Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যৌথ প্রযোজনায় সুবিধা করতে না পেরে সাফটার দিকে নজর

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

নীতিমালার বেড়াজালে পড়ে এবং দেশীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীদের প্রতিবাদের মুখে ঝিমিয়ে পড়েছে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের একটি গোষ্ঠী কলকাতার প্রযোজকদের সাথে মিলে এদেশের সিনেমার বাজার ভারতের হাতে তুলে দেয়ার দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল। দেশের সচেতন নির্মাতা ও শিল্পীরা দেশীয় চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার এ পায়তারা টের পেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা করতে চাপ দেয়। শেষ পর্যন্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এতে সমান সুযোগ ও শর্ত যুক্ত করা হয়। এতেই আটকে পড়ে যৌথ প্রযোজনার নামে নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে সিনেমা নির্মাণ। দেশীয় চলচ্চিত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্র থমকে যায়। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে যে শাকিব খান তথাকথিত যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন, সেই তিনিই যৌথ প্রযোজনার নামে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে যুক্ত হয়ে কলকাতার সিনেমার সাথে যুক্ত হন। যৌথ প্রযোজনার নায়ক হতে গিয়ে নিজেই কলকাতার নায়ক হয়ে যান। সেখানেই এখন ক্যারিয়ার গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তার অভিনীত সিনেমা নিজের দেশে আমদানি হচ্ছে সাফটা চুক্তির আওতায়। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও শাকিব বরাবরই বলছেন, তিনি এই প্রক্রিয়ায় দেশ ও দেশের সিনেমাকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছেন। সেটা ইন্ডাস্ট্রির আর কেউ পারেনি। এই ভালো ব্যাপারটিকে মেনে নিতে পারছে না তার প্রতিপক্ষরা। তাই ষড়যন্ত্র করে তার ছবিগুলো আটকে দেয়া হচ্ছে। তার এ ধরনের খোঁড়াযুক্তি সচেতন চলচ্চিত্রবাসী মেনে নিতে পারেনি। তাদের যুক্তি, নায়ক ফেরদৌস আনেক আগেই কলকাতা এমনকি বোম্বের সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সেগুলোকে কি বাংলাদেশের সিনেমা বলা হয়েছে? সিনেমাগুলোতে ফেরদৌস একজন ভিনদেশি নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। সারাবিশ্বের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এক দেশের শিল্পী আরেক দেশের সিনেমায় অভিনয় করেন। তার মানে এই নয়, সিনেমাগুলো তার নিজ দেশের। এতটুকুই অর্জন হয় যে, শিল্পীটি অমুক দেশের। না জেনে, না বুঝে শাকিবের এমন অর্বাচীন বক্তব্য দেয়া উচিত নয়। কলকাতার সিনেমায় শাকিব সে দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পন্ন গল্পের চরিত্রে অভিনয় করছেন। সেখানে বাংলাদেশের চিরায়ত সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় না। সেখানে শাকিব শুধুই একজন ভিনদেশি শিল্পী হিসেবে পরিচিত। যে কাজটি বহু বছর আগেই ফেরদৌস করে এসেছেন। এদিকে চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে নতুন নীতিমালার প্রভাব পড়েছে যৌথ প্রযোজনার সিনেমায়। বেশ কিছু নির্মাণাধীন সিনেমা আটকে যায় নিয়ম না মানার কারণে। প্রমাণিত হয়, নিয়মের তোয়াক্কা না করেই নির্মিত হচ্ছে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। যার মূল লক্ষ্য কলকাতার সিনেমা ব্যবসায়ীদের জন্য ঢাকায় বাজার তৈরি করা। সেইসঙ্গে ওপারে মার খেতে থাকা নায়ক-নায়িকাদের পুনবার্সনের চেষ্টাও দৃষ্টি গোচর হয়। বেশ কিছু সিনেমা শুরু হতে হতেও হয়নি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য অরিন্দম শীলের বালিঘর। যৌথ প্রযোজনার জন্য এটির চিত্রনাট্য এখনো অনুমতি পায়নি। এরপর এবারের ঈদে চেষ্টা করা হয়েছিল শাকিব খান অভিনীত ভাইজান এলো রে, কলকাতার জিত অভিনীত সুলতান যৌথ প্রযোজনায় মুুক্তি দেয়ার জন্য। তা হয়নি। বর্তমানে সিনেমা দুটি সাফটায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বলা যায়, নতুন নীতিমালায় আটকে যাওয়ায় আগ্রহ কমেছে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন কলকাতার প্রযোজকরাও। তারা এখানে সমস্যা দেখে আর টাকা লগ্নি করার সাহস পাচ্ছেন না। ফলে যৌথ প্রযোজনা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে যৌথ প্রযোজনায় সমালোচিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজসহ অন্য সবাই। এই পদ্ধতিতে সিনেমা নিয়ে আগ্রহ কমেছে তারকাদেরও। জাজের হয়ে নুসরাত ফারিয়া, আরিফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম, রোশানরা নিয়মিত হয়ে উঠেছিলেন যৌথ প্রযোজনাতে। বর্তমানে তারা হতাশায় দিন পার করছেন। যৌথ প্রযোজনায় তাদের নতুন কোনো সিনেমার খবর নেই। যৌথ প্রযোজনার সিনেমার অভাবে নুসরাত ফারিয়া এবং রোশান বেকার হয়ে পড়েছেন। শুভ ও মিমের হাতেও নতুন সিনেমা নেই। এদিকে সিনেমার ব্যবসায়ীরা যৌথ প্রযোজনার সিনেমা না পেয়ে নতুন পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাফটা চুক্তিকে। সেই চুক্তিতে ভারত-বাংলাদেশ ¯ে¬াগান তুলে কলকাতার প্রযোজকেরা সেখানকার নায়ক-নায়িকাদের দিয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন বাংলাদেশের বাজারের উদ্দেশে। বাজার দখলের উপলক্ষ্য হিসেবে শাকিব খানকে সুযোগ দিলেও বাংলাদেশের আর কোনো শিল্পীই গুরুত্ব পাচ্ছে না। সিনেমার হলগুলোও সাফটার মাধ্যমে আসা বাজে মানহীন সিনেমাগুলো চালাচ্ছে। তাদের সামনে ধুঁকছে বাংলাদেশী সিনেমা ও নির্মাণ। ফলে চলচ্চিত্রের বিশিষ্টজনরা বলছেন, সাফটা চুক্তির প্রতি নজরদারি না বাড়ালে মানহীন সিনেমার কারণে আমাদের সিনেমার বাজার আরও নি¤œগামী হবে। দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।



 

Show all comments
  • মোঃ গোলাম রব্বানি ৩ জুলাই, ২০১৮, ১১:৫৯ এএম says : 0
    বর্তমানে আমাদের দেশে বানিজ্যিক ধারার যে সমস্ত সিনেমা তৈরি হয় তা দিয়ে দেশের সব হল মালিকের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর । মানহীন গল্প আর ত্রুটিপূর্ন নির্মাণ দিয়ে এই globalisation এর যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল । তাছাড়া ভারতের সব রকম পণ্য আমারা ব্যবহার করছি, তাহলে সব দোষ সিনেমার বেলায় কেন ? অন্যান্য পন্য সামগ্রীও আমদানি নিষিদ্ধ হোক ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ