পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হঠাৎ করেই উর্ধ্বমুখী রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। ঈদের ছুটির পরে বাজারে ক্রেতা সমাগম খুব একটা না থাকলেও গত সপ্তাহ থেকে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন-এ কারণে বাজার এখন ক্রেতায় সরগরম। তবে হঠাৎ করেই কয়েকটি ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ ছুঁটির কারণে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম ছিল তাই বিক্রেতারা বেশি পণ্যে সংগ্রহ করেননি; এছাড়া অনেক পণ্যের সরবারহ ঘাটতির কারণেও পণ্যের দাম বাড়ছে। তবে সপ্তাহ খানিকের মধ্যে দাম স্থিতিশীল হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
চাল : সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। ঈদের আগে স্থিতিশীল থাকলেও হঠাত করেই বেড়েছে চালের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, চাতাল থেকে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে চালের দাম বাড়িয়েছেন তারাও। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার থেকে এই তথ্য জানা গেছে। মোটা চাল মান ভেদে ৪০ থেকে ৪৮ টাকা ও চিকন চাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। চাল বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার পর গড় ছয় থেকে সাত মাসে চালের দাম যেটুকু কমেছিল গত এক মাসে চালের দাম আবার কিছুটা বেড়েছে।
গত বছর বন্যার সময়ের চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বন্যার আগে মোটা চালের কেজি ছিল ৩৪ থেকে মান ভেদে ৩৮ টাকা ও চিকন চালের কেজি ছিল ৪০ থেকে ধরন ভেদে ৪৪ টাকা। বন্যার পর মোটা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকাতে উঠে। আর চিকন চাল ৬৫ থেকে মান ভেদে ৭০ টাকায় উঠে। কিন্ত ক্ষতি সামাল দিতে যে পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে তাতে চালের দাম কমার কথা থাকলেও আগের দামে আর ফিরে আসেনি। গতকাল বাজারে মোটা স্বর্ণা চালের দাম কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৮ থেকে ৪২। পাইজাম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও আগের সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬২ টাকা এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা দরে। তবে বিক্রেতার বলছেন গত সপ্তাহে চিকন চালের দাম কেজি প্রতি আরও দুই টাকা কম ছিল। জুনের শুরুতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় চাল আমদানির উপর আবারও ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলার অনুযায়ী চাল আমদানিতে বিনা খরচে এলসি খোলার সুবিধা রোহিত করা হয়েছে। এসব কারণে চালের দাম আরও বাড়ার আভাস দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
ডিমের দাম পিসে বেড়েছে তিন টাকা : রোজার মধ্যে কয়েক দফা দাম কমলেও ঈদের পর রাজধানীর বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ডিমের দাম। পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে পিস প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে তিন টাকা করে। অর্থাৎ হালি প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৩ টাকা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার মধ্যে ডিমের চাহিদা কম থাকায় দাম বেশ কমে যায়। তবে ঈদের পর ডিমের চাহিদা বেশ বেড়েছে। যে কারণে দাম বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর এক ডজনের কম নিলে প্রতিহালি ডিমের দাম রাখা হচ্ছে ৩২ টাকা। অপরদিকে মুদিদোকানে প্রতিপিস ডিমের দাম রাখা হচ্ছে নয় থেকে ১০ টাকা। রোজার চলাকালে ব্যবসায়ীরা ডজন হিসেবে ডিম বিক্রি করেছেন ৬৫-৭০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে মুদিদোকানে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয়েছে সাত টাকায়। সে হিসাবে ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা এবং খুচরাতে প্রতিপিসে বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। তবে ডিমের এই দাম রোজা শুরুর আগের মাসের থেকেও বেশি। রোজা শুরুর আগের সপ্তাহেও ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করেছেন ৭৫-৮০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে মুদিদোকানে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয় ৮-৯ টাকায়।
ডিমের দামের বিষয়ে শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, রোজার কারণে মানুষ ডিম কম খাচ্ছিলো, যে কারণে রোজার মধ্যে ডিমের দাম কিছুটা কমে যায়। তবে এখন আবার ডিমের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও বেড়েছে। তিনি বলেন, এখন এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। যা রোজার মধ্যে ছিল ৭০ টাকা। তবে ঈদের পর এক লাফে ডিমের দাম বেড়ে এ পর্যায়ে আসেনি। ঈদের পর তিন দফায় ডিমের দাম বেড়েছে। প্রথমে দাম বেড়ে ৭৫ টাকা, এরপর ৮০ টাকা এবং এখন ৯০ টাকা হয়েছে।
কাঁচা মরিচের কেজি ১৪০, টমেটো ১৩০ টাকা : ঈদের পর গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম থাকলেও এখন তা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। চলতি সপ্তাহে বেড়েছে সব ধরনের সবজির সরবরাহ। তবে রোজার তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম কিছুটা চড়া। সবচেয়ে দাম বেড়েছে টমেটো ও কাঁচা মরিচের। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আড়তে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বেড়েছে। আর টমেটোর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। এখন যে টমেটো বিক্রি হচ্ছে তা মজুদ করে রাখা। ফলে বাজারে সীমিত আকারে আসছে টমেটো। যে কারণে দাম বেড়েছে। তবে অধিকাংশ সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, বেগুন, কাকরোল, ঢেঁড়স, করলাসহ প্রায় সব সবজিই বাজারে ভরপুর।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। আর এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। অথচ রোজার সময় কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ৪০-৫০ টাকা কেজি। আর ২৫০ গ্রামের দাম ছিল ১০-১৫ টাকা। অপরদিকে রোজায় ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা।
হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার বিষয়ে হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী ইস্কান্দার হাওলাদার বলেন, আড়তে মরিচ খুব অল্প পরিমাণে এসেছে। যে ব্যবসায়ীরা সকাল সকাল আড়তে গিয়েছিলেন তারা কিছু মরিচ কিনতে পেরেছে। কিন্ত যারা পরে গেছেন তাদের অনেকেই পায়নি। এই ব্যবসায়ী বলেন, রোজায় এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি ১০-১৫ টাকা। এখন তা ৩৫ টাকায় বিক্রি করছি। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ বৃষ্টিতে অনেকের মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আবার যারা আগে লাগিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশের মরিচ শেষের পথে।
টমেটোর দামের বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, এখন টমেটোর মৌসুম না। ব্যবসায়ীরা যে টমেটো মজুদ করে রেখেছিলেন এখন সেগুলোই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যারা টমেটো মজুদ করে রেখেছিলেন তারা বাজারে সীমিত পরিমাণে ছাড়ছেন। ফলে দাম বেশি। সহসা টমেটোর দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে বাজার ও মান ভেদে প্রতিকেজি চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা রোজার সময়ে ছিল ৪০-৫০ টাকা। আর রোজায় ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুন, ঝিঙা ও ধুন্দলের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে । এ দুটি সবজি ঈদের আগের মতোই ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে পটল, ঢেঁড়স, করলা, বরবটি। পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। রোজায় এই সবজির দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। ঢেঁড়সের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। অথচ ঈদের আগে এই সবজিটির দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। আর ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম বেড়ে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। ৪০-৫০ টাকা কেজির বরবটির দাম বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা।
এদিকে রোজার মধ্যে বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া কাকরোল ও পেঁপের দাম বেশ কমে গেছে। রোজায় ৭০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাকরোলের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। আর ৭০-৭৫ টাকা কেজির পেঁপের দাম কমে এখন হয়েছে ২৫-৩০ টাকা।
সবজির দামে মিশ্র প্রবণতা থাকলেও সব ধরণের শাকের দাম বেড়েছে। রোজার মধ্যে ৫-১০ টাকা আটি বিক্রি হওয়া লাল শাক, সবুজ ডাটা শাক, পাট শাক, কলমি শাকের দাম বেড়ে ১০-১৫ টাকা আঁটি হয়েছে। ২০-২৫ টাকা আটি বিক্রি হওয়া পুইশাক ও লাউ শাকের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।
তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের। দেশি পেঁয়াজ বাজার ও মান ভেদে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। ঈদের আগেও পেঁয়াজের দাম এমনই ছিল। রোজার মাসে ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া লাল কক মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সাদা বয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে ১৬০-১৭০ টাকা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।