Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মতিঝিল হলিডে মার্কেটে উচ্ছেদ কার স্বার্থে

গুলিস্তান-পল্টনে ফুটপাথ ও রাস্তা দখল হলেও নজর নেই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে হকারদের বসা নিষিদ্ধ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। পরে মানবিক কারনে বিকালের পর হকারদের ফুটপাতে বসার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মাথায় ও নিয়ম ভাঙতে শুরু করে হকাররা। শেষ পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা আর হকারমুক্ত করা যায়নি। রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন এলাকার রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে চুটিয়ে ব্যবসা করছে হকাররা। সেদিকে পুলিশের নজর না থাকলেও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত হলিডে মার্কেট থেকে গতকাল শুক্রবার হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে হলিডে মার্কেটে গতকাল বেলা ১১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযানের নামে হকারদের তুলে দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগি হকারদের অভিযোগ, এসময় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হকারদের মালামাল লুটপাট করেছে। বিদ্যুতের তার কেটে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বিলাল ইনকিলাবকে বলেন, ছুটির দিনে হলিডে মার্কেটে হকাররা অবশ্যই বসতে পারবে। তাদেরকে বসতে দিবে না কেনো? এটা তো সিটি কর্পোরেশনের ডিকলার করা। প্রশ্ন উঠেছে অবৈধভাবে হকাররা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রাখার পরও সেদিকে নজর না দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত হলিডে মার্কেটে কেনো এই উচ্ছেদ অভিযান? হকারদের সাথে কথা বলে এর নেপথ্যের কিছুৃ কারনও জানা গেছে।
হকাররা জানায়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে হলিডে মার্কেট থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে লাইনম্যান নামধারী সাইফুল মোল্লা ও তার লোকজন। ইতোমধ্যে সাইফুল মোল্লার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তাকে থামানো যায়নি। কারন তার পেছনে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগের এক নেতা। ওই নেতার নির্দেশেই হলিডে মার্কেট থেকে পুরাতন হকারদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হকার বলেন, তারা চাচ্ছে নতুন করে হকার বসিয়ে তাদের কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা করে অগ্রিম নিতে। এই মিশন সফল হলে ওই নেতা কোটি টাকা হাতিয়ে নিবেন তাতে কোনো সন্দেহ নাই। হকারদের অভিযোগ, নতুন করে হকার বসানোর মিশন সফল করতে পুলিশও চাঁদাবাজদের পক্ষে কাজ করছে। গতকাল যখন হকারদের উচ্ছেদ করা হয় তখন মতিঝিলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) শহীদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে জানার জন্য পিআই শহীদের মোবাইলে কয়েকবার কল দেয়ার পরও তিনি রিসিভ করেন নি। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন ও বাংলাদেশ হকার্স লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এম এ কাশেম এ প্রসঙ্গে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিটি কর্পোরেশনের হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই বৈধ মার্কেট থেকে হকারদের উচ্ছেদ করার অধিকার কারো নেই। তিনি বলেন, যারা এই অবৈধ কাজে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সাথে তিনি সাইফুল মোল্লাসহ চিহ্নিত চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, হকারদের কাছে থেকে রাজস্ব নেয়া হোক। তাহলে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, পথচারীদের চলাচল সহজ করতে ও যানজটের দুর্ভোগ লাঘবে রাজধানীতে হলিডে মার্কেট চালু করা হয়। গত বছরের ১৩ জানুয়ারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারসহ অন্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে হলিডে মার্কেট চালু করে। শুরুতে ঢাকার পাঁচটি স্থানে হলিডে মার্কেটের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি মার্কেট হলো মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তা এবং নিউমার্কেটের সামনে। হকারদের অভিযোগ, এই দুটি হলিডে মার্কেটে হকারদেরকে বসতে দেয়া হচ্ছে না। ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নাগরিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের শেষে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে শহরের কোন স্থানগুলোতে হলিডে মার্কেট চালু করা যেতে পারে তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। মূলত হকারদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট গন্ডি ও শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই হলিডে মার্কেট চালু করা হয়। ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ রাজধানীর সুবিধাজনক স্থানগুলো জরিপ করে ১৬টি স্থানের তালিকা তৈরি করে। যা যাচাই-বাছাই শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এসব স্থান থেকে উপযুক্ত বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে কয়েকটি জায়গা হলিডে মার্কেটের স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয়। এর আগে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উদ্যোগে হকার পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে হলিডে মার্কেট চালু করেছিল ঢাকা সিটি করপোরেশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ