।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বেলা ১১টার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে। সংবাদ সম্মেলনের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আসার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ^বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারসহ নানা পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘শিবির ধর’, ‘শিবির ধর’ বলে অতর্কিতভাবে আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্রদের ঘিরে ধরে এবং তাদের ওপর চড়াও হয়। ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নুরকে ঘিরে বেদম মারধর করতে থাকে। এসময় তারা নুরকে উদ্দেশ্য করে ‘ওরে মেরে ফেল’, ‘কলিজা কাট’ ইত্যাদি উক্তি করে এবং মারধর করতে থাকে। হামলার একপর্যায়ে নুর মাটিতে পড়ে গেলে তাকে শোয়া অবস্থায় উপর্যুুপরি লাথি মারতে থাকে। গ্রন্থাগারের সামনে নুরের উপর হামলার একপর্যায়ে অধ্যাপক জাবেদ আহমেদ নুরকে রক্ষা করে গ্রন্থাগারের ভেতরে নিয়ে যান। এসময় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক এস এম জাবেদ আহমেদও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন, তারা জাবেদ আহমেদকে নানা অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে এবং তাকে টানাহেঁচড়া করতে থাকে তার কাছ থেকে নুরকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় উদ্বিগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল (শনিবার) এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা এধরণের ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলা এবং অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। শিক্ষকরা বলেন, গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে নিষ্ঠুরতার চিত্র দেখে আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা চাই এই হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। ক্যাম্পাসে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা। একই সাথে হামলার শিকার আহত শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি করেন শিক্ষকরা।
সাদা দলের আহŸায়ক প্রফেসর ড. মোঃ আখতার হোসেন খান ছাড়াও বিবৃতি দিয়েছেন ড. মো: আবদুর রশীদ, ড. মোঃ মোর্শেদ হাসান খান, ড. সদরুল আমিন, ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মো. লুৎফর রহমান, ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ড. মো. আবুল কালাম সরকার, মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস, ড. মো. শহিদুল ইসলাম, ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, মো. মাহফুজুল হক, ড. নুরুল আমিন, ইসরাফিল প্রামাণিক, ড. লায়লা নূর ইসলাম, ড. মামুন আহমেদ, ড. দিলীপ কুমার বড়ূয়া, ড. মো. মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া, আ কা ফিরোজ আহমদ, মোহাম্মদ সফিউল­্যাহ, ড. বোরহান উদ্দীন খান, মো. মাহ্ফুজুল ইসলাম, ড. আবদুল আজিজ, তাহমিনা আখতার, হোসনে আরা বেগম, ড. মোঃ আবুল বাশার, ড. শেখ নজরুল ইসলাম, ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, ড. মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজী, মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, ড. ছিদ্দিকুর রহমান নিজামী, আহমেদ জামাল আনোয়ার, ড. মোবাশ্বের মোনেম, ড. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া, এম এ কাউসার, ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, ড. মোঃ আবদুস সালাম, ড. মোঃ আখতারুজ্জামানসহ শতাধিক শিক্ষক।



 

Show all comments
  • Md Monir Khan ১ জুলাই, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
    আমার লজ্জা হয় আমার প্রথম ভোট টা আওয়ামীলীগে দিয়ে ছিলাম এবং নিজেকে অপোরাধী মনেহয়।
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ আমিনুল ইসলাম টুটুল ১ জুলাই, ২০১৮, ২:১৮ এএম says : 0
    যেখানে বিচার থাকে সেখানে বিচার দাবি করা যায়।কিন্তু যেখানে নেই।সেখানে কিভাবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdul Alim ১ জুলাই, ২০১৮, ২:১৮ এএম says : 0
    ন্যক্কারজনক ঘটনা
    Total Reply(0) Reply
  • আলো ১ জুলাই, ২০১৮, ২:২১ এএম says : 0
    সবাই যদি একসাথে ঐক‍্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা হয় তাহলে সফলতা সম্ভব।।।কিন্তু,আমরা বাঙ্গালীরা তখন বুঝি যখন নিজের কাঁধে মাইর পড়ে।।। তার আগে কেউ নড়ে বসতে চাইনা।।।আরে একজন ছাত্রকে জুতা মারা মানে তো গোটা ছাত্রসমাজকে জুতা মারা।।।শুধু ফেসবুকের পোস্টেই নীতিবাক‍্য ঝাড়লে হয়না।এগিয়ে যেতে হবে হাতে হাত রেখে।।ধিক্কার জানাই ঐসব ছাত্রছাত্রীদের যারা আজকের ঘটনা জানার পরেও কোটা সংস্কারকারীদের বিপক্ষে আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Fakhrul Islam ১ জুলাই, ২০১৮, ২:২৩ এএম says : 0
    দেশটাকে তারা মগের মুলক পাইছে যাকে খুশি মারবে কাটবে
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Rana ১ জুলাই, ২০১৮, ২:২৪ এএম says : 0
    হামলাকারিরা দেশ ও জাতির দুশমন
    Total Reply(0) Reply
  • MD Saddam Khan ১ জুলাই, ২০১৮, ২:২৬ এএম says : 0
    জাতির বিবেক কি জাগ্রত হবে না? বর্বরতা আর কত?
    Total Reply(0) Reply
  • Riyadh Hossain Bhuiyan ১ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৪ এএম says : 0
    এইরকম আরো অনেক কিছু দেখতে হবে এই দেশে! এইরকম পরিস্থিতি চলতেই থাকবে যত দিন এদেশের মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ জাগ্রত না হয় আর প্রতিরোধের স্পৃহা না জাগে। shame the politics
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ১ জুলাই, ২০১৮, ৮:০২ এএম says : 0
    We ask the authorities to the sake of the peaceful environment in the educational institutions please take positive & real action against this terror goup so call satrolig,thanks
    Total Reply(0) Reply
  • ইশতিয়াক ১ জুলাই, ২০১৮, ১১:২০ এএম says : 0
    ছাত্ররাই এর জবাব দিবে ইনশাআল্লাহ ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ruhul Amin ১ জুলাই, ২০১৮, ১২:৪৬ পিএম says : 0
    এই লজ্জা কোথায় রাখবে ছাত্র সমাজ, এই অত্যাচার অার কত সহ্য করবে ছাত্রসমাজ???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা

২৩ ডিসেম্বর, ২০২১
১৭ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ